সারা দেশে ৩৬১টি থানার কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত কর্মবিরতিতে রয়েছেন পুলিশের অধস্তন সদস্যরা। ১১ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন তারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে আইজিপি, র্যাবের মহাপরিচালক ও ডিএমপি কমিশনার উপস্থিত হয়েও অধস্তন পুলিশ সদস্যদের ক্ষোভ কমাতে পারেননি।
অধস্তন সদস্যরা বলছেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভুলের কারণে অসংখ্য সহকর্মী মারা গেছেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে গেলেও বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের না জানিয়ে সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। তাৎক্ষণিক বিষয়টি নিয়ে কন্ট্রোলরুম থেকে বার্তা পাঠালে এত পুলিশ সদস্য মারা যেতেন না। এছাড়া এখন পর্যন্ত পুলিশের কতজন সদস্য নিহত হয়েছেন তার হিসাব জানাতে পারেনি পুলিশ সদর দফতর।
এ অবস্থায় ১১ দফা দাবিতে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। পুলিশ সদস্যদের ১১ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-
(১) চলমান ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ হত্যাসহ সব পুলিশি স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।
(২) নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে আজীবন পেনশন রেশন প্রাপ্তি এবং পরিবারের একজন সদস্যের সরকারি চাকরি নিশ্চিত করা। আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা এবং গুরুতর আহত পুলিশ সদস্যদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা।
(৩) পুলিশের নিয়োগ বিধিমালা বিশেষত সাব ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট নিয়োগ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অধীনে কনস্টেবল নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
(৪) সাব ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট পদে বিদ্যমান পদোন্নতিসংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা। সেক্ষেত্রে পুলিশ পরিদর্শক পদ থেকে সহকারী পুলিশ কমিশনার পদে ৩০ শতাংশ সরাসরি এবং ৭০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ এবং সেটি যথাসময়ে নিশ্চিত করা। সাব ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট থেকে ইন্সপেক্টর পদে পিএল হওয়ার এক বছরের মধ্যে পদোন্নতি দিতে হবে। এ ছাড়া কনস্টেবল, নায়েক, এটিএসআই, এএসআই পদোন্নতির ক্ষেত্রে পরীক্ষায় পাসকৃতদের পরবর্তী বছর পুনঃপরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা বাতিল এবং পদোন্নতি দেয়ার ক্ষেত্রে পাসকৃতদের সিনিয়রিটি অনুসরণ করা।
(৫) আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পুলিশের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আট ঘণ্টা করা এবং অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার জন্য ওভারটাইম দেয়ার ব্যবস্থা করা অথবা বছরের দুটি বেসিকের সমপরিমাণ অর্থ দেয়া।
(৬) পুলিশের ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধিকরণ, টিএ-ডিএ বিল প্রতিমাসের দশ তারিখের মধ্যে দেয়া এবং প্রযোজ্য সব সেক্টরে সোর্স মানি নিশ্চিত করতে হবে।
(৭) পুলিশ সদস্যদের বাৎসরিক ২০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি বৃদ্ধি করে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ষাট দিন করতে হবে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে ছুটি ছাড়া সম্ভব না হলে অভোগকৃত ছুটির বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা দিতে হবে।
(৮) পুলিশ বাহিনীর প্রচলিত পুলিশ আইন এবং পুলিশ রেগুলেশন অফ বেঙ্গল সংস্কার করে যুগোপযোগী এবং কার্যকরী করতে হবে, যার মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা এবং অধস্তন কর্মকর্তার কর্মচারীদের অধিকার নিশ্চিত হয়।
(৯) পুলিশ বাহিনীকে যেন কোনো দলীয় সরকার তার রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে।
(১০) পুলিশের সকল থানা, ফাঁড়ি এবং ট্রাফিক বক্স আধুনিকায়ন করতে হবে এবং অধস্তন অফিসারদের জন্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
(১১) নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের অধস্তন কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং সব ব্যারাকে বিদ্যমান আবাসনসংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করে ব্যারাকগুলোকে আধুনিকায়ন করতে হবে।