খুলনার কয়রা উপজেলায় বাগালি ইউনিয়নের নারায়নপুর দোয়ানি নামের একটি খালের পানি কৃষি কাজে ব্যবহার করতে বিঘা প্রতি তিন হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। প্রায় ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৯১ একর আয়তনের এ খালটি কয়েক বছর ধরে অবৈধভাবে দখলে রেখেছেন জাহাঙ্গির আলম নামে এক যুবলীগ নেতা। তিনি খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের পাশাপাশি কৃষকদের কাছে পানি বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গির আলমের চাচা আব্দুস সামাদ গাজী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বাগালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি এ প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে কয়েক বছর ধরে ওই খাল অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। খালের দুই পাড়ে প্রায় ৫ হাজার কৃষক তাদের জমিতে বোরো, আমনসহ মৌসুমি ফসল চাষাবাদ করেন। শুষ্ক মৌসুমে ফসলের ক্ষেতে পানির চাহিদা মেটাতে খালের পানির উপর ভরষা করেন তাঁরা। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রথমে বিঘা প্রতি দেড় হাজার টাকা করে নেওয়া হতো। পানির চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে বিঘা প্রতি ৩-৪ হাজার নেওয়া শুরু করেন তিনি। কৃষকরা প্রতিবাদ করলে জাহাঙ্গির তার লোকজন দিয়ে পানি বন্ধ করে দেয়। পরে চাষাবাদের স্বার্থে জাহাঙ্গিরের দাবী মতো টাকা দিতে বাধ্য হয় কৃষকরা। এভাবে কৃষকদের জিম্মি করে বছরের পর বছর টাকা আদায় করা হচ্ছে।
বাগালি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এস এম আব্দুর রহিম বলেন, খালটি মাছ চাষের জন্য ইজারা দেওয়া হয়ে থাকে। ইজারার শর্ত অনুযায়ি ফসল চাষাবাদে কৃষকদের পানি নেওয়ায় বাঁধা প্রদান করা যাবে না। অথচ দখলদার জাহাঙ্গির কৃষকদের কাছে ওই খালের পানি বিক্রি করে বছরে কোটি টাকা আদায় করেন। পানির টাকা আদায়ে তিনি আলাদা বাহিনীও গড়ে তুলেছেন খাল পাড়ে। ওই বাহিনীর হাতে নিগৃহীত হচ্ছেন এলাকার কৃষকরা। খালটি দখলমুক্ত করে কৃষকের স্বার্থ পুনরুদ্ধারের দাবী জানিয়েছেন তিনি।
কৃষকরা জানিয়েছেন, প্রথমে খালটির মূল ইজারাদার গাজীনগর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির কাছ থেকে সাবলীজ নেয় জাহাঙ্গির। সে সময় খালের পানি ব্যবহারে টাকা দিতে হতো না। পরে ২০২২ সালে মূল ইজাদারকে হটিয়ে নিজেই খাল দখলে নেন তিনি। সে সময় থেকেই কৃষকদের কাছে খালের পানি বিক্রি শুরু হয়।
বগা গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমন আবাদে তেমন সমস্যা না হলেও শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদে খালের পানি ব্যবহার করতে হয়। তখন খাল দখলদারের চাহিদা মতো টাকা দিতে হয়। না হলে দখলদারের বাহিনী এসে পানি বন্ধ করে দেয়।
খাল পাড়ের বাসিন্দা কলেজ শিক্ষার্থি রাবেয়া খাতুন বলেন, বাড়ির পাশের খাল হলেও সেখানে আমাগের কোন অধিকার নেই। আমাগের বাপ-চাচারা খালের পানিতে নামতেও পারে না। বাড়ির আঙিনায় তরকারি লাগাতি পানির দরকার হলেও দখলদার বাহিনীকে টাকা দিতি হয়। অনুমতি ছাড়া পানি নেওয়া হলে জাহাঙ্গিরের বাহিনী এসে নির্যাতন চালায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আয়ুব আলী বলেন, আর কিছুদিন পরে বোরো আবাদ শুরু করবে কৃষক। তার আগে খালটি দখলমুক্ত না হলে পানির জন্য দুর্ভোগে পড়বে তারা।
খালের মূল ইজারাদার মুজিবার রহমান বলেন, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকা কালিন সেই প্রভাবে জাহাঙ্গির খালটি দখলে নেন। এখন স্থানীয় এক বিএনপি নেতার প্রভাবে দখলে রেখেছেন। অভিযোগ করেও কোন লাভ হচ্ছে না।
জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গির আলম বলেন, বৈধভাবে খাল ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করছি। খালের পানি বিক্রি করার অভিযোগ সঠিক নয়। বোরো আবাদের সময় কৃষকরা কিছু টাকা দেন সত্যি। তবে যেভাবে বলা হচ্ছে তেমন কিছু না।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলি বিশ্বাস বলেন, নারায়নপুর দোয়ানি নামের একটি খাল অবৈধভাবে দখলে নিয়ে কৃষকদের কাছে পানি বিক্রি করা হচ্ছে এমন একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত পূর্বক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।