কয়রা(খুলনা)ঃ বাঁধ ভাঙ্গার আতংকে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে কয়রাবাসী। দিনে রাতে কাজ করেও শেষ রক্ষা হলনা। অবশেষে প্রানপন চেষ্টা ব্যার্থ হয়ে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনার কয়রা উপজেলার ৩টি জায়গার বাঁধ ভেঙে অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ভেসে গেছে প্রায় ৫ শতাধিক চিংড়ির ঘের, ভেঙে গেছে কয়েকশ’ কাঁচা ঘরবাড়ি ও দোকানপাট।
এ ছাড়া রাতজুড়ে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ের তাণ্ডবে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। এতে ২ হাজার ঘরবাড়ি সম্পুর্ন বিধস্থ হওয়ার পাশাপাশি হাজার হাজার ঘড়বাড়ি আংশিক ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পাউবো সূত্রে জানা গেছে, রোববার রাতে জোয়ারের তীব্র চাপে মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সিংহেরকোণা, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বেলাল গাজীর বাড়ির সামনের বাঁধ ভেঙে ষায়। স্থানীয়রা জানান, বাঁধের দুর্বল অংশের ওই ৩টি স্থানে প্রায় ১৫০ মিটার ভেঙে নদীর নোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে এলাকা।এ ছাড়া বাঁধের নিচু কয়েকটি জায়গা ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এসব জায়গায় এলাকার মানুষ রাতভর মেরামত কাজ চালিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। এ ছাড়া কয়রা উপজেলার সুতিবাজার, ৪নং কয়রা ক্লোজার, ৬নং কয়রা, কাটকাটা,জোড়শিং,গাববুনিয়া, খাশিটানা, গোলখালী, ২নং কয়রা মুচির বাড়ি সংলগ্ন, মদিনা বাদ লঞ্চ ঘাট,কাটকাটা , হরিনখোলা, চোরামুখা, মঠবাড়ি, তেতুলতলারচর সহ আরও অনেক এলাকার পাউবোর বেড়িবাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। সেখানকার অধিবাসীরা রাত জেগে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে কোন রকম টিকিয়ে রেখেছে বাঁধ। তার পরেও বাঁধ ভাঙ্গার আতংকে রয়েছে এলাকাবাসী। মহারাজপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, রোববার রাতের জোয়ারের চাপে ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় প্রায় ৫০ মিটার বাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষ নদের পানি ঢুকে পড়ে। এতে অন্তত দুটি গ্রাম ও কয়েকশ’ চিংড়ির ঘের তলিয়ে যায়,ওই গ্রামের অনেক পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে ।মহেশ্বরীপুরের ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারি বলেন, ইউনিয়নের সিংহেরকোণা এলাকায় বাঁধ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া নয়ানি এলাকার বাঁধের নিচু জায়গা ছাপিয়ে সারারাত পানি ঢুকেছে। এতে অন্তত ৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া অসংখ্য চিংড়ি ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ঝড়ের তাণ্ডব ও ভারী বৃষ্টিতে কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে শতাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী জানান, তার ইউনিয়নের মাটিয়াভাঙ্গা এলাকায় রাতের জোয়ারে বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। এতে ২-৩ টি গ্রামে নদীর পানি ঢুকেছে। তবে সেক্ষানকার বাঁধ আটকানো সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় নিচু বাঁধ ছাপিয়ে পানি প্রবেশ করেছে এলাকায়।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব শুরু হওয়ার একদিন আগে থেকে খুলনা ৬ (কয়রা পাইকগাছা) আসনের সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে উপজেলা সদর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঝুকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধ ও সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নেওয়া মানুষের খোঁজখবর নেন। এ সময় সংসদ মহোদয়ের সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরের লোকজন ছিলেন।
এদিকে পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জসীমউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি টিম ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে সাথে নিয়ে গোটা পোল্ডারের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলি মেরামতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে ।
জানতে চাইলে পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মশিউুল আবেদীন ও লিয়াকত আলী বলেন , ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত পাওয়ার পর থেকে স্থানীয় মানুষ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে সাথে নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করা হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বেড়ে যাওয়ায় কয়েকটি স্থানে বাঁধ সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামতের চেষ্টা চলছে।
উপজেলা সুজনের সভাপতি মোস্তফার শফিকুল ইসলাম বলেন,
দুর্যোগের এই ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্তে সংসদ সদস্য সশরীরে উপস্থিত হওায় উপকূল বাসি সাহসীকতার সাথে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। যে কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম হয়েছে। তিনি কপোতক্ষ নদীর তীরে ঝুঁকিপূর্ণ ২ নং কয়রা সুলুইজগেট আশু মেরামতের দাবি জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) বিএম তারিক-উজ-জামান বলেন, কয়েকটি স্থানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। এ ছাড়া ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার তাণ্ডবে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছি। সেগুলো মেরামতের জন্য পাউবোর উর্ধতন কর্তৃপক্ষে নির্দশনা দেওয়া হয়েছে।