ঢাকা ০৩:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডেপুটি গভর্নরের ডিনার খরচ ৫৫ হাজার ডলার

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশের সময়: ১২:১৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪
  • ৩০ বার পঠিত

দেশের ডলার সংকট পরিস্থিতি সামাল দিতে ডলার সংগ্রহে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি)। তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর। প্রবাসীদের বুঝিয়ে ডলার আনতে এ সফরের আয়োজন করা হচ্ছে। 

তবে এ আয়োজনে যে পরিমাণ ডলার খরচ হচ্ছে তা কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেবল ডেপুটি গভর্নরের ডিনারেই খরচ হবে ৫৫ হাজার ডলার। যেখানে যোগ দেবেন ২৯ ব্যাংকের এমডি। একজন এমডি খরচ করতে পারবেন ১৬ লাখ টাকার সমপরিমাণ ডলার। আর পুরো সফরে খরচ হবে ৬ লাখ ডলারের বেশি অর্থ।

জানা গেছে, ডলারের সরবরাহ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ২৯ ব্যাংকের এমডিসহ ৪৪ জন। ৩০ জন এমডির এ সফরে যাওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের বাধায় যেতে পারছেন না ব্যাংক এশিয়ার এমডি। এ সফরে ক্রলিং পেগ লঙ্ঘন করে ডলারের দাম বেশি দেখানোরও প্রমাণ মিলেছে। নিয়ম অনুযায়ী ক্রলিং পেগের মধ্য দর থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা অর্থাৎ ১১৮ টাকা হওয়ার কথা। অথচ এমডিদের জন্য খরচ করা ডলারের বিপরীতে মূল্য দেখানো হয়েছে ১২৩ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

তথ্য বলছে, অফশোর ব্যাংকিং হিসাবের আওতায় প্রবাসীরা যাতে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ডলার জমা রাখতে উদ্বুদ্ধ হন, সে জন্য আয়োজিত নানা প্রচারে অংশ নিতে ব্যাংক এমডিরা যুক্তরাষ্ট্রের যাচ্ছেন। এসব এমডিদের শুধুমাত্র একটি অনুষ্ঠানের খরচ ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ডলার। এসব ডলারের যোগান দেওয়ার কথা রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি খাতের চারটি ব্যাংকের। যেখানে ডলারের দাম দেখানো হয়েছে ১২৩ টাকা করে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ডলারের দর ১১৭ টাকা। সে হিসেবে এক অনুষ্ঠানেই বাংলাদেশি টাকায় ৬৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা খরচ করবে এই ব্যাংকগুলো।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক এমডিদের খরচের সর্বোচ্চ ১৬ লাখ টাকা করে খরচ করতে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে হিসেবে ২৯ জন এমডি খরচ করতে পারবেন ৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বা ৪ লাখ ডলার। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর কাজী সাইদুর রহমানসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের এ সফরে সর্বমোট খরচ হওয়ার কথা সাড়ে ৬ লাখ ডলারের বেশি।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ মে শুক্রবার রাতে নিউইয়র্কে একটি হোটেলে প্রবাসীদের জন্য অফশোর ব্যাংকিং ফিক্সড ডিপোজিট-সংক্রান্ত প্রচার অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অনুষ্ঠান শেষে ব্যাংক এমডিদের জন্য ডিনার ও বিনোদনের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত এইচ ই মোহাম্মদ ইমরান। বিশেষ অতিথি থাকবেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত, ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা।

ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন, অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মুরশেদুল কবীর ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন।

তথ্য বলছে, এই অনুষ্ঠানের রাতের খাবারের খরচ ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ৫০০ ডলার। হল ভাড়া বাবৎ ৫ হাজার ডলার। লাইটিং ও সাউন্ড সিস্টেমের জন্য ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৬০০ ডলার। গায়ক এবং নিত্য শিল্পীর জন্য বরাদ্ধ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭০০ ডলার ও বাদ্যযন্ত্রীর খরচ ১ হাজার ৬০০ ডলার। এছাড়া এজেন্সি সার্ভিস ফি ৬ হাজার, পার্কিং ৩ হাজার, পোস্টার-ব্যানার খরচ ১ হাজার ৫০০, নিরাপত্তায় ৫০০ ও অন্যান্য খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ডলার। সবমিলিয়ে এক ডিনার ও বিনোদনেই চারটি ব্যাংক খরচ করবে ৫৫ হাজার ডলার। তথ্য বলছে, খরচ বহন করার ব্যাংকগুলোর তালিকায় রয়েছে, বেসরকারি খাতের ব্র্যাক, ডাচ বাংলা, সিটি ও সরকারি খাতের অগ্রণী ব্যাংক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘২৫ জন এমডি একটি ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করবে। সেখানে অফশোর ব্যাংকিং প্রবাসীদের ডলার জমা রাখার বিষয়ে একটি প্রচারণা প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়েছে। চারটি ব্যাংক ওই প্রোগ্রামের খরচ বহন করবে। আর ট্রেনিংয়ে অংগ্রহণকারী এমডিদের খরচ বহন করবে ব্যাংক।’

তিনি বলেন, ‘দেশের আর্থিক হিসাব অনেকদিন থেকেই নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। যদি প্রবাসীরা অফশোর ব্যাংকিংয়ে ডলার জমা রাখে তাহলে এটা দ্রুত ইতিবাচক ধারায় ফিরবে। ফিলিপিনসহ কয়েকটি দেশ এ উদ্যোগ নিয়ে সফল হয়েছে। আমরাও আশা করি সফল হবো।’

ডেপুটি গভর্নরের ডিনার খরচ ৫৫ হাজার ডলার

প্রকাশের সময়: ১২:১৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪

দেশের ডলার সংকট পরিস্থিতি সামাল দিতে ডলার সংগ্রহে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি)। তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর। প্রবাসীদের বুঝিয়ে ডলার আনতে এ সফরের আয়োজন করা হচ্ছে। 

তবে এ আয়োজনে যে পরিমাণ ডলার খরচ হচ্ছে তা কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেবল ডেপুটি গভর্নরের ডিনারেই খরচ হবে ৫৫ হাজার ডলার। যেখানে যোগ দেবেন ২৯ ব্যাংকের এমডি। একজন এমডি খরচ করতে পারবেন ১৬ লাখ টাকার সমপরিমাণ ডলার। আর পুরো সফরে খরচ হবে ৬ লাখ ডলারের বেশি অর্থ।

জানা গেছে, ডলারের সরবরাহ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ২৯ ব্যাংকের এমডিসহ ৪৪ জন। ৩০ জন এমডির এ সফরে যাওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের বাধায় যেতে পারছেন না ব্যাংক এশিয়ার এমডি। এ সফরে ক্রলিং পেগ লঙ্ঘন করে ডলারের দাম বেশি দেখানোরও প্রমাণ মিলেছে। নিয়ম অনুযায়ী ক্রলিং পেগের মধ্য দর থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা অর্থাৎ ১১৮ টাকা হওয়ার কথা। অথচ এমডিদের জন্য খরচ করা ডলারের বিপরীতে মূল্য দেখানো হয়েছে ১২৩ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

তথ্য বলছে, অফশোর ব্যাংকিং হিসাবের আওতায় প্রবাসীরা যাতে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ডলার জমা রাখতে উদ্বুদ্ধ হন, সে জন্য আয়োজিত নানা প্রচারে অংশ নিতে ব্যাংক এমডিরা যুক্তরাষ্ট্রের যাচ্ছেন। এসব এমডিদের শুধুমাত্র একটি অনুষ্ঠানের খরচ ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ডলার। এসব ডলারের যোগান দেওয়ার কথা রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি খাতের চারটি ব্যাংকের। যেখানে ডলারের দাম দেখানো হয়েছে ১২৩ টাকা করে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ডলারের দর ১১৭ টাকা। সে হিসেবে এক অনুষ্ঠানেই বাংলাদেশি টাকায় ৬৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা খরচ করবে এই ব্যাংকগুলো।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক এমডিদের খরচের সর্বোচ্চ ১৬ লাখ টাকা করে খরচ করতে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে হিসেবে ২৯ জন এমডি খরচ করতে পারবেন ৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বা ৪ লাখ ডলার। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর কাজী সাইদুর রহমানসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের এ সফরে সর্বমোট খরচ হওয়ার কথা সাড়ে ৬ লাখ ডলারের বেশি।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ মে শুক্রবার রাতে নিউইয়র্কে একটি হোটেলে প্রবাসীদের জন্য অফশোর ব্যাংকিং ফিক্সড ডিপোজিট-সংক্রান্ত প্রচার অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অনুষ্ঠান শেষে ব্যাংক এমডিদের জন্য ডিনার ও বিনোদনের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত এইচ ই মোহাম্মদ ইমরান। বিশেষ অতিথি থাকবেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত, ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা।

ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন, অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মুরশেদুল কবীর ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন।

তথ্য বলছে, এই অনুষ্ঠানের রাতের খাবারের খরচ ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ৫০০ ডলার। হল ভাড়া বাবৎ ৫ হাজার ডলার। লাইটিং ও সাউন্ড সিস্টেমের জন্য ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৬০০ ডলার। গায়ক এবং নিত্য শিল্পীর জন্য বরাদ্ধ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭০০ ডলার ও বাদ্যযন্ত্রীর খরচ ১ হাজার ৬০০ ডলার। এছাড়া এজেন্সি সার্ভিস ফি ৬ হাজার, পার্কিং ৩ হাজার, পোস্টার-ব্যানার খরচ ১ হাজার ৫০০, নিরাপত্তায় ৫০০ ও অন্যান্য খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ডলার। সবমিলিয়ে এক ডিনার ও বিনোদনেই চারটি ব্যাংক খরচ করবে ৫৫ হাজার ডলার। তথ্য বলছে, খরচ বহন করার ব্যাংকগুলোর তালিকায় রয়েছে, বেসরকারি খাতের ব্র্যাক, ডাচ বাংলা, সিটি ও সরকারি খাতের অগ্রণী ব্যাংক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘২৫ জন এমডি একটি ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করবে। সেখানে অফশোর ব্যাংকিং প্রবাসীদের ডলার জমা রাখার বিষয়ে একটি প্রচারণা প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়েছে। চারটি ব্যাংক ওই প্রোগ্রামের খরচ বহন করবে। আর ট্রেনিংয়ে অংগ্রহণকারী এমডিদের খরচ বহন করবে ব্যাংক।’

তিনি বলেন, ‘দেশের আর্থিক হিসাব অনেকদিন থেকেই নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। যদি প্রবাসীরা অফশোর ব্যাংকিংয়ে ডলার জমা রাখে তাহলে এটা দ্রুত ইতিবাচক ধারায় ফিরবে। ফিলিপিনসহ কয়েকটি দেশ এ উদ্যোগ নিয়ে সফল হয়েছে। আমরাও আশা করি সফল হবো।’