ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে খুলনা অঞ্চলের ১৩৩টি স্থানের ১৮.৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব স্থানে বাঁধ ভেঙে লবণ পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে চিংড়ি ঘের, ফসলের ক্ষেতসহ ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে।
গতকাল সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা। জানা গেছে, খুলনার কয়রা ও দাকোপ উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ৫টি জায়গায় বাঁধ ভেঙে অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পাউবো সূত্রে জানা গেছে, রবিবার রাতে জোয়ারের তীব্র চাপে কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সিংহেরকোণা, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ৩ নম্বর
ওয়ার্ড এলাকায় বাঁধ ভেঙে গেছে। স্থানীয়রা জানান, বাঁধের দুর্বল অংশের ওই ৩টি স্থানে প্রায় ১৫০ মিটার ভেঙে নদীর নোনা পানিতে প্লাবিত হয়। তাবিত হয়। এছাড়া জোয়ারের চাপে ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় প্রায় ৫০ মিটার বাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষ নদের পানি ঢুকে পড়ে। এতে অন্তত দুটি গ্রাম ও কয়েকশ চিংড়ির ঘের তলিয়ে গেছে। এছাড়া দাকোপ উপজেলার শিবসা ও ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা তলিয়ে যায়। এতে ভেসে গেছে শতাধিক চিংড়ির ঘের, ভেঙে গেছে কয়েকশ কাঁচা ঘরবাড়ি ও দোকানপাট।
পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন ও লিয়াকত আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত পাওয়ার পর থেকে স্থানীয় মানুষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করা হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বেড়ে যাওয়ায় কয়েকটি স্থানে বাঁধ সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামতের চেষ্টা চলছে। কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) বি এম তারিক-উজ-জামান বলেন, কয়েকটি স্থানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। সেগুলো মেরামতের জন্য পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এদিকে খুলনার পাইকগাছায় অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙে ১০টি ইউনিয়নের হাজার হাজার বিঘার চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকার মৎস্যসম্পদ। উপজেলার সোলাদানা বাজারসংলগ্ন সোলাদানা- পাইকগাছা মেইন সড়কের সুইস গেট নামক স্থানে ভেঙে উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া সোলাদানা ইউনিয়নের ১৩টি স্থান ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এস এম এনামুল হক। এছাড়া উপজেলার গড়ইখালী, দেলুটি, সোলাদানা, লস্কর, লতা ও কপিলমুনি ইউনিয়নের দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণপানিতে প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা দুর্বল বেড়িবাঁধগুলো মেরামত করার চেষ্টা করলেও অতিরিক্ত জোয়ারের পানির চাপে ভেঙে যায়। গড়ইখালী ইউপি চেয়ারম্যান জি এম আব্দুস ছালাম কেক জানান, শিবসা নদীর পাড়ে খুদখালী নামক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ভেঙে যাওয়া স্থানটি জিও ব্যাগ দিয়ে আটকানো হয়েছে।
লস্কর ইউপি চেয়ারম্যান কে এম আরিফুজ্জামান জানান, লস্কর ইউনিয়নে আটটি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মণ্ডল জানান, আমার ইউনিয়নটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ চারটি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। তার মধ্যে ২০, ২০(১) ও ২১ এই তিনটি পোল্ডারে প্রায় ১৩টি স্থান ভেঙে গেছে। লতা ইউপি চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ্বাস জানান, তার ইউনিয়নে হাড়িয়া, লতা ও পুতলাখালীর কয়েক স্থানে ওয়াপদার ভেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সার্বিক সহযোগিতায় ও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। অপরদিকে বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলায় প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে ৭টি গ্রাম প্লাবিত হয় বলে জানা গেছে। মোড়েলগঞ্জের বলাইবুনিয়া ইউনিয়নে শ্রেনীখালী- দৈবজ্ঞকাঠিতে পানগাছী নদী, সদর ইউনিয়নের দড়াটানা নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. খালিদ হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে জেলার শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ ও মোংলা উপজেলায় সব থেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব উপজেলার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পেয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা জানান, প্রাথমিকভাবে খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা এলাকায় ১৩৩টি স্থানের ১৮.৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক স্থানে নদীর পানি উপচে লোকালয়ের প্রবেশ করেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাউবোর কর্মীরা মাঠ তদারকি করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করা হয়েছে।