বাংলাদেশ একটি বহু ধর্ম ও সংস্কৃতির দেশ। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই ভূখণ্ডে হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!প্রতিবেশী, বন্ধু কিংবা সহকর্মীর সামাজিক সম্পর্কের কারণে অনেক সময় মুসলিমরা হিন্দু ধর্মীয় উৎসব বিশেষ করে শারদীয় দুর্গাপূজায় দাওয়াত পান। এ ক্ষেত্রে একজন সচেতন মুসলমানের মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে “আমি কি পূজায় যেতে পারি? ইসলাম কী বলে?”
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে ইসলামিক শরীয়তের আলোকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা জরুরি।
ইসলাম কী শিক্ষা দেয়?
ইসলাম একত্ববাদ বা তাওহীদের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। মুসলিমদের জন্য মূল নির্দেশনা হলো আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ইলাহ হিসেবে না মানা এবং কোনো ধরনের শিরক বা ভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়া।
কুরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে: “তোমরা মিথ্যা দেব-দেবীর ইবাদত থেকে দূরে থাকো।” (সূরা হজ্জ, আয়াত: ৩০)
হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: “যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের কাজ বা ইবাদতে তাদের মতো হয়, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।” (আবু দাউদ, হাদিস: ৪০৩১)
অতএব, কোনো মুসলমানের জন্য পূজা-পার্বণে যোগ দেওয়া, প্রতিমার সামনে দাঁড়ানো, আরতি দেখা বা ধর্মীয় আচার পালন করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কারণ এতে সরাসরি শিরকের ঝুঁকি রয়েছে।
সামাজিক ও মানবিক সম্পর্কের ভারসাম্য
ইসলাম যেমন আকিদা ও ইমানের ব্যাপারে আপসহীন, তেমনি সামাজিক ও মানবিক সম্পর্কেও গুরুত্বারোপ করেছে। হিন্দু প্রতিবেশী বা বন্ধু যদি কেবল সৌজন্যবশত খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানায় এবং সেখানে কোনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে শরিক হতে হয় না, তাহলে শরীয়ত এ ক্ষেত্রে কিছুটা অনুমোদন দেয়।
পূজা মণ্ডপে গিয়ে আরতি বা প্রতিমা দর্শনে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ।
তবে পূজার সময়ে বন্ধুর বাসায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করা বা শুভেচ্ছা জানানো সামাজিক সৌজন্যের অংশ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে, যদি ধর্মীয় কোনো আচার না থাকে।
আবার এমন পরিবেশে যাওয়া থেকেও বিরত থাকা উত্তম, যেখানে মুসলিমদের পূজায় অংশগ্রহণ করেছে বলে ভুল বোঝাবুঝি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আলেমদের অভিমত
বিভিন্ন ইসলামিক চিন্তাবিদ ও আলেমগণ এ বিষয়ে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে:
১. হারাম কাজ: পূজা, প্রতিমা দর্শন, আরতি, প্রসাদ গ্রহণ বা দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে আয়োজন করা যেকোনো আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেওয়া।
২. জায়েজ কাজ: শুধুমাত্র সামাজিক সম্পর্কের খাতিরে বন্ধুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ বা খাবার গ্রহণ, শর্ত হলো এতে কোনো ধর্মীয় আচার যুক্ত না থাকে।
৩. সতর্কতার বিষয়: মুসলমানদের এমন কোনো কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকতে হবে, যা অন্যদের কাছে ইসলাম বিরোধী বা শরীয়তবিরোধী অংশগ্রহণ হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের শিক্ষা
ইসলামের দৃষ্টিতে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নবী করীম (সা.) নিজেও অমুসলিম প্রতিবেশীদের প্রতি সদাচরণ করেছেন। তবে ঈমান ও আকিদার ক্ষেত্রে তিনি কখনোই আপস করেননি।
সুতরাং, মুসলমানরা হিন্দু বন্ধুদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সদাচারী হবেন, তাদের কষ্টে-সুখে পাশে থাকবেন, কিন্তু ধর্মীয় উৎসবের অংশীদার হবেন না।
একজন মুসলমানের জন্য দুর্গাপূজার দাওয়াত গ্রহণের ক্ষেত্রে মূল নির্দেশনা হলো ধর্মীয় আচার থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকা। যদি কেবল সামাজিক সৌজন্য দেখানো যায় এবং এতে আকিদার ক্ষতি না হয়, তাহলে সীমিত আকারে উপস্থিত থাকা বৈধ। তবে নিরাপদ পথ হলো সরাসরি পূজামণ্ডপ বা প্রতিমা দর্শনে না গিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা।
অতএব, ইসলাম শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পারস্পরিক সম্মানের শিক্ষা দিলেও, ঈমান ও আকিদার প্রশ্নে কোনো ধরনের আপস করার সুযোগ রাখেনি। একজন মুসলিমের মূল দায়িত্ব হলো আল্লাহর একত্ববাদে দৃঢ় থাকা এবং অন্য ধর্মীয় আচার থেকে দূরে থাকা।