রমজান মাসে প্রতিটি মুসলমানের জন্য রোজা রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তবে কেউই যদি শরিয়ত সম্মত কোনো কারণ ছাড়াই ইচ্ছাকৃতভাবেই রোজা ভঙ্গ করেন, তাহলেই তাকে কাফফারা দিতে হয় ইসলাম শরীয়ত বিধান অনুযায়ী।
রোজার কাফফারা কী, কেন দিতে হয় এবং কীভাবে আদায় করতে হবে এসব বিষয় নিয়ে আজকের আলোচনা।
রোজার কাফফারা কী?
কাফফারা শব্দের অর্থ হলো “প্রায়শ্চিত্ত” বা “বিনিময়মূলক শাস্তি”। ইসলামে কাফফারা হলো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা ইচ্ছাকৃতভাবেই রোজা ভঙ্গ করার কারণে মুসলমানদের উপরে আরোপিত হয়। এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পাশাপাশি ইসলামের শাস্তিগত বিধান পালনের সুযোগ তৈরি হয়।
কোন কোন অবস্থায় রোজার কাফফারা দিতে হয়?
যেসব ক্ষেত্রে রোজার কাফফারা আবশ্যকতা হয়, সেগুলো হলো—
১. ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করা: কোনো ব্যক্তি যদি রোজা রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার বা পানীয় গ্রহণ করেন, তাহলে তার কাফফারা আদায় করতে হবে।
২. স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক সম্পর্ক: রোজার সময় কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হন, তাহলে তার ওপর কাফফারা আবশ্যক হবে।
৩. কোনো অযৌক্তিক কারণে রোজা ভেঙে ফেলা: অসুস্থতা বা ভ্রমণের মতো বৈধ কারণ ছাড়া কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবেই রোজা ভেঙে ফেলা হয়, তাহলে তাকে কাফফারা দিতে হবে।
রোজার কাফফারা কীভাবে আদায় করতে হয়?
ইসলাম শরিয়ত অনুযায়ী, রোজার কাফফারা আদায়ের তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে প্রথমটি পালন করাই সর্বোত্তম ও প্রাথমিক করণীয়।
১. একাধারে ৬০ দিন রোজা রাখা।
যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করেছেন, তাকে ধারাবাহিকভাবে ৬০ দিন রোজা রাখতে হবে।
মাঝখানে কোনো বিরতি হলে পুনরায় রোজা রাখা শুরু করতে হবে।
২. ৬০ জন দরিদ্রকে আহার করানো
যদি কেউ টানা ৬০ দিন রোজা রাখতে অক্ষম হন, তবে তাকে ৬০ জন গরিব মানুষকে দুই বেলা পরিপূর্ণভাবে আহার করাতে হবে।
৩. একজন ক্রীতদাস মুক্ত করা (বর্তমানে প্রযোজ্য নয়)
অতীতে যদি কারো রোজা ভঙ্গ হতো এবং সে টানা ৬০ দিন রোজা রাখতে অক্ষম হতো, তবে ইসলামী বিধান অনুযায়ী একজন ক্রীতদাসকে মুক্ত করার নির্দেশ ছিল। তবে বর্তমানে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হওয়ায় এটি আর প্রযোজ্য নয়।
রোজার কাফফারা ও কাজার মধ্যে পার্থক্য
অনেকেই কাফফারা এবং কাজা নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। কাজা রোজার ক্ষেত্রে শুধু ভঙ্গ হওয়া দিনের সমপরিমাণ রোজা পুনরায় রাখা হয়। কিন্তু কাফফারার ক্ষেত্রে শাস্তিস্বরূপ অতিরিক্ত রোজা বা খাদ্য দান করতে হয়।
রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। যদি কেউ শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করেন, তবে তার জন্য কাফফারা আবশ্যক হয়ে পড়ে। তাই ইসলামী বিধান অনুযায়ী যথাযথভাবে কাফফারা আদায় করা উচিত, যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।