হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে এবং অনন্তকাল জাহান্নামের মধ্যে (দুনিয়ার মতো) অনুরূপভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে; যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে এবং সে জাহান্নামে অনন্তকাল বিষ পান করতে থাকবে; যে ব্যক্তি লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের মধ্যে সে ব্যক্তির হাতে লোহা থাকবে, আর অনন্তকাল সে লোহা দ্বারা নিজেকে আঘাত করতে থাকবে।’ (বুখারি, নাসাঈ)
উল্লিখিত হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, দুনিয়াতে মানুষ যে পদ্ধতিতে আত্মহত্যা করবে, পরে অনন্তকাল জাহান্নামে দুনিয়ার সেই একই পদ্ধতিতে সে শাস্তি ভোগ করতে থাকবে।
অর্নদিকে আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন, (إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا) ‘নিশ্চয় আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক বা অংশীদারত্ব স্থাপন করেছে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সঙ্গে অংশীদারত্ব স্থাপন করে, সে মারাত্মক পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত।’ (সুরা: নিসা, আয়াত: ১১৬)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা এ কথা বলেননি যে, আত্মহত্যাকারীকে ক্ষমা করা হবে না; বরং বলেছেন শিরককারী ব্যক্তিকে তিনি ক্ষমা করবেন না। আর কোনো ঈমানদার ব্যক্তি যদি আত্মহত্যা করে, তবে সে অনন্তকাল জাহান্নামের সাজা ভোগ করবে।
যদি কোনো ঈমানদার ব্যক্তি আত্মহত্যা করে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামি হবে — এটা হতে পারে না। হাদিসে অনন্তকাল (خالدا مخلدا) বলে যে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তার মানে দীর্ঘকাল বা লম্বা সময়।
তবে চিরস্থায়ী জাহান্নামি কেবল সে ব্যক্তি যে বা যারা ইসলামে বিশ্বাস স্থাপন করেনি। তারা এমনিতেই জাহান্নামি। আর তারা যে হালতে আত্মহত্যা করবে, সে হালতেই জাহান্নামে তাদের সময় অতিবাহিত হবে।
বিশেষ করে,আত্মহত্যা করা কবিরা গুনাহ। আর কবিরা গুনাহ তওবার মাধ্যমে মাফ হয়। কিন্তু আত্মহত্যাকারীর জন্য যদিও তওবার সুযোগ নেই। তওবা করতে না পারলেও আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে ঈমানদার হওয়ার কারণে দীর্ঘ শাস্তি ভোগের পর নিজ রহমতে আত্মহত্যাকারীকেও মাফ করে দিতে পারেন।
প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানদার ব্যক্তির ব্যাপারে হাদিসে বর্ণনা করেন: فإن الله حرم على النَّارِ مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إلا الله (আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন যে ব্যক্তি ‘লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ’ বলেছেন।)
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: ‘যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণ ঈমান থাকবে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। আবার যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি অণু পরিমাণ নেকি থাকবে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।’ (বুখারি, মুসলিম, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ, ইবনে আবি শায়বা, কানজুল উম্মাল)
প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদিস থেকেও প্রতীয়মান হয় যে, যদি কোনো ঈমানদার আত্মহত্যা করে, তবে তাদের হাদিসের ভাষায় ‘চিরকাল’ বলতে দীর্ঘ সময় জাহান্নামের শাস্তি ভোগের পর আল্লাহর রহমতে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাত দান করা হবে।
যে ব্যক্তির জাহান্নামের ভয় আছে, সে কখনোই আত্মহত্যা করতে পারে না। আর আত্মহত্যা কখনোই মুক্তির পথ হতে পারে না। পৃথিবীতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেমন সমস্যা দিয়েছেন, সমস্যার সমাধানও দিয়েছেন। ইসলাম ও ঈমানের পথে চললে দুনিয়াতে কখনোই আত্মহত্যা করার মত অবস্থা তৈরি হবে না ইনশাআল্লাহ। এ জন্য ইসলামের বিধানগুলো মনোযোগ দিয়ে আদায় করা প্রত্যেকের জন্য অপরিহার্য।