রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চ্যালেঞ্জের মুখে এনবিআর

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশ: ১১:২৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারি ২০২৫
  • ১২৮ বার পঠিত হয়েছে

টানা একযুগ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রাজস্ব আয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে না পারায় ঋণ নিয়ে ঘাটতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে সরকারকে। এতে বাড়তি ঋণের বোঝা চাপছে সরকারের কাঁধে।

চলতি অর্থবছরেও ২০২৪-২৫ রাজস্ব আয়ের একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কম হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। ফলে অর্থবছর শেষে রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের ঘাটতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এনবিআর।

এদিকে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ‘উপায় খুঁজতে’ গত ৩১ ডিসেম্বর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। বৈঠকে রাজস্ব আদায়ে আরও তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মানুষকে হয়রানি না করেই কর্মকর্তাদের ন্যায্য রাজস্ব আদায়ে গুরুত্বারোপ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

অপরদিকে রাজস্ব আদায় বাড়াতে নতুন বছরের প্রথম দিন বুধবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনের (সংশোধনী) অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে বেশ কিছু পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট এবং শুল্ক বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। আগামী কয়েক দিনের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপণ জারি করবে বলে জানা গেছে।

সাধারণত পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনার সময় কর কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটায় সরকার। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য অর্জনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পরিবর্তন করা হয়। সংশোধন সাপেক্ষে সংসদে অনুমোদিত হওয়ার পর তা কার্যকর করা হয়। কিন্তু প্রয়োজন অনুসারে অর্থবছরের যে কোনো সময় পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে কর কাঠামোয় কিছু পরিবর্তন আনতে পারে সরকার। কিন্তু এবার অর্থবছরের মাঝপথে ৩৪টির মতো পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাটের পরিমাণ বৃদ্ধি কিংবা নতুন করে ভ্যাট আরোপ করার নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে কিছু কিছু পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে সম্পূরক ও আবগারী শুল্কও বাড়ানো হচ্ছে। মূলত রাজস্ব আয়ে গতি ফিরিয়ে লক্ষ্য অর্জনের পথেই হাঁটতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ নতুন করে পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, আমাদের রাজস্ব গ্যাপ অনেক বেশি। ঋণ নিয়ে ঘাটতি পূরণ করে আমরা এগুতে পারব না। ধার করে বেশি দিন চলা যায় না। অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ প্রাপ্তির শর্ত পূরণেও সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানোর শর্ত রয়েছে। আইএমএফ’র শর্ত পূরণে ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য, সবকিছু বিবেচনা করেই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চাল, ডালের ওপর শুল্ক শূন্যে নামিয়ে আনা হয়েছে। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক হার শূন্য করা হবে বলেও জানান তিনি। এর ফলে সাধারণ জনগণের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেন। গত ২ জানুয়ারি ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

তবে কর কাঠামো সংস্কার, কর আদায়ে অটোমেশন চালু না করে এভাবে পণ্য ও সেবার ওপর শুল্ক বাড়িয়ে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে অর্থনীতিবিদদের। অবশ্য এনবিআর সংস্কারে ইতোমধ্যে ৫ সদস্যের একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করেছে সরকার। কমিটি রাজস্ব নীতি, রাজস্ব প্রশাসন, এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার মূল্যায়ন ও আধুনিকায়ন, শুদ্ধাচার ও সুশাসনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও নীতিমালা প্রণয়ন, নাগরিক যোগাযোগ ও অংশীজন সম্পৃক্ততার কার্যক্রম ও রাজস্ব সংস্কার সংশ্লিষ্ট যে কোনো নীতিগত পরামর্শ দেবে এই কমিটি।

এনবিআরের সাবেক সদস্য ফারুক আহমেদ সিদ্দিকীর মতামত জানতে চাইলে তিনি দৈনিক টার্গেটকে বলেন, সরকারের রাজস্ব বাড়াতেই হবে। রাজস্ব না বাড়ালে দেশের উন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত গতি আসবে না। সবাই বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলে কিন্তু রাজস্ব কীভাবে বাড়বে, সেটা নিয়ে তেমন কোনো কথা নেই। রাজস্ব আদায় কম হওয়ার জন্য ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারকে ব্যাংক থেকে, সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে কিংবা বিদেশ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এতে সরকারের ঋণের বোঝা বাড়ছে। সম্প্রতি ৩৪টি পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো অর্থবছরের মাঝপথে এ ধরনের ভ্যাট বাড়ানোর বিষয়টি নজিরবিহীন। মূলত ভ্যাটের মাধ্যমে খুব দ্রুত রাজস্ব আয় করতে পারে বলেই সরকার এ পথেই হাঁটছে। তবে সঠিকভাবে ভ্যাট আদায়ের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, নতুন করে ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। রাজস্ব আদায়ের জন্য টেক্স ফাঁকি রোধ, এনবিআরের আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এনবিআরের সাবেক এ সদস্য।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) পর্যন্ত আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে ৫ মাসে আদায় কম হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লব ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক নানা ঘটনা প্রবাহের কারণে দেশের অর্থনীতিতে মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। গত ১৫ বছরে যারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী ছিল তাদের অধিকাংশ বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় কিংবা আত্মগোপনে থাকায় এবং অনেকে গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন ঘটেছে। এর পাশাপাশি খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, বিনিয়োগ মন্দা, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প কমে যাওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার কিংবা কমানোর কারণে সরকারের প্রথম ৫ মাসে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। তবে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি ও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী প্রচেষ্টায় সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। ফলে আগামী মাসগুলোতে সরকারের রাজস্ব আয়ে গতি ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা। এছাড়া নতুন করে পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট-শুল্ক বৃদ্ধির কারণেও রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী এনবিআর।

টানা ১২ বছরেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে শুরু করে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত অর্থাৎ ১২ অর্থবছরে এনবিআর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। এমনকি লক্ষ্যমাত্র কমিয়ে সংশোধন করা হলেও সেটি অর্জন করতেও ব্যর্থ হয়েছে রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠানটি। গত অর্থবছরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এনবিআর মোট রাজস্ব আদায় করেছে তিন লাখ ৮২ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। এটি সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২৭ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা কম। অর্থবছরের শুরুতে সরকার চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা কর আদায়ের লক্ষ্য নিলেও শেষ পর্যন্ত ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে আনে।

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চ্যালেঞ্জের মুখে এনবিআর

প্রকাশ: ১১:২৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারি ২০২৫

টানা একযুগ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রাজস্ব আয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে না পারায় ঋণ নিয়ে ঘাটতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে সরকারকে। এতে বাড়তি ঋণের বোঝা চাপছে সরকারের কাঁধে।

চলতি অর্থবছরেও ২০২৪-২৫ রাজস্ব আয়ের একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কম হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। ফলে অর্থবছর শেষে রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের ঘাটতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এনবিআর।

এদিকে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ‘উপায় খুঁজতে’ গত ৩১ ডিসেম্বর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। বৈঠকে রাজস্ব আদায়ে আরও তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মানুষকে হয়রানি না করেই কর্মকর্তাদের ন্যায্য রাজস্ব আদায়ে গুরুত্বারোপ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

অপরদিকে রাজস্ব আদায় বাড়াতে নতুন বছরের প্রথম দিন বুধবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনের (সংশোধনী) অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে বেশ কিছু পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট এবং শুল্ক বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। আগামী কয়েক দিনের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপণ জারি করবে বলে জানা গেছে।

সাধারণত পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনার সময় কর কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটায় সরকার। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য অর্জনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পরিবর্তন করা হয়। সংশোধন সাপেক্ষে সংসদে অনুমোদিত হওয়ার পর তা কার্যকর করা হয়। কিন্তু প্রয়োজন অনুসারে অর্থবছরের যে কোনো সময় পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে কর কাঠামোয় কিছু পরিবর্তন আনতে পারে সরকার। কিন্তু এবার অর্থবছরের মাঝপথে ৩৪টির মতো পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাটের পরিমাণ বৃদ্ধি কিংবা নতুন করে ভ্যাট আরোপ করার নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে কিছু কিছু পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে সম্পূরক ও আবগারী শুল্কও বাড়ানো হচ্ছে। মূলত রাজস্ব আয়ে গতি ফিরিয়ে লক্ষ্য অর্জনের পথেই হাঁটতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ নতুন করে পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, আমাদের রাজস্ব গ্যাপ অনেক বেশি। ঋণ নিয়ে ঘাটতি পূরণ করে আমরা এগুতে পারব না। ধার করে বেশি দিন চলা যায় না। অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ প্রাপ্তির শর্ত পূরণেও সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানোর শর্ত রয়েছে। আইএমএফ’র শর্ত পূরণে ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য, সবকিছু বিবেচনা করেই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চাল, ডালের ওপর শুল্ক শূন্যে নামিয়ে আনা হয়েছে। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক হার শূন্য করা হবে বলেও জানান তিনি। এর ফলে সাধারণ জনগণের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেন। গত ২ জানুয়ারি ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

তবে কর কাঠামো সংস্কার, কর আদায়ে অটোমেশন চালু না করে এভাবে পণ্য ও সেবার ওপর শুল্ক বাড়িয়ে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে অর্থনীতিবিদদের। অবশ্য এনবিআর সংস্কারে ইতোমধ্যে ৫ সদস্যের একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করেছে সরকার। কমিটি রাজস্ব নীতি, রাজস্ব প্রশাসন, এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার মূল্যায়ন ও আধুনিকায়ন, শুদ্ধাচার ও সুশাসনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও নীতিমালা প্রণয়ন, নাগরিক যোগাযোগ ও অংশীজন সম্পৃক্ততার কার্যক্রম ও রাজস্ব সংস্কার সংশ্লিষ্ট যে কোনো নীতিগত পরামর্শ দেবে এই কমিটি।

এনবিআরের সাবেক সদস্য ফারুক আহমেদ সিদ্দিকীর মতামত জানতে চাইলে তিনি দৈনিক টার্গেটকে বলেন, সরকারের রাজস্ব বাড়াতেই হবে। রাজস্ব না বাড়ালে দেশের উন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত গতি আসবে না। সবাই বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলে কিন্তু রাজস্ব কীভাবে বাড়বে, সেটা নিয়ে তেমন কোনো কথা নেই। রাজস্ব আদায় কম হওয়ার জন্য ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারকে ব্যাংক থেকে, সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে কিংবা বিদেশ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এতে সরকারের ঋণের বোঝা বাড়ছে। সম্প্রতি ৩৪টি পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো অর্থবছরের মাঝপথে এ ধরনের ভ্যাট বাড়ানোর বিষয়টি নজিরবিহীন। মূলত ভ্যাটের মাধ্যমে খুব দ্রুত রাজস্ব আয় করতে পারে বলেই সরকার এ পথেই হাঁটছে। তবে সঠিকভাবে ভ্যাট আদায়ের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, নতুন করে ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। রাজস্ব আদায়ের জন্য টেক্স ফাঁকি রোধ, এনবিআরের আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এনবিআরের সাবেক এ সদস্য।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) পর্যন্ত আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে ৫ মাসে আদায় কম হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লব ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক নানা ঘটনা প্রবাহের কারণে দেশের অর্থনীতিতে মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। গত ১৫ বছরে যারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী ছিল তাদের অধিকাংশ বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় কিংবা আত্মগোপনে থাকায় এবং অনেকে গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন ঘটেছে। এর পাশাপাশি খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, বিনিয়োগ মন্দা, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প কমে যাওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার কিংবা কমানোর কারণে সরকারের প্রথম ৫ মাসে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। তবে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি ও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী প্রচেষ্টায় সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। ফলে আগামী মাসগুলোতে সরকারের রাজস্ব আয়ে গতি ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা। এছাড়া নতুন করে পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট-শুল্ক বৃদ্ধির কারণেও রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী এনবিআর।

টানা ১২ বছরেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে শুরু করে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত অর্থাৎ ১২ অর্থবছরে এনবিআর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। এমনকি লক্ষ্যমাত্র কমিয়ে সংশোধন করা হলেও সেটি অর্জন করতেও ব্যর্থ হয়েছে রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠানটি। গত অর্থবছরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এনবিআর মোট রাজস্ব আদায় করেছে তিন লাখ ৮২ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। এটি সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২৭ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা কম। অর্থবছরের শুরুতে সরকার চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা কর আদায়ের লক্ষ্য নিলেও শেষ পর্যন্ত ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে আনে।