বন্ধ হচ্ছে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ

সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ৯ মাস

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশ: ১০:৪৯:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫
  • ১০৭ বার পঠিত হয়েছে

সেন্টমার্টিন

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের যাত্রা ৯ মাসের জন্য বন্ধ হচ্ছে শনিবার থেকে। সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মতে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে। বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ফেব্রুয়ারিতে পর্যটকদের সেন্টমার্টিন দ্বীপে আসতে দেওয়ার দাবি জানালেও সরকারের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়নি।

এর আগে যথাসময়ে জাহাজ চলাচলের অনুমতি না পাওয়ায় গত নভেম্বরে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যাওয়ার সুযোগ পাননি। মূলত ১ ডিসেম্বর থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি মিললে ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাওয়া শুরু করেন পর্যটকরা। আজ দ্বীপটিতে ভ্রমণের শেষ দিন। ফলে জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল দ্বীপবাসীকে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি- এ দুই মাসের আয়ে চলতে হবে আগামী ৯ মাস।

দেশের সর্ব দক্ষিণের উপজেলা টেকনাফের একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এই সেন্টমার্টিন। কক্সবাজার থেকে সমুদ্রপথে প্রায় ছয় ঘণ্টার জাহাজ যাত্রা শেষে দ্বীপটিতে পৌঁছাতে হয় ভ্রমণপিপাসুদের। সরকারের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পর্যটকদের সেই দ্বীপে ভ্রমণে যেতে অপেক্ষা করতে হবে ৯ মাস।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রতি বছর ১ অক্টোবর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পর্যটকরা যাতায়াত করার সুযোগ পান। কিন্তু চলতি মৌসুমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে পর্যটক সীমিতকরণসহ নানা বিধিনিষেধ জারি করা হয়। এর মধ্যে ছিল নভেম্বরে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন, কিন্তু রাত্রি যাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ২ হাজার পর্যটক যেতে পারবেন ও রাত্রি যাপন করতে পারবেন আর ফেব্রুয়ারিতে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন না। কিন্তু যথাসময়ে জাহাজ চলাচলের অনুমতি না পাওয়ায় নভেম্বরে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যাওয়ার সুযোগ পাননি।

মূলত ১ ডিসেম্বর থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি মিললে ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাওয়ার সুযোগ পান পর্যটকরা।

মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মতে, ৩১ জানুয়ারি চলতি পর্যটন মৌসুমে সেন্টমার্টিন যাত্রার শেষ দিন। যার কারণে শনিবার থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাত্রা করবে না।

এদিকে সরকারের এই সিদ্ধান্তে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দ্বীপের বাসিন্দারা। তাদের মতে, সরকার তিন মাস পর্যটক যাতায়াতের অনুমতি দিলেও ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই দুই মাসের আয় দিয়ে দ্বীপবাসীকে আগামী ৯ মাস চলতে হবে। কারণ, নভেম্বরে জাহাজ চলেনি।

দ্বীপের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, ২ মাসের আয় দিয়ে সেন্টমার্টিনবাসীর বছরের বাকি দিনগুলো চলা সম্ভব নয়। এজন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দ্বীপ উন্মুক্ত রাখার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু সরকার দ্বীপবাসীর কথা ভাবেনি। তারা তাদের সিদ্ধান্তেই অটল রয়েছে।

সেন্টমার্টিন হোটেল-মোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম জিহাদী বলেন, অতীতে এমন সংকট দ্বীপে তৈরি হয়নি। এখন যদি দ্বীপে পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে নানামুখী সংকটে পড়বেন বাসিন্দারা। দ্বীপের বাসিন্দাদের মূল পেশা পর্যটন সেবা। এখন যদি সেটাই দুই মাসের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় তখন দ্বীপবাসীকে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, সেন্টমার্টিনে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ। তাই মানবিক বিবেচনায় পর্যটকদের জন্য আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেন্টমার্টিন দ্বীপ উন্মুক্ত করার দাবি তোলা হয়েছিল।

সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর সাংবাদিকদের বলেন, অন্তত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য সেন্টমার্টিন উন্মুক্ত রাখার অনুরোধ করেছিলাম আমরা। এতে ক্ষতিটা অনেকাংশে পুষিয়ে নেওয়া যেত।

এদিকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সময় বাড়ানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসাইন সজীব সাংবাদিকদের বলেন, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেন্টমার্টিনগামী জাহাজগুলো চলাচল করতে পারবে। এরপর আর পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করতে দেওয়া হবে না।

প্রসঙ্গত, ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সেন্টমার্টিন দ্বীপে বাস করেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। যাদের প্রধান জীবিকা পর্যটন সেবা। অল্পসংখ্যক মানুষ মাছ শিকার ও অন্য পেশায় রয়েছেন। পর্যটন ঘিরে এই দ্বীপে গড়ে উঠেছে দেড়শতাধিক হোটেল-রিসোর্ট।

বন্ধ হচ্ছে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ

সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ৯ মাস

প্রকাশ: ১০:৪৯:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের যাত্রা ৯ মাসের জন্য বন্ধ হচ্ছে শনিবার থেকে। সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মতে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে। বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ফেব্রুয়ারিতে পর্যটকদের সেন্টমার্টিন দ্বীপে আসতে দেওয়ার দাবি জানালেও সরকারের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়নি।

এর আগে যথাসময়ে জাহাজ চলাচলের অনুমতি না পাওয়ায় গত নভেম্বরে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যাওয়ার সুযোগ পাননি। মূলত ১ ডিসেম্বর থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি মিললে ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাওয়া শুরু করেন পর্যটকরা। আজ দ্বীপটিতে ভ্রমণের শেষ দিন। ফলে জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল দ্বীপবাসীকে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি- এ দুই মাসের আয়ে চলতে হবে আগামী ৯ মাস।

দেশের সর্ব দক্ষিণের উপজেলা টেকনাফের একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এই সেন্টমার্টিন। কক্সবাজার থেকে সমুদ্রপথে প্রায় ছয় ঘণ্টার জাহাজ যাত্রা শেষে দ্বীপটিতে পৌঁছাতে হয় ভ্রমণপিপাসুদের। সরকারের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পর্যটকদের সেই দ্বীপে ভ্রমণে যেতে অপেক্ষা করতে হবে ৯ মাস।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রতি বছর ১ অক্টোবর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পর্যটকরা যাতায়াত করার সুযোগ পান। কিন্তু চলতি মৌসুমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে পর্যটক সীমিতকরণসহ নানা বিধিনিষেধ জারি করা হয়। এর মধ্যে ছিল নভেম্বরে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন, কিন্তু রাত্রি যাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ২ হাজার পর্যটক যেতে পারবেন ও রাত্রি যাপন করতে পারবেন আর ফেব্রুয়ারিতে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন না। কিন্তু যথাসময়ে জাহাজ চলাচলের অনুমতি না পাওয়ায় নভেম্বরে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যাওয়ার সুযোগ পাননি।

মূলত ১ ডিসেম্বর থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি মিললে ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাওয়ার সুযোগ পান পর্যটকরা।

মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মতে, ৩১ জানুয়ারি চলতি পর্যটন মৌসুমে সেন্টমার্টিন যাত্রার শেষ দিন। যার কারণে শনিবার থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাত্রা করবে না।

এদিকে সরকারের এই সিদ্ধান্তে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দ্বীপের বাসিন্দারা। তাদের মতে, সরকার তিন মাস পর্যটক যাতায়াতের অনুমতি দিলেও ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই দুই মাসের আয় দিয়ে দ্বীপবাসীকে আগামী ৯ মাস চলতে হবে। কারণ, নভেম্বরে জাহাজ চলেনি।

দ্বীপের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, ২ মাসের আয় দিয়ে সেন্টমার্টিনবাসীর বছরের বাকি দিনগুলো চলা সম্ভব নয়। এজন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দ্বীপ উন্মুক্ত রাখার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু সরকার দ্বীপবাসীর কথা ভাবেনি। তারা তাদের সিদ্ধান্তেই অটল রয়েছে।

সেন্টমার্টিন হোটেল-মোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম জিহাদী বলেন, অতীতে এমন সংকট দ্বীপে তৈরি হয়নি। এখন যদি দ্বীপে পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে নানামুখী সংকটে পড়বেন বাসিন্দারা। দ্বীপের বাসিন্দাদের মূল পেশা পর্যটন সেবা। এখন যদি সেটাই দুই মাসের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় তখন দ্বীপবাসীকে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, সেন্টমার্টিনে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ। তাই মানবিক বিবেচনায় পর্যটকদের জন্য আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেন্টমার্টিন দ্বীপ উন্মুক্ত করার দাবি তোলা হয়েছিল।

সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর সাংবাদিকদের বলেন, অন্তত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য সেন্টমার্টিন উন্মুক্ত রাখার অনুরোধ করেছিলাম আমরা। এতে ক্ষতিটা অনেকাংশে পুষিয়ে নেওয়া যেত।

এদিকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সময় বাড়ানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসাইন সজীব সাংবাদিকদের বলেন, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেন্টমার্টিনগামী জাহাজগুলো চলাচল করতে পারবে। এরপর আর পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করতে দেওয়া হবে না।

প্রসঙ্গত, ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সেন্টমার্টিন দ্বীপে বাস করেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। যাদের প্রধান জীবিকা পর্যটন সেবা। অল্পসংখ্যক মানুষ মাছ শিকার ও অন্য পেশায় রয়েছেন। পর্যটন ঘিরে এই দ্বীপে গড়ে উঠেছে দেড়শতাধিক হোটেল-রিসোর্ট।