উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন আজ মঙ্গলবার ভোট। এ ধাপে দেশের ৬৩ জেলার ১৫৬ উপজেলায় ভোট গ্রহণ শুরু হবে সকাল ৮টায়। বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এ ধাপে ১০৬ পৌরসভার ১৩ হাজার ১৬টি কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা ৩ কোটি ৫২ লাখের বেশি।
এ ছাড়া ৯ জেলার ২৪ উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) পদ্ধতিতে। একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় এরই মধ্যে এ ধাপে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন ২১ জন।
সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে মঙ্গলবার (২১ মে) সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত রবিবার দূরবর্তী কয়েকটি উপজেলায় ৬৯৭টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনি সরঞ্জাম পাঠানো হয়। এ ছাড়া বাকি ১২ হাজার ৩২৩টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ সরঞ্জাম পৌঁছাবে আজ ভোরে।
উপজেলা নির্বাচনের এ ধাপে ১৫৬ উপজেলায় ভোটের মাঠে চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৮২৪ জন। চেয়ারম্যান পদে ৬০৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৯৩ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২৮ জন প্রার্থী রয়েছেন। এই নির্বাচনে প্রথমে ১৬০ উপজেলায় ভোটের তফিসল ঘোষণা করে ইসি। পরে মামলাসহ নানা কারণে স্থগিত হয়েছে ৪ উপজেলার নির্বাচন। সেগুলো হলো- চট্টগ্রামের রাউজান, বান্দরবানের রুমা, মৌলভীবাজার সদর ও কুমিল্লা সদরের আদর্শনগর উপজেলা।
ভোটের হার নিয়ে উদ্বিগ্ন নই, লক্ষ্য পরিবেশ রক্ষা: ইসি মো. আলমগীর
ভোটের দিন সব উপজেলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে ভোটারদের নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে আনার সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আলমগীর। সোমবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমরা চাই ভোটাররা নির্ভয়ে কেন্দ্রে আসবেন এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ভোটের হার বেশি হলে আমরা খুশি হব। কিন্তু না হলেও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারণ ভোটের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
তিনি আরও বলেন, আমরা সবটাতেই সন্তুষ্ট। কেননা, ভোটের হার টার্গেট করা নেই। ফ্রান্সের নির্বাচনে যেমন বলা আছে এত শতাংশ ভোট না পড়লে আবার নির্বাচন হবে। তুরস্কে আছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে এরকম। তাদের সংবিধানে যেটা বলে দিয়েছে যে এত শতাংশ ভোট পড়তে হবে, সেটা না হলে ফের নির্বাচন হবে। আমাদের এ রকম আইন নেই। আগের নির্বাচনে যেহেতু শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছে, তাই দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে পারবে।
ভোটের মাঠের পরিস্থিতি
ভোটকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনি মাঠ। প্রথম ধাপের সংঘাত-সহিংসতার ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছ দ্বিতীয় ধাপেও। তাই ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ভোটার ও প্রার্থীরা। উপজেলা নির্বাচনে নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হওয়ায় ভোটের এক দিন আগে গতকাল বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট মডেল থানার ওসি ও জেলার ডিবির ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন ইসি। ইসির উপসচিব মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর এই নির্দেশনা পাঠানো হয়।
এদিকে উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আশরাফুল আলম এবং বাগেরহাট জেলার ডিবির ওসি স্বপন রায়কে খুলনা পুলিশ রেঞ্জে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনের সময় পর্যন্ত সংযুক্ত করে উক্ত কর্মকর্তাদের ফকিরহাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ এবং ডিবির ওসির দায়িত্ব প্রদানে কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
ইসির তথ্য অনুযায়ী এর আগে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের ভোটের দিন ১০ হাজার ৩৯৯ কেন্দ্রে ৩৪টি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। আর এতে আহত হয়েছিল ২৫ জন। এসব ঘটনায় ৩৭ জনকে আটক করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দ্বিতীয় ধাপের ভোট গ্রহণের আগের দিনও বিভিন্ন উপজেলায় সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন রাখতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৩ লাখ সদস্য মাঠে রয়েছেন। নির্বাচনি অপরাধ দমনে মাঠে রয়েছেন ৬১৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোটকে ঘিরে যে কোনো ধরনের অনিয়ম বন্ধে তারা ভোটের আগেপরে ৫ দিন মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন।
ভোট কেন্দ্র ও ভোটারদের নিরাপত্তায় প্রতিটি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ১৭ জন ও গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে ১৮ থেকে ১৯ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত আছেন। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় আদালত পরিচালনার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে ২ জন সশস্ত্র পুলিশও থাকছেন। নির্বাচনি এলাকাগুলোতে ৩ দিন মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার সুবিধার্থে উচ্চ পর্যায়ের একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন।
তৃতীয় ধাপে ১১১ উপজেলায় (২১টিতে ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ২৯ মে। এসব উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ১ হাজার ৪৩৪ জন। সবশেষ চতুর্থ ধাপের ৫৫ উপজেলায় (২টিতে ইভিএম) ভোট গ্রহণ হবে ৫ জুন। গতকাল ২০ মে এসব উপজেলায় প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই মাঠের প্রচারণা শুরু করেছেন চূড়ান্ত প্রার্থীরা।