লবণাক্ততায় উপকূলের মানুষ জমি, বাড়িঘর এমনকি কর্ম হারিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে। লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে। বিশ্বের ধনী দেশগুলোকে এর দায় নিতে হবে

জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতির ন্যায্য হিস্যা চায় কয়রাবাসী

‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আমরা সবচাইতে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছি। প্রতি বছর ঝড়, জলোচ্ছ্বাসে আমরা ঘরবাড়ি, ফসলি জমি হারায়ে পথে বসি। আমাদের নদী তীরবর্তি বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় প্রতি বছর তা দুর্বল হয়ে পড়ছে। ছোট-বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেই দুর্বল বাঁধ ভেঙে বছরের পর বছর নোনা পানিবন্দী থাকতে হচ্ছে মানুষকে। জলবায়ু তহবিলের টাকায় শহর অঞ্চলের উন্নয়ন হলেও উপকুলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনে পর্যাপ্ত বরাদ্দ আসে না। আমরা এর নায্য হিস্যা চাই।’

শনিবার খুননার কয়রায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের আয়োজনে মানববন্ধনে এসব কথা বলেন স্বপ্না রানী মন্ডল নামের এক নারী। কয়রা উপজেলা পরিষদের সামনে বেলা সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে শত শত ক্ষতিগ্রস্ত নারী-পুরুষ উপস্থিত হয়। সেখানে তাদের হাতে বিভিন্ন দাবী লেখা ব্যানার ও প্লাকার্ড দেখা যায়।

উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী মদিনাবাদ গ্রাম থেকে মানববন্ধনে যোগ দিতে আসা হালিমা খাতুনের হাতে ছিল একটি প্লাকার্ড। সেখানে লেখা ছিল ‘জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিত করুন, আমাদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করুন’। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববাসীর কাছে উপকুলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পক্ষ থেকে আমরা দাবী তুলে ধরেছি। জলাবায়ু পরিবর্তনে যারা দায়ি, আমরা তাদের কাছে ক্ষতিপুরণ চাই। সে ক্ষতিপুরণ হতে নায্যতার ভিত্তিতে।

কয়রা উপজেলা বাজেট মনিটরিং ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান বলেন, উন্নত দেশসমূহের মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। বিশেষ করে কয়রা উপজেলাসহ দক্ষিণাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কয়রার মাটি, পানি, স্বাস্থ্য, কৃষিতে বৈরী অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। লবণাক্ততায় উপকূলের মানুষ জমি, বাড়িঘর এমনকি কর্ম হারিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে। লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে। বিশ্বের ধনী দেশগুলোকে এর দায় নিতে হবে। জলবায়ু সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে।

সুন্দরবন সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি মো. হারুন অর রশীদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর উপকূলে দুর্যোগ বাড়ছে। লবণাক্ততার আগ্রাসনে ফসলের উৎপাদন কমছে। উপকূলের মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা সমাধানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সবাইকে অবদান রাখতে হবে।

বেসরকারি সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পূয়র ‘ডরপ’ এর সহযোগিতায় উপজেলার জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আয়োজনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা যুব গ্রুপের সভাপতি আল আমিন ফরহাদ, সাধারণ সম্পাদক আশিকুজ্জামান, বেসরকারি সংস্থা ডরপের কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা মো. আলী হোসাইন প্রমুখ।

লবণাক্ততায় উপকূলের মানুষ জমি, বাড়িঘর এমনকি কর্ম হারিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে। লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে। বিশ্বের ধনী দেশগুলোকে এর দায় নিতে হবে

জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতির ন্যায্য হিস্যা চায় কয়রাবাসী

প্রকাশ: ০৩:২০:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আমরা সবচাইতে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছি। প্রতি বছর ঝড়, জলোচ্ছ্বাসে আমরা ঘরবাড়ি, ফসলি জমি হারায়ে পথে বসি। আমাদের নদী তীরবর্তি বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় প্রতি বছর তা দুর্বল হয়ে পড়ছে। ছোট-বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেই দুর্বল বাঁধ ভেঙে বছরের পর বছর নোনা পানিবন্দী থাকতে হচ্ছে মানুষকে। জলবায়ু তহবিলের টাকায় শহর অঞ্চলের উন্নয়ন হলেও উপকুলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনে পর্যাপ্ত বরাদ্দ আসে না। আমরা এর নায্য হিস্যা চাই।’

শনিবার খুননার কয়রায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের আয়োজনে মানববন্ধনে এসব কথা বলেন স্বপ্না রানী মন্ডল নামের এক নারী। কয়রা উপজেলা পরিষদের সামনে বেলা সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে শত শত ক্ষতিগ্রস্ত নারী-পুরুষ উপস্থিত হয়। সেখানে তাদের হাতে বিভিন্ন দাবী লেখা ব্যানার ও প্লাকার্ড দেখা যায়।

উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী মদিনাবাদ গ্রাম থেকে মানববন্ধনে যোগ দিতে আসা হালিমা খাতুনের হাতে ছিল একটি প্লাকার্ড। সেখানে লেখা ছিল ‘জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিত করুন, আমাদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করুন’। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববাসীর কাছে উপকুলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পক্ষ থেকে আমরা দাবী তুলে ধরেছি। জলাবায়ু পরিবর্তনে যারা দায়ি, আমরা তাদের কাছে ক্ষতিপুরণ চাই। সে ক্ষতিপুরণ হতে নায্যতার ভিত্তিতে।

কয়রা উপজেলা বাজেট মনিটরিং ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান বলেন, উন্নত দেশসমূহের মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। বিশেষ করে কয়রা উপজেলাসহ দক্ষিণাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কয়রার মাটি, পানি, স্বাস্থ্য, কৃষিতে বৈরী অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। লবণাক্ততায় উপকূলের মানুষ জমি, বাড়িঘর এমনকি কর্ম হারিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে। লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে। বিশ্বের ধনী দেশগুলোকে এর দায় নিতে হবে। জলবায়ু সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে।

সুন্দরবন সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি মো. হারুন অর রশীদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর উপকূলে দুর্যোগ বাড়ছে। লবণাক্ততার আগ্রাসনে ফসলের উৎপাদন কমছে। উপকূলের মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা সমাধানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সবাইকে অবদান রাখতে হবে।

বেসরকারি সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পূয়র ‘ডরপ’ এর সহযোগিতায় উপজেলার জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আয়োজনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা যুব গ্রুপের সভাপতি আল আমিন ফরহাদ, সাধারণ সম্পাদক আশিকুজ্জামান, বেসরকারি সংস্থা ডরপের কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা মো. আলী হোসাইন প্রমুখ।