পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ২৪/৭ রোদ, ঝড়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে দেশের ৮০ ভাগ অঞ্চলের প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেন।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দ্বৈতশাসন ও ৪৭ বছর ধরে চলমান শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য আরইবি-পবিস একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকুরিবিধি বাস্তবায়ন এবং সকল অনিয়মিত/চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের ০২ দফা দাবি আদায়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল ও গ্রাহক সেবা চালু রেখে সারাদেশে একযোগে গত ০৫ মে, ২০২৪ তারিখ থেকে টানা ০৫ দিন কর্মবিরতির ফলশ্রুতিতে বিদ্যুৎ বিভাগের মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়।
অতঃপর বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩৮ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বাক্ষরসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে দাবি পেশ করা হয়। সন্তোষজনক ফলাফল না আসায় পুনরায় ০১ জুলাই, ২০২৪ তারিখ থেকে টানা ১০ দিন কমবিরতির ফলে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব, তিনজন অতিরিক্ত সচিব, আরইবির উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং আরইবি-পবিস একীভূতকরণ/রিফর্ম এর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক আরইবি-পবিস একীভূতকরণ/রিফর্ম এখন সময়ের দাবি হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং গত ০১-০৮-২০২৪ তারিখে আরইবি, সমিতি এবং মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে ০৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
একই তারিখে আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় সমিতির ০২ জন জিএম এবং ০৪ জন ডিজিএম-কে শাস্তি/হয়রানীমূলক বদলির দপ্তরাদেশ করে আরইবি (ইতিপূর্বে আন্দোলনের কারণে ১০ জন কর্মকর্তা- কর্মচারীকে সংযুক্ত/বরখাস্ত করা হয়)। উক্ত আদেশ স্থগিত করার জন্য সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়, এমনকি বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক মৌখিক নির্দেশনা সত্ত্বেও আরইবি কর্তৃক তা বাতিল/স্থগিত করা হয়নি।
গত ০৫-০৮-২০২৪ খ্রিঃ তারিখে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে সরকার পতন হয়। এই সুযোগে আরইবি কর্তৃক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মুখপাত্রদেরকে আওয়ামী দালাল ট্যাগ দিয়ে নানান অপপ্রচার শুরু করে (অথচ এই আন্দোলন শুরু হয়েছে বিগত আ.লীগ সরকারের সময়ে)। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে গত ০৬-০৮-২৪ তারিখে বদলিকৃত কর্মকর্তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগদানের আদেশ বাস্তবায়নে চাপ প্রয়োগ করে পুনরায় দপ্তরাদেশ জারি করে। ফলশ্রুতিতে গত ০৮-০৮-২০২৪ খ্রিঃ তারিখে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ২২ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী “লং মার্চ’ টু আরইবি” কর্মসূচি করেন এবং সেনাবাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার মধ্যস্থতায় মন্ত্রণালয়য়ের রিফর্ম কমিটির প্রতিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত আরইবি ০৬ টি সিদ্ধান্ত তাৎক্ষনিকভাবে বাস্তবায়নের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে কর্মসূচি স্থগিত করে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। আরইবির মাননীয় চেয়ারম্যান কর্তৃক পরবর্তী কর্মদিবসে কার্যবিবরণী প্রেরণের স্পষ্ট ঘোষণা সত্ত্বেও অদ্যাবধি (২৪-০৮-২০২৪) তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
এছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ পুনরায় আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহনের খবর পেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক গত ২২-০৮-২০২৪ তারিখে পূর্বগঠিত কমিটির সভা আয়োজন করা হয়। উক্ত সভায় পূর্ব নোটিশ ছাড়াই আরইবির সকল প্রতিনিধি অনুপস্থিত থাকেন। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ফলে সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজমান থাকায় আরইবির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে সমিতি থেকে সকল প্রকার তথ্য সরবরাহ তথা আরইবির সাথে সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
পেশাজীবী হিসেবে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের প্রতি শতভাগ জনবলের ঘৃণা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। চলতি বছরের প্রথম থেকে উৎপত্তি হওয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চলমান আন্দোলন কোন বেতন-ভাতা কিংবা আর্থিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নয়: আরইবির দ্বৈতনীতি/দ্বৈতশাসন থেকে মুক্তি, বিদ্যুৎ খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং একটি টেকসই, আধুনিক ও গ্রাহক বান্ধব বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা গড়ার আন্দোলন। দীর্ঘদিন ধরে সুশৃঙ্খলভাবে গ্রাহক সেবা চালু
রেখে নানান কর্মসূচি পালন করলেও সংশ্লিষ্টমহল কার্যকর সমাধানের বিষয়ে পুরোপুরি উদাসীন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এমতাবস্থায়, আরইবি এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যমান বৈষম্য নিরসনে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে পূর্ব ঘোষিত ০২ দফা দাবি বাস্তবায়ন এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ন্যায্য দাবি প্রতিহত করে কর্মপরিবেশ বিনষ্টের অপচেষ্টায় লিপ্ত আরইবির কতিপয় উশৃঙ্খল, দূষ্কৃতিকারী ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার শান্তি নিশ্চিতপূর্বক সঠিক ও সুষ্ঠু সমাধানের জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের সদয় হস্তক্ষেপ এবং ছাত্র-জনতার সহযোগিতা কামনা করছি।
অন্যথায়, সারাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী একযোগে স্টেশন ত্যাগপূর্বক অনির্দিষ্টকালের জন্য গণছুটি প্রয়োজনে গণপদত্যাগ কর্মসূচি ঘোষণা করা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। ফলে দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে এবং সারাদেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। যার জন্য পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগ দায়ী থাকবে বলে বৈষম্য থেকে মুক্তিকামী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী মনে করছেন।