শুধু নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতই ইবাদত না। একজন মুসলিমের প্রতিটি ভালো কাজই ইবাদত। এর জন্য শুদ্ধ নিয়ত করা জরুরি। কেউ ফজর নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে ঘুমালে তার ঘুমও ইবাদত বলে গণ্য হয়। আর ইবাদতে মাকসুদা তথা ফরজ ইবাদত, বিশেষ করে নামাজে মনোযোগ খুবই জরুরি। কীভাবে ইবাদতে মনোযোগ ধরে রাখা যায় আজ সে বিষয়েই কথা বলবো।
অনেকেই একটি অভিযোগ করতে দেখি; আমি জিকির, নামাজ ও তেলাওয়াত মনোযোগী হয়ে করতে পারছি না। ইবাদতের সময়টুকু মন ১০০ দিকে ঘুরাফেরা করে। বাকি সব কাজ মনোযোগ দিয়ে করতে পারি। এখন আমার করণীয় কী? খুব পেরেশানিতে আছি।
নামাজে মনোযোগ আনতে কয়েকটি কাজ করুন। আল্লাহ তাআলা আপনাকে দেখছেন আর আপনি তার সামনে তাকেই সেজদা করছেন, এ বিশ্বাস দৃঢ় করুন। দেখবেন মনোযোগ আসতে বাধ্য।
চোখের গুনাহসহ সব ধরনের গুনাহমুক্ত থাকুন। ইনশাআল্লাহ ইবাদতে ধ্যান বৃদ্ধি হবে। প্রতিটি ইবাদত সুন্নাহসম্মত পন্থায় অর্থের দিকে খেয়াল করে পড়ুন। তাহলেও ইনশাআল্লাহ মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে।
হজরত আবু হুরাইরাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনসমক্ষে উপবিষ্ট ছিলেন, এমন সময় তার নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞেস করলেন ‘ঈমান কী?’ তিনি বললেন ‘ঈমান হল, আপনি বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশতাগণের প্রতি, (কেয়ামতের দিন) তার সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি এবং তার রসুলগণের প্রতি।
আপনি আরো বিশ্বাস রাখবেন পুনরুত্থানের প্রতি।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইসলাম কী?’ তিনি বললেন ‘ইসলাম হল, আপনি আল্লাহর ইবাদত করবেন এবং তার সাথে অংশীদার স্থাপন করবেন না, সালাত প্রতিষ্ঠা করবেন, ফরজ জাকাত আদায় করবেন এবং রমজানের রোজা পালন করবেন।’ ওই ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইহসান কী?’
তিনি বললেন
আপনি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন যেন আপনি তাকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাকে দেখতে না পান তবে (মনে করবেন) তিনি আপনাকে দেখছেন।
ওই ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেয়ামত কবে?’ তিনি বললেন ‘এ ব্যাপারে যাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, তিনি জিজ্ঞেসকারী অপেক্ষা অধিক জ্ঞাত নন। তবে আমি আপনাকে কেয়ামতের আলামতসমূহ বলে দিচ্ছি বাঁদি যখন তার প্রভুকে প্রসব করবে এবং উটের নগণ্য রাখালেরা যখন বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে। (কেয়ামতের জ্ঞান) সেই পাঁচটি জিনিসের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না।’ অতঃপর আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তেলাওয়াত করলেন ‘কেয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহরই নিকট।’ (সুরা লুক্বমান ৩১/৩৪)
এরপর ওই ব্যক্তি চলে গেলে তিনি বললেন ‘তোমরা তাকে ফিরিয়ে আন।’ তারা কিছুই দেখতে পেল না। তখন তিনি বললেন, ‘তিনি জিবরাইল (আ.)। লোকদেরকে তাদের দিন (ধর্ম) শেখাতে এসেছিলেন।’
এই হাদিসকে হাদিসে জিবরিল বলা হয়। এখানে নামাজসহ অন্যান্য ইবাদত ইহসানের সহিত আদায় করতে বলা হয়েছে।