অবকাঠামো,কারিগরি ও জনবল সংকটসহ গত ৮ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা, সেই পরিত্যক্ত ভাঙাচোরা ঘরে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলছে খুলনার কয়রা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়। ব্যাহত হচ্ছে উপজেলার ২ লক্ষাধিক মানুষের সেবা কার্যক্রম।
উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে নির্মিত, দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমি পাকা টিনসেডের তৈরি সমাজসেবা কার্যালয় টি ২০১৬ সালে উপজেলা পরিষদ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। কোন উপায় না থাকায় সেই থেকে অদ্যবধি ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত সেই ঘরেই চলছে উপকূলের ২ লক্ষাধিক মানুষের সেবা কার্যক্রম।
দীর্ঘদিন যাবত উপজেলার অন্যতম জন গুরুত্বপূর্ণ অফিসটির টিনের ছাউনি ছিদ্র, অল্প বৃষ্টিতেই পানি পড়ে। চেয়ার টেবিল আসবাবপত্র অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে, বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে জরুরী কাগজপত্র। অকেজো হয়ে গেছে জরুরী কাগজপত্র রাখার দুটি আলমারি,বাকি পাঁচটি আলমারি নষ্টের পথে।
জানালা দরজা নেই বললেই চলে, দেয়ালের পলেস্তারা খসে ইট বেরিয়ে ইটের আস্তরণ ও ঝরে পড়ছে। বৃষ্টির পানিতে ভিজে ওই ভাঙাচোরা ঘরটিতে বসে চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিনিয়ত সেবা দিলেও সেবা কার্যক্রম দারুন ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে পরিত্যক্ত ঐ ঘরের পাশে দুই কক্ষ বিশিষ্ট ছোট একটি একতলা ভবন নির্মাণ হলেও সেটিও জরাজীর্ণ অবস্থায়। উপকূলীয় এই বিশাল জনগোষ্ঠীর সেবা প্রদানে ১১ জন কর্মকর্তা কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও মাত্র আটজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে উপজেলা সদরসহ সাতটি ইউনিয়নের বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি, দলিত শিক্ষা উপবৃত্তি, হিজড়া ভাতা, দলিত অনগ্রসর ভাতা, ৬টি এতিমখানা,৭০-৮০ টি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, অসুস্থদের আর্থিক সহযোগিতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহযোগিতা, শিশু সুরক্ষা কার্যক্রম, পল্লী মাতৃকেন্দ্র, দগ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন কার্যক্রম, প্রতিবন্ধী জরিপ ও সুবর্ণ নাগরিক কার্ড প্রদান সহ বিভিন্ন সেবা র আওতায় প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তাছাড়া প্রতিদিন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সেবা নিতে আসা নারী পুরুষ প্রতিবন্ধী, ছোট বাচ্চা, মা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সহ, সেবা প্রার্থীদের দাঁড়ানো বা বসার কোন জায়গা নেই। সেবা প্রার্থীদের ঘন্টার পর ঘন্টা ভাঙাচোরা অফিসের বাইরে রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। প্রকৃতির ডাক এলে তাদের কোন উপায় থাকে না। অফিসের আশপাশে অন্য কোন ভবন না থাকায় বৃষ্টি এলেই সেবা প্রার্থীদের দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যায়, এ সময় প্রতিবন্ধী,, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও ছোট বাচ্চা ওয়ালা মা -দের বৃষ্টিতে ভেজা ছাড়া কোন উপায় থাকে না।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, জনবল ও অবকাঠামো সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার মৌখিক ও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এ মুহূর্তে জনবল ও অবকাঠামগত একটু সংকট থাকলেও সঠিক সময়ে সেবা প্রার্থীদের শতভাগ সেবা দিতে পারছি।
দ্রুত শূন্য পদে জনবল নিয়োগ সহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও কারিগরি সহায়তা হলে কয়রা উপজেলা সমাজসেবা অফিস সেবার মান বৃদ্ধি এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।