আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রের নীলনকশা

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশ: ০৯:৫৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৮২ বার পঠিত হয়েছে

‘শেখ হাসিনা পালায় না’ তিনি বলেছিলেন, ‘অবশেষে তিনি পলায়ন করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতা-পাতি নেতারা এটা বারবার বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।’ আসলে ষড়যন্ত্র এবং ষড়যন্ত্রই আওয়ামী ক্ষমতার নিয়ামক।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তাদের জন্মকালের ঘটনাও নানা ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার ও প্রতারণার স্বাক্ষর। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হকের অসুস্থ হওয়া ও অন্তর্ধান যে ষড়যন্ত্রেরই অংশ, সেটা তখন রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। পরে যিনি তার স্থলাভিষিক্ত হন, তিনি আর কেউ নন, আমাদের ‘খোকাবাবু’। এরপর তিনি ‘জাতির আব্বাজান’ নামে অভিহিত হয়েছেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের বিপুল বিজয়ের পর প্রাদেশিক পরিষদে স্পিকার সাহেদ আলীকে হত্যা করা হয়েছিল। এই হত্যার জন্য আওয়ামী লীগ পশ্চিমাদের দায়ী করেছিল। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিল। যারা সত্যিকার অর্থে সাহেদ আলী হত্যার সুনির্দিষ্ট দায়-দায়িত্বের কথা জানেন, সেই নির্মম সত্যও খোকাবাবুকেই নির্দেশ করে। অবশ্য তত দিনে তিনি আর খোকা নন। রীতিমতো ‘ডেমাগোগে’ প্রতারণাবগ্মী পুরুষ।

আওয়ামী লীগাররা বলে বেড়ান, ১৯৫৪-৫৬ সময়কালে পাকিস্তানি ষড়যন্ত্রে সরকার ওঠানামা করেছে। অথচ আওয়ামী রাজনীতির কূটকৌশলে তখন যে ‘সকাল-সন্ধ্যা’ সরকার পরিবর্তন হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মরহুম আতাউর রহমান খানের লেখা ‘ওজারতের দুই বছর’ পাঠ করলেই আসল সত্যটি উদ্ভাসিত হবে। ১৯৬২ সালে সামরিক আইনের পরিবর্তে আইয়ুব খানের ‘আদি-আসল বুনিয়াদি গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হলো, তখন পাকিস্তানের শীর্ষ ৯ নেতা বিবৃতি দিয়ে বললেন, আগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, পরে পার্টি পলিটিকস। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা সোহরাওয়ার্দীর এই সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ‘স্বঘোষিত’ নেতা হয়ে গেলেন। এমনসব বুদ্ধিশুদ্ধি আঁটলেন, যাতে আতাউর রহমান খান, সালাম খান ও মাওলানা তর্কবাগীশের মতো নেতা ছেড়ে দিয়ে কেঁদে বাঁচলেন। তিনি যখন আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলায় আসামি তখন আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন একজন সাহসী আমেনা বেগম। ষড়যন্ত্রের তকমা দিয়ে তাকেও বহিষ্কারে দ্বিধা জাগেনি আওয়ামী নেতৃত্বে।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে তখন তিনি বলেছিলেন, ‘সব জুট হ্যায়, মেইনে সাচ্চা পাকিস্তানি’। রূপ-রস-গন্ধ দিয়ে এখন তারা বলছেন, সেই ষড়যন্ত্রই সত্যি। কালো ২৫-এর রাতে তাজউদ্দীন সাহেব স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য সবকিছু নিয়ে প্রস্তুত ৩২ নম্বরে। তাজউদ্দীনকন্যা সিমিন হোসেন রিমির ‘নেতা ও পিতা’ গ্রন্থের ভাষ্য মোতাবেক তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে অস্বীকার করলেন। অথচ পরে শহীদ জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণাকে অস্বীকার করার জন্য হাজারো মিথ্যা কথা বলা হলো। আসলে তারা জনগণের মুক্তি নয় বরং পাকিস্তানের ক্ষমতাপ্রাপ্তিকে মোক্ষম মনে করেছে।

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর আওয়ামী ষড়যন্ত্র তাদের ক্ষমতার নীতি হয়ে দাঁড়ায়। তাজউদ্দীন আহমদের মতো ত্যাগী নেতাকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক জেনারেল উসমানীকে খাটো করে দেখানো হয়। মওলানা ভাসানীর নাম নেওয়াকে যেন অন্যায় মনে করা হয়। যেভাবে হাজার বছরের বন্দনার বয়ান নির্মিত হয়, তা দেখে ‘ঘোড়াও ভি’ হেসেছে। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে নিরন্তর ষড়যন্ত্র করে অবশেষে জাতির ভাগনে, মামুকে বাকশাল গলদকরণ করাতে সক্ষম হয়। পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক চক্রের তপ্ত শয্যায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। ক্ষমতার একাধিপত্যের বয়ান জায়েজ করার জন্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের আবিষ্কার। ১৯৭৫ সালের মধ্য আগস্টের ঘটনাবলিকে তারা কখনোই রাজনীতির ভাষায় বুঝতে চায়নি। জনগণের ক্ষোভ ও ক্রোধকে অনুধাবনের চেষ্টা করেনি। বরং সব সময়ই আগস্ট অভ্যুত্থানকে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের পরিণতি বলে মিথ্যাচার করেছে।

সংস্কৃত ভাষায় একটি শ্লোক আছে ‘অঙ্গার শতধৌতনঃ নমুঞ্চতি’। সরল বাংলায় এর অর্থ ‘কয়লা ধুলে ময়লা যায় না’। আওয়ামী লীগের ব্যাপারে এটি একটি জুতসই উচ্চারণ। জন্ম থেকে জ্বলছে তারা ষড়যন্ত্রের আবেশে। সেই ১৯৪৯ থেকে ১৯৭১, ১৯৭৫ এবং সবশেষে ২০২৪ অতিক্রম করে তারা বদলায়নি এতটুকুও। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, এ দেশে যতবারই তাদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের সূচনা হয়েছে, ততবারই তারা এটাকে ষড়যন্ত্র বলে জাহির করার চেষ্টা করেছে। ‘কাউয়া কাদের’ কখনোই জনগণের ভাষা, তাদের দুঃখ-কষ্ট ও আশা-আকাঙ্ক্ষার খবর রাখেনি। আইয়ুব, ইয়াহিয়ারা যেমন বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে রাজনীতির ভাষায় কথা না বলে অস্ত্রের ভাষায় কথা বলেছে, তেমনি মুজিব লীগ ও হাসিনা লীগ অস্ত্রের ভাষায় কথা বলেছে। শক্তির ভাষায় শাসন করেছে। ভীতির রাজত্ব কায়েম করেছে। এটা অবিশ্বাস্য ঘটনা, জনগণের আন্দোলন-সংগ্রামের কথা তারা জানতেন না। তারা জনগণের ক্ষোভকে প্রশমিত হতে দেওয়া, ক্রোধকে অবনমিত করা কিংবা জনমনরঞ্জনের চেষ্টা করেননি। দেয়ালের ভাষা পড়েননি। এমনকি নিশ্চয়ই এজেন্সি রিপোর্টগুলো পড়ে দেখেননি। আমরা জানি, ‘রাজা যা বলে পারিষদ বলে তার শতগুণ’। সেই অপ্রিয় সত্য সত্ত্বেও নিশ্চয়ই তাদের কর্ণকুহরে সত্যের ভাষা প্রবেশ করেছিল। কিন্তু তাদের ‘কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ ও মাৎসর্য’ মানবিক অনুভূতিকে অতিক্রম করেছে। তারা হয়ে পড়েছিল অমানুষ। তাই হাজারো হরণেও তাদের প্রকম্পিত হয়নি হৃদয়। বিগত ১৭ বছরে অসংখ্য মানুষকে তারা হত্যা করেছে। ৩৬ জুলাইয়ের গণবিপ্লবে শহীদের সংখ্যা ১৪২৩ এবং আহত ২২ হাজার। এত মৃত্যু, এত রক্ত, এত জীবনহানি, তাদের প্রাণ স্পর্শ করেনি। শেখ হাসিনা মানুষকে প্রতারিত করার জন্য কান্না কান্না ভাব দেখিয়েছিলেন। এটা সত্যিই যদি হৃদয়ের ভাষা হতো, তাহলে আর তো গুলি চালানোর কথা ছিল না। জুলাই বিপ্লবের শেষ দিকে তারা প্রতারণা, বিভাজন ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু আপামর জনসাধারণ সেই ষড়যন্ত্রকে রক্তের আখরে প্রতিহত করে।

জনগণই যদি শক্তির উৎস হয়, যা তারস্বরে তারা বলে বেড়াত, তাহলে জনগণের বুকে গুলি চালানোর স্পর্ধা তাদের কখনোই হতো না। স্বাভাবিকভাবেই একটি রাজনৈতিক দল জনগণের সমর্থন, সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে আগাতে চাইবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এত কিছুর পরও তাদের উপলব্ধিই ঘটেনি। অনুশোচনা পরিদৃষ্ট হয়নি। ভেতরে এবং বাইরে শুধুই তাদের হুঙ্কার। প্রতিবেশীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে তারা অহর্নিস জনগণকে ভয় দেখাচ্ছে। তারা জানে না ভয় দেখিয়ে মন জয় করা যায় না।

বস্তুত, ৩৬ জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী ষড়যন্ত্রের নীলনকশা ত্রিবিধ। প্রথমত, ভায়োলেন্স তথা সন্ত্রাস। দ্বিতীয়ত, সামরিক বা সশস্ত্র ষড়যন্ত্র। তৃতীয়ত, বৈশ্বিক বা কূটনৈতিক নীলনকশা। ভায়োলেন্স বা সন্ত্রাসমূলক পরিস্থিতির মাধ্যমে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায় তারা। সংবাদপত্রে এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, আওয়ামী লীগ সেই ২৮ অক্টোবরের লগি-বইঠার তাণ্ডবের মতো সন্ত্রাস সৃষ্টি করে জনগণকে ভীত করে দিতে চায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শুকনো মৌসুমকে তারা তাদের লক্ষ্য পূরণের সময়কাল বলে চিহ্নিত করতে পারে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সচিবালয়ে আগুন, প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা, রাজনৈতিক বিভাজন এবং সংখ্যালঘু ইস্যুর মতো সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে তারা সু-নির্দিষ্ট পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করছে। আইন ও শৃঙ্খলা বিনষ্ট করার জন্য তারা নানা ধরনের কারসাজি করছে। অন্তর্বর্তী সরকারে বিভাজন সৃষ্টিও তাদের একটি এজেন্ডা। অর্থনীতিকে অচল করে দেওয়ার জন্য তারা শিল্প অঙ্গনকে অচল করে দিতে চায়। নতুন নতুন ইস্যু সৃষ্টি করে শিল্পাঞ্চলকে অস্থীর রাখাই তাদের সিদ্ধান্ত।

দ্বিতীয়ত, সামরিক তথা সশস্ত্র ষড়যন্ত্র। ৩৬ জুলাইয়ের বিপ্লব ভারতের মাথা খারাপ করে দিয়েছে। শেখ হাসিনার সোনার সংসার তছনছ হয়ে যাওয়ায় তাদেরও কপাল পুড়েছে। আঞ্চলিকভাবে আকস্মিকভাবেই ক্ষমতার ভারসাম্য বিনষ্ট হয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর। সে সময় ভারত-দিল্লির শিকল কেটে পশ্চিমা বলয়ে স্থান লাভ করে। এবারও একই ঘটনা ঘটেছে। লক্ষ্য করার বিষয়, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত গণবিস্ফোরণে যে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে, তা দিল্লি অনুমোদন করে না।

আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, শেখ হাসিনা আন্দোলন চলাকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিকৃষ্ট ভাষায় আক্রমণ করেছে। তার পলায়নের পর দিল্লি অনেকটা ভদ্র ভাষায় মার্কিনিদের প্রতি সিই ইঙ্গিত দেয়। এখন ঢাকা আর দিল্লির প্রযত্নে নেই। তাই তাদের সব গোস্যা প্রফেসর মুহাম্মাদ ইউনূস এবং আন্দোলনকারীদের ওপর। ১৫ আগস্ট-পরবর্তীকালে ভারতের অনুকূলে সমীকরণ ফিরিয়ে নিতে ভারত ষড়যন্ত্র শুরু করে। অর্থাৎ ঢাকায় দিল্লিপন্থি সরকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালায়। ভারতের একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষককে সুব্রামনিয়াম ওই সময় সানডে সাময়িকীতে লিখেছিলেন, জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড ভারতীয় ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। যদিও ভারত দৃঢ়তার সঙ্গে বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবুও কূটনৈতিক মহলের আভাস, ইঙ্গিত দিল্লির বিপক্ষেই ছিল। সে সময় জিয়া সরকারকে নাকচ করার জন্য তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি সৃষ্টির জন্য শান্তি বাহিনী গড়ে তুলেছিল।

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় এই যে, ভারতপন্থি শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন না হওয়া পর্যন্ত শান্তি বাহিনীর অশান্তিমূলক কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা রেজিমের শুরুতে জাতির ভাগনে দায়িত্ব নিয়ে একটি চুক্তি সম্পাদন করেন। এখন আবার সেখানে অশান্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে। ১৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর আরও একটি সশস্ত্র কার্যক্রম লক্ষ করা যায়। ১৯৭১ সালের সুনামধারী কাদের সিদ্দিকী ১৫ আগস্টের পর কু-নামের কাজ করেন। দিল্লির সহযোগিতায় তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু করেন। নিরাপত্তাবিশ্লেষকরা মনে করেন, ৩৬ জুলাই বিপ্লবের পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের শত শত কর্মী ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মাধ্যমে ভারত খণ্ডযুদ্ধ তথা প্রক্সি ওয়ার শুরু করতে পারে। ভারত আজাদ কাশ্মীরে একসময় সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা আকস্মিক আক্রমণ পরিচালনা করেছিল। এবার বাংলাদেশে তার পুনরাবৃত্তি হতে পারে।

তৃতীয়ত, বৈশ্বিক বা কূটনৈতিক নীলনকশা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে ভারত যেভাবে ক্রমেই পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে ঘায়েল করেছিল, আজকের পরিস্থিতিতেও ভারত বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসী, সাম্প্রদায়িক ও ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করে হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। মিয়ানমারের পরস্পরবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে। সেখানে আরাকান আর্মির বিজয় এবং নতুন করে রোহিঙ্গা বিতাড়ন ভারতের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

যেকোনো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের মালিক জনগণ। বাংলাদেশ জনগণের ইস্পাত কঠিন ঐক্য ভারতের যেকোনো ষড়যন্ত্রকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশের সমাজতাত্ত্বিকরা মনে করেন, যত দিন পর্যন্ত এই গণবিপ্লবের প্রজন্ম বেঁচে থাকবে, তত দিন অন্তত শেখ হাসিনা বা তার প্রভুদের ঢাকা দখল অসম্ভব হয়েই থাকবে। আর তাদের এই বৈপ্লবিক চেতনা প্রসারিত হবে। প্রলম্বিত হবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। সুতরাং কখনো পরাজিত হবে না বাংলাদেশ।

আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রের নীলনকশা

প্রকাশ: ০৯:৫৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

‘শেখ হাসিনা পালায় না’ তিনি বলেছিলেন, ‘অবশেষে তিনি পলায়ন করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতা-পাতি নেতারা এটা বারবার বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।’ আসলে ষড়যন্ত্র এবং ষড়যন্ত্রই আওয়ামী ক্ষমতার নিয়ামক।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তাদের জন্মকালের ঘটনাও নানা ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার ও প্রতারণার স্বাক্ষর। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হকের অসুস্থ হওয়া ও অন্তর্ধান যে ষড়যন্ত্রেরই অংশ, সেটা তখন রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। পরে যিনি তার স্থলাভিষিক্ত হন, তিনি আর কেউ নন, আমাদের ‘খোকাবাবু’। এরপর তিনি ‘জাতির আব্বাজান’ নামে অভিহিত হয়েছেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের বিপুল বিজয়ের পর প্রাদেশিক পরিষদে স্পিকার সাহেদ আলীকে হত্যা করা হয়েছিল। এই হত্যার জন্য আওয়ামী লীগ পশ্চিমাদের দায়ী করেছিল। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিল। যারা সত্যিকার অর্থে সাহেদ আলী হত্যার সুনির্দিষ্ট দায়-দায়িত্বের কথা জানেন, সেই নির্মম সত্যও খোকাবাবুকেই নির্দেশ করে। অবশ্য তত দিনে তিনি আর খোকা নন। রীতিমতো ‘ডেমাগোগে’ প্রতারণাবগ্মী পুরুষ।

আওয়ামী লীগাররা বলে বেড়ান, ১৯৫৪-৫৬ সময়কালে পাকিস্তানি ষড়যন্ত্রে সরকার ওঠানামা করেছে। অথচ আওয়ামী রাজনীতির কূটকৌশলে তখন যে ‘সকাল-সন্ধ্যা’ সরকার পরিবর্তন হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মরহুম আতাউর রহমান খানের লেখা ‘ওজারতের দুই বছর’ পাঠ করলেই আসল সত্যটি উদ্ভাসিত হবে। ১৯৬২ সালে সামরিক আইনের পরিবর্তে আইয়ুব খানের ‘আদি-আসল বুনিয়াদি গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হলো, তখন পাকিস্তানের শীর্ষ ৯ নেতা বিবৃতি দিয়ে বললেন, আগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, পরে পার্টি পলিটিকস। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা সোহরাওয়ার্দীর এই সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ‘স্বঘোষিত’ নেতা হয়ে গেলেন। এমনসব বুদ্ধিশুদ্ধি আঁটলেন, যাতে আতাউর রহমান খান, সালাম খান ও মাওলানা তর্কবাগীশের মতো নেতা ছেড়ে দিয়ে কেঁদে বাঁচলেন। তিনি যখন আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলায় আসামি তখন আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন একজন সাহসী আমেনা বেগম। ষড়যন্ত্রের তকমা দিয়ে তাকেও বহিষ্কারে দ্বিধা জাগেনি আওয়ামী নেতৃত্বে।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে তখন তিনি বলেছিলেন, ‘সব জুট হ্যায়, মেইনে সাচ্চা পাকিস্তানি’। রূপ-রস-গন্ধ দিয়ে এখন তারা বলছেন, সেই ষড়যন্ত্রই সত্যি। কালো ২৫-এর রাতে তাজউদ্দীন সাহেব স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য সবকিছু নিয়ে প্রস্তুত ৩২ নম্বরে। তাজউদ্দীনকন্যা সিমিন হোসেন রিমির ‘নেতা ও পিতা’ গ্রন্থের ভাষ্য মোতাবেক তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে অস্বীকার করলেন। অথচ পরে শহীদ জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণাকে অস্বীকার করার জন্য হাজারো মিথ্যা কথা বলা হলো। আসলে তারা জনগণের মুক্তি নয় বরং পাকিস্তানের ক্ষমতাপ্রাপ্তিকে মোক্ষম মনে করেছে।

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর আওয়ামী ষড়যন্ত্র তাদের ক্ষমতার নীতি হয়ে দাঁড়ায়। তাজউদ্দীন আহমদের মতো ত্যাগী নেতাকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক জেনারেল উসমানীকে খাটো করে দেখানো হয়। মওলানা ভাসানীর নাম নেওয়াকে যেন অন্যায় মনে করা হয়। যেভাবে হাজার বছরের বন্দনার বয়ান নির্মিত হয়, তা দেখে ‘ঘোড়াও ভি’ হেসেছে। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে নিরন্তর ষড়যন্ত্র করে অবশেষে জাতির ভাগনে, মামুকে বাকশাল গলদকরণ করাতে সক্ষম হয়। পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক চক্রের তপ্ত শয্যায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। ক্ষমতার একাধিপত্যের বয়ান জায়েজ করার জন্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের আবিষ্কার। ১৯৭৫ সালের মধ্য আগস্টের ঘটনাবলিকে তারা কখনোই রাজনীতির ভাষায় বুঝতে চায়নি। জনগণের ক্ষোভ ও ক্রোধকে অনুধাবনের চেষ্টা করেনি। বরং সব সময়ই আগস্ট অভ্যুত্থানকে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের পরিণতি বলে মিথ্যাচার করেছে।

সংস্কৃত ভাষায় একটি শ্লোক আছে ‘অঙ্গার শতধৌতনঃ নমুঞ্চতি’। সরল বাংলায় এর অর্থ ‘কয়লা ধুলে ময়লা যায় না’। আওয়ামী লীগের ব্যাপারে এটি একটি জুতসই উচ্চারণ। জন্ম থেকে জ্বলছে তারা ষড়যন্ত্রের আবেশে। সেই ১৯৪৯ থেকে ১৯৭১, ১৯৭৫ এবং সবশেষে ২০২৪ অতিক্রম করে তারা বদলায়নি এতটুকুও। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, এ দেশে যতবারই তাদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের সূচনা হয়েছে, ততবারই তারা এটাকে ষড়যন্ত্র বলে জাহির করার চেষ্টা করেছে। ‘কাউয়া কাদের’ কখনোই জনগণের ভাষা, তাদের দুঃখ-কষ্ট ও আশা-আকাঙ্ক্ষার খবর রাখেনি। আইয়ুব, ইয়াহিয়ারা যেমন বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে রাজনীতির ভাষায় কথা না বলে অস্ত্রের ভাষায় কথা বলেছে, তেমনি মুজিব লীগ ও হাসিনা লীগ অস্ত্রের ভাষায় কথা বলেছে। শক্তির ভাষায় শাসন করেছে। ভীতির রাজত্ব কায়েম করেছে। এটা অবিশ্বাস্য ঘটনা, জনগণের আন্দোলন-সংগ্রামের কথা তারা জানতেন না। তারা জনগণের ক্ষোভকে প্রশমিত হতে দেওয়া, ক্রোধকে অবনমিত করা কিংবা জনমনরঞ্জনের চেষ্টা করেননি। দেয়ালের ভাষা পড়েননি। এমনকি নিশ্চয়ই এজেন্সি রিপোর্টগুলো পড়ে দেখেননি। আমরা জানি, ‘রাজা যা বলে পারিষদ বলে তার শতগুণ’। সেই অপ্রিয় সত্য সত্ত্বেও নিশ্চয়ই তাদের কর্ণকুহরে সত্যের ভাষা প্রবেশ করেছিল। কিন্তু তাদের ‘কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ ও মাৎসর্য’ মানবিক অনুভূতিকে অতিক্রম করেছে। তারা হয়ে পড়েছিল অমানুষ। তাই হাজারো হরণেও তাদের প্রকম্পিত হয়নি হৃদয়। বিগত ১৭ বছরে অসংখ্য মানুষকে তারা হত্যা করেছে। ৩৬ জুলাইয়ের গণবিপ্লবে শহীদের সংখ্যা ১৪২৩ এবং আহত ২২ হাজার। এত মৃত্যু, এত রক্ত, এত জীবনহানি, তাদের প্রাণ স্পর্শ করেনি। শেখ হাসিনা মানুষকে প্রতারিত করার জন্য কান্না কান্না ভাব দেখিয়েছিলেন। এটা সত্যিই যদি হৃদয়ের ভাষা হতো, তাহলে আর তো গুলি চালানোর কথা ছিল না। জুলাই বিপ্লবের শেষ দিকে তারা প্রতারণা, বিভাজন ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু আপামর জনসাধারণ সেই ষড়যন্ত্রকে রক্তের আখরে প্রতিহত করে।

জনগণই যদি শক্তির উৎস হয়, যা তারস্বরে তারা বলে বেড়াত, তাহলে জনগণের বুকে গুলি চালানোর স্পর্ধা তাদের কখনোই হতো না। স্বাভাবিকভাবেই একটি রাজনৈতিক দল জনগণের সমর্থন, সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে আগাতে চাইবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এত কিছুর পরও তাদের উপলব্ধিই ঘটেনি। অনুশোচনা পরিদৃষ্ট হয়নি। ভেতরে এবং বাইরে শুধুই তাদের হুঙ্কার। প্রতিবেশীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে তারা অহর্নিস জনগণকে ভয় দেখাচ্ছে। তারা জানে না ভয় দেখিয়ে মন জয় করা যায় না।

বস্তুত, ৩৬ জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী ষড়যন্ত্রের নীলনকশা ত্রিবিধ। প্রথমত, ভায়োলেন্স তথা সন্ত্রাস। দ্বিতীয়ত, সামরিক বা সশস্ত্র ষড়যন্ত্র। তৃতীয়ত, বৈশ্বিক বা কূটনৈতিক নীলনকশা। ভায়োলেন্স বা সন্ত্রাসমূলক পরিস্থিতির মাধ্যমে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায় তারা। সংবাদপত্রে এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, আওয়ামী লীগ সেই ২৮ অক্টোবরের লগি-বইঠার তাণ্ডবের মতো সন্ত্রাস সৃষ্টি করে জনগণকে ভীত করে দিতে চায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শুকনো মৌসুমকে তারা তাদের লক্ষ্য পূরণের সময়কাল বলে চিহ্নিত করতে পারে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সচিবালয়ে আগুন, প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা, রাজনৈতিক বিভাজন এবং সংখ্যালঘু ইস্যুর মতো সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে তারা সু-নির্দিষ্ট পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করছে। আইন ও শৃঙ্খলা বিনষ্ট করার জন্য তারা নানা ধরনের কারসাজি করছে। অন্তর্বর্তী সরকারে বিভাজন সৃষ্টিও তাদের একটি এজেন্ডা। অর্থনীতিকে অচল করে দেওয়ার জন্য তারা শিল্প অঙ্গনকে অচল করে দিতে চায়। নতুন নতুন ইস্যু সৃষ্টি করে শিল্পাঞ্চলকে অস্থীর রাখাই তাদের সিদ্ধান্ত।

দ্বিতীয়ত, সামরিক তথা সশস্ত্র ষড়যন্ত্র। ৩৬ জুলাইয়ের বিপ্লব ভারতের মাথা খারাপ করে দিয়েছে। শেখ হাসিনার সোনার সংসার তছনছ হয়ে যাওয়ায় তাদেরও কপাল পুড়েছে। আঞ্চলিকভাবে আকস্মিকভাবেই ক্ষমতার ভারসাম্য বিনষ্ট হয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর। সে সময় ভারত-দিল্লির শিকল কেটে পশ্চিমা বলয়ে স্থান লাভ করে। এবারও একই ঘটনা ঘটেছে। লক্ষ্য করার বিষয়, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত গণবিস্ফোরণে যে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে, তা দিল্লি অনুমোদন করে না।

আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, শেখ হাসিনা আন্দোলন চলাকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিকৃষ্ট ভাষায় আক্রমণ করেছে। তার পলায়নের পর দিল্লি অনেকটা ভদ্র ভাষায় মার্কিনিদের প্রতি সিই ইঙ্গিত দেয়। এখন ঢাকা আর দিল্লির প্রযত্নে নেই। তাই তাদের সব গোস্যা প্রফেসর মুহাম্মাদ ইউনূস এবং আন্দোলনকারীদের ওপর। ১৫ আগস্ট-পরবর্তীকালে ভারতের অনুকূলে সমীকরণ ফিরিয়ে নিতে ভারত ষড়যন্ত্র শুরু করে। অর্থাৎ ঢাকায় দিল্লিপন্থি সরকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালায়। ভারতের একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষককে সুব্রামনিয়াম ওই সময় সানডে সাময়িকীতে লিখেছিলেন, জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড ভারতীয় ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। যদিও ভারত দৃঢ়তার সঙ্গে বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবুও কূটনৈতিক মহলের আভাস, ইঙ্গিত দিল্লির বিপক্ষেই ছিল। সে সময় জিয়া সরকারকে নাকচ করার জন্য তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি সৃষ্টির জন্য শান্তি বাহিনী গড়ে তুলেছিল।

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় এই যে, ভারতপন্থি শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন না হওয়া পর্যন্ত শান্তি বাহিনীর অশান্তিমূলক কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা রেজিমের শুরুতে জাতির ভাগনে দায়িত্ব নিয়ে একটি চুক্তি সম্পাদন করেন। এখন আবার সেখানে অশান্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে। ১৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর আরও একটি সশস্ত্র কার্যক্রম লক্ষ করা যায়। ১৯৭১ সালের সুনামধারী কাদের সিদ্দিকী ১৫ আগস্টের পর কু-নামের কাজ করেন। দিল্লির সহযোগিতায় তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু করেন। নিরাপত্তাবিশ্লেষকরা মনে করেন, ৩৬ জুলাই বিপ্লবের পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের শত শত কর্মী ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মাধ্যমে ভারত খণ্ডযুদ্ধ তথা প্রক্সি ওয়ার শুরু করতে পারে। ভারত আজাদ কাশ্মীরে একসময় সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা আকস্মিক আক্রমণ পরিচালনা করেছিল। এবার বাংলাদেশে তার পুনরাবৃত্তি হতে পারে।

তৃতীয়ত, বৈশ্বিক বা কূটনৈতিক নীলনকশা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে ভারত যেভাবে ক্রমেই পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে ঘায়েল করেছিল, আজকের পরিস্থিতিতেও ভারত বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসী, সাম্প্রদায়িক ও ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করে হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। মিয়ানমারের পরস্পরবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে। সেখানে আরাকান আর্মির বিজয় এবং নতুন করে রোহিঙ্গা বিতাড়ন ভারতের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

যেকোনো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের মালিক জনগণ। বাংলাদেশ জনগণের ইস্পাত কঠিন ঐক্য ভারতের যেকোনো ষড়যন্ত্রকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশের সমাজতাত্ত্বিকরা মনে করেন, যত দিন পর্যন্ত এই গণবিপ্লবের প্রজন্ম বেঁচে থাকবে, তত দিন অন্তত শেখ হাসিনা বা তার প্রভুদের ঢাকা দখল অসম্ভব হয়েই থাকবে। আর তাদের এই বৈপ্লবিক চেতনা প্রসারিত হবে। প্রলম্বিত হবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। সুতরাং কখনো পরাজিত হবে না বাংলাদেশ।