প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঈদ উপলক্ষ্যে দেশে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। এতে করে চলতি মাস শেষ না হতেই আগের সব রেকর্ড ভেঙে ২৪ দিনে ২৭৫ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।
রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেড়েছে। ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে থাকা রিজার্ভ এখন ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। প্রবাসী আয়ের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসের শেষে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ব্যাংকাররা আশা করছেন।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হুন্ডির ব্যবসা চাঙ্গা ছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর হুন্ডি কমে এসেছে। আবার ব্যাংকিং চ্যানেলেই এখন ডলারের দাম বেশি মিলছে। যে কারণে এখন কেউ ঝুঁকি নিয়ে ভিন্ন পথে দেশে টাকা পাঠাতে চাইছেন না। আড়াই শতাংশ প্রণোদনা আগেও ছিল, এখনো আছে। তাই পাচার ও হুন্ডি কমায় ব্যাংকিং চ্যানেলে বেড়েছে রেমিট্যান্স। এছাড়া দুই ঈদের আগে প্রবাসী আয় বছরের অন্য যে কোনো মাসের চেয়ে বেশি আসে। যেহেতু সামনে ঈদ, তাই প্রবাসীরা তাদের পরিবারের জন্য বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। এসব কারণে প্রবাসী আয়ে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসের ২৪ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৭৫ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময় এসেছিল ১৫৫ কোটি ডলার। সে অনুযায়ী চলতি মাসে ২৪ দিনে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭৭ দশমিক ৬ শতাংশ। আর পুরো মাসে এসেছিল ২০০ কোটি ডলারের কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, অর্থ পাচার প্রতিরোধে বর্তমান সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। আবার ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠিয়ে প্রণোদনাসহ এখন যে পরিমাণ টাকা পাওয়া যাচ্ছে, তা খোলাবাজারের চেয়েও বেশি। সাধারণভাবে হুন্ডির চাহিদা কমলে এমন হয়। অন্যদিকে রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। ফলে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। রিজার্ভও স্থিতিশীল হয়ে এসেছে।
প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত প্রবাসীরা মোট দুই হাজার ১২৪ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল এক হাজার ৬৬২ কোটি ডলার। এ পর্যন্ত রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪৬১ কোটি ডলার, যা ২৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে রেমিট্যান্স বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই ছাড়া সব মাসেই বেড়েছে। এর আগে করোনা ভাইরাসের প্রভাবের কারণে সারা বিশ্বে লকডাউনের মধ্যে একবার এভাবে রেমিট্যান্স বাড়ছিল। ওই সময় হুন্ডি ছিল না বললেই চলে। ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছিল ৩৬ শতাংশের বেশি।
গত মঙ্গলবার দিন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলারে। এর আগে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় বাবদ ১৭৫ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে গত ৯ মার্চ ১৯ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারে নামে। পরিশোধের আগে রিজার্ভ উঠেছিল ২১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে। সরকার পতনের আগে প্রতি মাসে গড়ে ৯০০ মিলিয়ন রিজার্ভ কমছিল। ২০২২ সালের আগস্টে রিজার্ভ উঠেছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারে। গত জুলাই শেষে তা কমে ২০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারে নামে। এর বড় কারণ ছিল, আমদানি দায় পরিশোধের জন্য রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ডলার বিক্রি করছে না। বরং আগের ৩৩০ কোটি ডলার বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে।
প্রবাসী আয় হলো দেশে ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস। কারণ, এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় না অথবা কোনো দায়ও পরিশোধ করতে হয় না। রপ্তানি আয়ের বিপরীতে দেশে ডলার এলেও তার জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে আবার বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয়। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতেও ডলারের প্রয়োজন হয়। ফলে প্রবাসী আয় বাড়লে দেশে ডলারের মজুতও দ্রুত বাড়ে।