গার্মেন্টস শ্রমিকদের অবিলম্বে রেশনের মাধ্যমে নিত্যপণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা, প্রতারণা চুক্তির মাধ্যমে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার চর্চা বন্ধ করা এবং শ্রমিকদের সার্ভিস বেনিফিট সরকারের তত্বাবধানে জমা করার দাবিতে আজ ০৫ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট।
গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আহসান হাবিব বুলবুল এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি খালেকুজ্জামান লিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৌমিত্র কুমার দাস, কোষাধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম শরিফ, আল আমিন হাওলাদার শ্রাবণ, আহমেদ জীবন, মোহাম্মদ সোহেল, মোফাজ্জল প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা সংক্রমণের লকডাউনের সময়ও পোষাক শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতি ও রপ্তানির প্রয়োজনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদনের চাকা সচল রেখেছিল। কিন্তু সরকার এবং মালিকরা শ্রমিকদের সেই ত্যাগের কোন স্বীকৃতি দেয়নি। শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের সময় শ্রমিকদের জীবন যাত্রার ব্যায় বিবেচনা ছাড়া শুধুমাত্র মালিকের স্বার্থ রক্ষা করে একপাক্ষিক মজুরি ঘোষণা করেছে যা ছিল শ্রমিকের দাবির অর্ধেক। অথচ সেই মজুরি বৃদ্ধির পরপরেই ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে শ্রমিকের নামেমাত্র যে মজুরি বাড়ানো হয়েছিলো তাও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আলু, পেয়াজ, রসুন, ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেযেছে। ফলে গার্মেন্টস শ্রমিকদের হয় ক্ষুধার তাড়না মিটাতে বাড়তি আয়ের জন্য স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হচ্ছে নাহয় অর্ধাহার-অপুষ্টিতে দিন কাটাতে হচ্ছে।
তাই দেশের প্রধান রপ্তানি আয় যাদের রক্ত-ঘামে অর্জিত হয় সেই গার্মেন্টস শ্রমিকদের পুষ্টিকর এবং সুষম খাবারের যোগান নিশ্চিত করতে হয় পুণরায় মজুরি নির্ধারণ করতে হবে অন্যথায় রেশনের মাধ্যমে নিত্যপণ্য সরবারহ এবং মাহর্ঘ্য ভাতা চালু করতে হবে। নেতৃবৃন্দ অত্যান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের যৌবনের কর্মকালীন সময়ে কম মজুরি দিয়ে, নিয়মিত মজুরি পরিশোধ না করে ঠকানো হয়। আবার চাকরির অবসানে সামাজিক নিরাপত্তা বা ভবিষ্যত নিরাপত্তার জন্য শ্রমিকের যে সার্ভিস বেনিফিট পাওয়ার অধিকার আছে শ্রমিকের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে গার্মেন্টস মালিকদের সমিতি আর অসৎ তথাকথিত শ্রমিক নেতারা সংশ্লিষ্ট মালিকের সাথে যোগসাজশে প্রতারণা চুক্তির মাধ্যমে শ্রমিকদের সেই সার্ভিস বেনিফিটের টাকা আত্মসাৎ করে।
বছরের পর বছর গার্মেন্টস মালিকদের সমিতি, আরবিট্রেশন বা নেগোশিয়েশনের নামে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার চর্চা কে নিয়মে পরিণত করেছে। নেতৃবৃন্দ, বলেন চাকরির অবসানে মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়া শ্রমিকের অধিকার যা তার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা রক্ষায় ভুমিকা রাখার কথা অথচ প্রায় প্রতিটি গার্মেন্টস কারখানা শ্রমিকদের সেই পাওনা আত্মসাতের অসৎ উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত ভাবে বিভিন্ন ধরণের পরিস্থিতি তৈরি করে শ্রমিককে অসহায় করে ফেলে আর সাইনবোর্ড সর্বস্ব শ্রমিকনেতাদের স্বাক্ষী রেখে শ্রমিকদের আংশিক পাওনা পরিশোধ করার ব্যবস্থা করে মিল্প বিরোধ মিমাংসার কৃতিত্ব জাহির করে। নেতৃবৃন্দ, শ্রমিকের সার্ভিস বেনিফিটের যথাযথ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে প্রতি বছর শ্রমিকের সার্ভিস বেনিফিটের টাকা মালিকের কাছ থেকে আদায় করে রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে জমা করার দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রদানে শ্রম দপ্তরের অস্বচ্ছতা এবং দুর্ণীতির নিন্দা জানান।