অনেকেই আছেন যারা ভাগ্যচক্রে বিশ্বাস করেন, আবার অনেকে করেন না। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত বিষয়। এরপরও বিশ্বজুড়ে রাশিচর্চা বা ভাগ্যচক্র নিয়ে আলোচনা-গবেষণা হয়। জেনে রাখা ভালো, রাশি কখনোই ভাগ্যনিয়ন্তা নয়। মানুষের কর্মই তার ভাগ্য নির্ধারণ করতে – ড. কে সি পাল
বাংলাদেশ
২০২৫ সালের গ্রহাবস্থান বিচারে জ্যোতিষীর দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের অবস্থা শুভাশুভ মিশ্রফল প্রদান করবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, উপদেষ্টা পরিষদ ও প্রশাসনের মধ্যকার বেশির ভাগ ব্যক্তি দেশের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করবেন। কমতে পারে দুর্নীতি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের সুনাম বাড়বে। বন্ধ হয়ে যাওয়া কয়েকটি শিল্প-কলকারখানা ফের চাঙা হতে পারে। নতুন কলকারখানা চালু হওয়ায় বহু কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে দুর্নীতিগ্রস্ত শিল্প-কারখানা বন্ধ হতে পারে। দেশের স্বার্থবিরোধী বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ফিরে যেতে বাধ্য হবে। শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষ্টি, তথ্যপ্রযুক্তি ও আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন আশা করা যায়। খুব দ্রুত শেয়ারবাজারের অবস্থা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ব্যাংকিং খাতে নজরদারি বাড়াতে হবে। জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন অব্যাহত থাকবে। তবে মুদ্রাস্ফীতি কমার সম্ভাবনা কম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, শৈত্যপ্রবাহ, বজ্রপাত; গ্রীষ্মের দাবদাহ বাড়তে পারে। সেনাপতি মঙ্গলের প্রভাবে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা যেন জনজীবনকে বিঘ্নিত করতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। আমদানিনির্ভর পণ্য, কয়লা, শিশুখাদ্য, পাথর, লৌহ, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, সোনা, সার, যানবাহন, ইলেকট্রনিকস সামগ্রীসহ প্রায় সিংহভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়তে পারে। সরকার প্রতিরক্ষা খাতকে ঢেলে সাজানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এতে বাজেটও বৃদ্ধি পাবে। নিত্যনতুন সমরাস্ত্র, জাহাজ, ট্যাংক, বিমান, ড্রোন, গোলাবারুদের মজুদ বৃদ্ধি পাবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মাদক ও দুর্নীতি দমন বিভাগে তৎপরতা স্বস্তি বয়ে আনবে। দেশের শত্রুভাবাপন্ন রাষ্ট্রও সংযত আচরণ করতে বাধ্য হবে। তৈরি পোশাক, চিংড়ি, পাট, চামড়া, সিমেন্ট, ওষুধসহ রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও বেকারত্ব দুশ্চিন্তা বাড়াবে। বিভিন্ন দাতা সংস্থা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। বিমান বন্দর ও ঘাঁটি নির্মাণ, গ্যাস, লৌহ উত্তোলন, বিমান, রেল পরিষেবা বৃদ্ধি, বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ এমনকি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যা দূরীকরণে মজবুত পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে। দেশের মৎস্য, মাংস ও কৃষি খাতের ওপর সরকারের সতর্ক দৃষ্টি থাকবে। কৃষিজাত দ্রব্যের বাম্পার ফলন, মৎস্য, মাংস, ডিমসহ প্রায় সিংহভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির চাহিদা পূরণ করা সহজ হবে। উল্টোদিকে দেশের একশ্রেণির মানুষের অপকর্ম যেমন প্রাণদায়িক ওষুধে ভেজাল, খাদ্যদ্রব্যে বিষাক্ত কেমিক্যাল ও প্রাণঘাতী জীবাণুর মিশ্রণ সাধারণ মানুষকে হতভম্ব করবে। দেশে মাদকবিরোধী অভিযানের সফলতা বাড়বে। দেশের ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ জনবহুল স্থাপনা ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর দাঙ্গা-হাঙ্গামার ষড়যন্ত্র সরকারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে সামনে এসে দাঁড়াবে। এতে সরকার কঠোর ভূমিকা পালন করবে। দেশে আশ্রয়প্রাপ্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়বে বই কমবে না। মিছিল-মিটিং আন্দোলন-অবরোধ বারবার খবরের শিরোনামে উঠে আসতে পারে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব লেগে থাকলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। রাজনৈতিক অস্থিরতার খবর পাওয়া যাবে তবে সেসব মিটমাট হয়ে যাবে। দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সারা বছরই সরকারকে ব্যস্ত রাখবে। আলোচনায় থাকবে কৌশলী ছাত্র-জনতার ভূমিকা। নতুন বছরে নতুন উদ্যমে ব্যবসাবাণিজ্যে আত্মনিয়োগ করবেন ব্যবসায়ীরা। নানা ধরনের ব্যবসায় সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন আশা করা যায়। রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় চমক আসতে পারে। দেশের অগ্রগতির সামনে নানা চ্যালেঞ্জ থাকলেও আন্তর্জাতিকভাবে দেশের সুনাম বাড়বে।
আন্তর্জাতিক
২০২৫ সাল বুধবার। শুক্লা প্রতিপদ তিথি, পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্র, ব্যাঘাত যোগ নিয়ে যাত্রা। ২০২৫ সালের সংখ্যা-৯ যা মঙ্গল গ্রহের প্রতীক। সেনাপতিসুলভ তেজস্বিতা, ত্রিমুখী শক্তির প্রভাব, বলবীর্যকারক কই মাছের প্রাণ। অপরদিকে বার তিথি, নক্ষত্র যোগ মিলে তিন হলো বৃহস্পতির কারক যা প্রসার বিস্তারসহ বহুমুখী গুণ ও বিদ্যা অভূতপূর্ব সমন্বয়। সেই সঙ্গে সমগ্র বছরের গ্রহাবস্থান বিচারে যুদ্ধবিগ্রহ, ভৌগোলিক অবস্থার প্রসার, প্রভাব বিস্তার ও বাস্তবায়নে বল প্রয়োগ, নিত্যনতুন নিষেধাজ্ঞার উপেক্ষা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা, ধ্বংসযজ্ঞের মধ্য দিয়ে বহুমুখী ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা দেখা যাবে। আমেরিকা, ইসরায়েল, ইরান, রাশিয়া, ইউক্রেন, আফগানিস্তান, চীন, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, জর্ডান, মিয়ানমার প্রভৃতি রাষ্ট্রে বাড়াবাড়ি দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করবে। দেশে দেশে সীমান্তসংক্রান্ত বিরোধ বাড়তে পারে। নৌ-বিমান, ট্যাংক, গোলাবারুদের হামলা, পরমাণু শক্তি প্রয়োগের হুমকি, রাষ্ট্রনেতাকে বন্দিসহ অস্থিরতার খবর সারা বছরই মিলবে। অপরদিকে দেবগুরু বৃহস্পতির অশুভ প্রভাব যুক্ত হতে পারে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন বিশেষ করে নরওয়ে, ব্রাজিল, কানাডা, ইরাক, পাকিস্তান, ইউক্রেন, মিয়ানমার, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনরা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন। জ্বালানি তেল, প্রাণদায়ী ওষুধ, অস্ত্রশস্ত্র, মারণঘাতক কেমিক্যাল-বাণিজ্যে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে অস্থিরতা বিরাজ করবে। বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়তে পারে। বুদ্ধির দেবতা বুধ ও প্রশান্তির দেবতা শুক্রাচার্যের শুভ প্রভাবে প্রাণদায়ী ওষুধ আবিষ্কার, বৈজ্ঞানিক ও মহাকাশ গবেষণা, শিক্ষা, ধর্ম, তথ্যপ্রযুক্তি, লেজার রশ্মির মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা, প্রাইফোন, মঙ্গলগ্রহে বসবাস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ সূর্য, চন্দ্র, স্যাটেলাইট স্থাপন, কৃত্রিম বৃষ্টিপাত প্রভৃতিতে স্মরণকালের বড় অর্জন দেখতে পাবে বিশ্ববাসী। সেই সঙ্গে স্নেহ মায়া মমত্বসহ অর্থ, খাদ্য, প্রাণদায়ী ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করে বিশ্বের বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রনেতা এগিয়ে আসবেন। রাহু শনি মঙ্গলের প্রভাবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দুষ্প্রাপ্যতা, আর্থিক সংকট মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ মানি হ্রাস, বিশ্ব বাণিজ্যে ডলার সংকট, শ্রম ও জনশক্তি রপ্তানিতে ভাটা সব দেশকেই দুশ্চিন্তায় ফেলবে। ক্ষমতাধর রাষ্ট্র যেমন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তান, ইরান, রাশিয়া, বাংলাদেশ, ভারত, আফগানিস্তান, সিরিয়া, মিয়ানমার, এমনকি খোদ ইউরোপ ও দু’তিনটি দেশের ওপর ভিসানীতিসহ বাণিজ্যিক, সামরিক নিষেধাজ্ঞা, কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখতে পারে। সামরিক শক্তি প্রয়োগের ঘটনাও ঘটতে পারে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তাপ বাড়তে পারে। এতে জড়িয়ে পড়তে পারে আরও কয়েকটি দেশ। ইসরায়েল, ফিলিস্তিন, জর্ডান, সিরিয়া, ইরান, লেবননসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রাজনৈতিক সংকট প্রবল হতে পারে। মিয়ানমারের জান্তা সরকার করুণ পরিণতির দিকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চীনের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হতে পারে। ভারত, পাকিস্তান, চীন, বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজবে। ভারতসহ যুদ্ধে না জড়িয়ে আর্থিক, সামরিক গবেষণা, নানা আবিষ্কারে ব্যস্ত থাকবে। উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া, চীন, ইরান, ভারত, আমেরিকা, পাকিস্তান, ইসরায়েল তাদের সামরিক বাজেট বৃদ্ধিসহ পরমাণু ও হাইড্রোজেন বোমার ভান্ডার বৃদ্ধির কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ইতালি, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, জাপান, সৌদি আরব, নরওয়ে, সুইডেন, ফ্রান্স, স্পেন, আর্জেন্টিনা, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, দুবাই, কাতার ও শ্রীলঙ্কার অবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন হবে না। বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লেও তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা খাতে চমকপ্রদ আবিষ্কার বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেবে। নতুন বছরজুড়ে শুভ গ্রহযোগে ধ্বংসের মাধ্যমে হবে সৃষ্টি সাজবে নতুন রূপে।