১৩২ বছরের রেকর্ড ভেঙে যুক্তরাষ্ট্রের ২৩৫ বছরের নির্বাচনি রাজনৈতিক ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় স্মরণীয়। আজ থেকে হোয়াইট হাউজে দ্বিতীয়বারের মতো পথচলা শুরু হবে ট্রাম্পের। ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার শপথ উপলক্ষে ওয়াশিংটনে সাজ সাজ রব। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে পুরো শহর। আর সেই বিশ্বমঞ্চে থাকছেন আমন্ত্রিত বিশ্বনেতারা। ট্রাম্পের শপথকে কেন্দ্র ২ লাখ ২০ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। আর সেখানে থাকছে নৈশভোজ, যার টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ১০ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২ কোটি ১৪ লাখ টাকা)।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিষেক খোলা স্থানে হলেও এবার হবে ভিন্ন আবহে। তীব্র ঠাণ্ডায় কংগ্রেস ভবনের ভেতরে অভিষেক হবে। দ্বিতীয়বারের মতো কংগ্রেস ভবনের রোটুন্ডায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পুরো আয়োজন। ভয়াবহ ঠাণ্ডার কারণে এমনটি করা হচ্ছে বলে শুক্রবার ট্রাম্প নিজেই এ কথা জানিয়েছেন।
মার্কিন আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নিচে নেমে যাবে। কংগ্রেস ভবনের ভেতরে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবার বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম হবেনা বলে জানিয়েছে বিভিন্ন মার্কিন গণমাধ্যম। সেখানে মাত্র ২০ হাজার অতিথির বসার স্থান রয়েছে। বাইরে থাকবে দুই লাখের বেশি অতিথি। যারা টিকিট পাননি, তারা ন্যাশনাল মলে বড় স্ক্রিনে অনুষ্ঠান সরাসরি উপভোগ করতে পারবেন। শপথের পর ট্রাম্প ক্যাপিটাল থেকে হোয়াইট হাউজে একটি জমকালো প্যারেডের মাধ্যমে যাত্রা করবেন।
ট্রাম্পের সম্মানে আয়োজিত কুচকাওয়াজও হবে ক্যাপিটাল রোটুন্ডায়। এবারই প্রথম নয়, এর আগে ১৯৮৫ সালে ক্যাপিটাল ভবনের ভেতরে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন রোনাল্ড রিগ্যান। তখনো তীব্র ঠাণ্ডায় শপথ অনুষ্ঠান ক্যাপিটলের রোটুন্ডায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তখন হঠাতই হিমাঙ্কের পারদ নেমে পড়ে মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী নতুন প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শুরু হয় ২০ জানুয়ারি দুপুর ১২টায় (যদি তা রবিবার পড়ে, তবে পরের দিন)। সাধারণত, শপথগ্রহণ পরিচালনা করবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাম্পের জন্য শপথগ্রহণ পরিচালনা করবেন।
ট্রাম্পের এই শপথ অনুষ্ঠানে ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, মার্ক জাকারবার্গ এবং টিকটকের প্রধান নির্বাহী শৌ চিউসহ আরও অনেকে ভিআইপি আসনে থাকবেন। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বারাক ওবামা উপস্থিত থাকবেন। অন্য সাবেক প্রেসিডেন্টদের স্ত্রীরা উপস্থিত থাকলেও মিশেল ওবামা আসবেন না। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটন এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও উপস্থিত থাকবেন।
প্রথাগতভাবে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো না হলেও ট্রাম্প ইতালি ও হাঙ্গেরির ডানপন্থী নেত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও ভিক্টর অরবান, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ার মিলেই এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণ প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকা দলের (ট্রানজিশন টিম) পক্ষ থেকে এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে ও ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়াকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বুকেলে থাকবেন কিনা, এখনো নিশ্চিত নয়। তবে ওয়াশিংটনে সংক্ষিপ্ত সফরকালে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন নোবোয়া। অনুষ্ঠানে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারোকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করে ট্রাম্প জয়লাভ করেন। ট্রাম্পের এই ভূমিধস জয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এক স্মরণীয় ইতিহাস হয়ে থাকবে।
এর আগে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো আমেরিকার মসনদে বসেছিলেন ট্রাম্প।