পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক এইচ, এম সুমন বিল্লাহ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সুজন সাহার বিভিন্ন অনিয়ম ও দূনীর্তির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তাদের দুজনের বিরুদ্ধে জনৈক ব্যক্তি স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
যার অনুলিপি প্রেসক্লাবে দেওয়া হয়। অভিযোগের সূত্র ধরে স্থানীয় লোকের বরাত দিয়ে জানা গেছে, সুমন ও সুজন সাহা যেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মোড়ল। তাদের দুজনের কাছে অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জিম্মী হয়ে পড়ায় অধিকাংশ কর্মকর্তা প্রশিক্ষন ও অন্যান্য কারণ দেখিয়ে এখান থেকে সটকে পড়েন। এ ছাড়া যারা আছেন তাদের ন্যায্য পাওনা ঠিক মত পায় না বলেও অভিযোগ উঠেছে । প্রধান সহকারী সুমন ২০১০ সালে অফিস সহকরী পদে কাউখালীতে যোগদান করে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পরে। ২০১৬ সালে তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকের বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, অডিটসহ নানান খাতের অর্থ আত্মসাৎ, মা ক্লিনিক এন্ড ডায়গনষ্টিক সেন্টার কাউখালী, পিরোজপুরের নার্সের সাথে অবৈধ ও অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জনাব মোঃ ছিদ্দীকুর রহমান তাকে বদলী করে নাজিরপুর প্রেরণ করেন। নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকাকালীন অবৈধ আঁতাতের মাধ্যমে প্রধান সহকারী পদে পদন্নোতি লাভ করেন। এরপর নানান খাতের অর্থ আত্মসাৎ, নার্সের সাথে অবৈধ সম্পর্ক প্রভৃতি কারনে সেখান থেকে তাকে বরগুনা জেলার বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়।
এরপর বরিশাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কিছু অসৎ কর্মকর্তা মাধ্যমে সুমন ২০২২ সালে একই সাথে বরগুনা জেলার বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারীর দায়িত্ব পালন করেন। প্রধান সহকারী সুমন ইতিমধ্যে পিরোজপুরের পাল পাড়ায় জমি ক্রয় করে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে ৪ তলা বাড়ি করেছেন।
তাদের অনিয়ম ও দূনীর্তির মধ্যে রয়েছে, ঠিকাদারের সাথে অবৈধ যোগাযোগের মাধ্যমে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা মূল্যের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পুরাতন ভবন নিলামে বিক্রি করে সরকারী কোষাগারে ৫ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা
জমা দেয়। অথচ কাগজে কলমে ওই টাকা দেখালেও তারা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে ২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করনের কাজ ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রভাব প্রভাবশালী নেতা নানকের আত্মীয় নুরই এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলন করে ১৪ সালে কাজ ফেলে চলে যান। এ সময় তাদের ফেলে যাওয়া প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার রড যা নার্স ডরমেটরীর সামনে রাখা ছিলো। তাহা বিক্রয় করে সব টাকা আত্মসাৎ করেন।
প্রধান সহকারী সুমনের বন্ধু পিরোজপুরের মোহাম্মাদী প্রেসের লাইসেন্স দিয়ে ষ্টেশনারী টেন্ডার দিয়ে প্রতিবছর তার খেয়াল খুশি মত ৫টাকার মাল ১০-১২টাকা ভাউচার দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ সরকারী টাকা আত্মসাৎ করেন।
অফিসের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের বাৎসরিক পোষাক ভাতার ৫০%, সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের শ্রান্তি বিনোদিন ভাতার ১০%, ভ্রমন ভাতার ৫০%, জুন মাসে ভূয়া ভ্রমন বিল করে যাহার ৭০% সহ সকল খাতের বরাদ্দ থেকে অর্ধেক পরিমান টাকা আত্মসাৎ করেন।
উল্লেখ্য, গত অর্থ বছরে ধলু মালী ৫০% অর্থ দিতে রাজি না হওয়ায় ধলু মালীকে পোষাক ভাতা প্রদান করা হয় নি।
বনজ বাগান, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার, যন্ত্রপাতি মেরামতসহ এ জাতীয় সকল বরাদ্দের ভূয়া বিল ভাউচার করে সকল টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া প্রতিবছর ঔষধ ক্রয়ের জন্য টেন্ডার দেয়া হলেও অধিকাংশ সময় ঠিকাদারের সাথে আতায়াত করে অর্ধেক পরিমাণ ঔষধ গ্রহণ করে বাকি টাকার ঔষধ কাগজ কলমে গ্রহণ দেখিয়ে ঠিকাদারের কাছ থেকে নগদ অর্থ নিয়ে আত্মসাৎ করেন।
তবে জরুরী পরিদর্শনে দেখানোর জন্য সকল প্রকার ঔষধ কিছু স্টোরে জমা রাখেন।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কিছু কিছু দূনীর্তিবাজ কর্মকর্তার সাথে আতায়াত করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে প্রশিক্ষন দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। কিন্তু বাস্তবে কোন প্রশিক্ষন প্রদান করা হয় না এবং কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রশিক্ষন বিষয়ে কিছুই জানে না বলে অভিযোগ উঠেছে ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও প্রধান সহকারী সুমন আওয়ামীলীগের প্রভাব খাটিয়ে সকলকে জিম্মী করে রাখায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না ।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রোগীকে সেবা না দিয়ে অধিকাংশ সময় ঢাকায় অবস্থান করেন। যা কয়েকবার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
অত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ জন রোগী আন্তঃ বিভাগে ভর্তি থাকলেও নিয়মিত গড়ে ৩০-৪০জন রোগী ভর্তি দেখিয়ে ঠিকাদারের সাথে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারী টাকা আত্নসাৎ করে।
এমতাবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও প্রধান সহকারীকে অন্যত্র বদলি করে উপরে উল্লেখিত অভিযোগ সমূহ তদন্ত করলে
অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে বলে ওই লিখিত অভিযোগে দাবি করা হয়েছে । এদের ভয়ে কেহ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ ও অনিয়মের অভিযোগ এনে স্বাস্থ্য সহকর্মী ও অন্যান্য কর্মচারীরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগসহ মানববন্ধন কর্মবিরতি পালন করলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরেও বহল তবিয়তে আছেন এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত অফিস সহকারী সুমন বিল্লাহর মুঠো ফোনে বারবার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেননি। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুজন সাহার কাছে মুঠোফেোনে জানতে চাইলে হাসাপাতালে কোন অনিয়ম হয়নি বলে তিনি দাবি করেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, মুঠোফোনে কথা বলা যাবেনা আপনি অফিসে আসেন।