জুমুআ আরবি শব্দ অর্থ বাংলায় শুক্রবার এবং ‘বিদা’ অর্থ শেষ। পবিত্র মাহে রমজানের শেষ শুক্রবারকে বলা হয় জুমাতুল বিদা। দিনটি মুসলিমদের উম্মাহর কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, যার কারণ রমজান মাসের শেষ জুমা হিসেবে এটি বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।
পবিত্র রমজান ও জুমার সম্মিলনী দিনটিকে আরো মহিমান্বিত করে তুলেছেন। এদিন মসজিদগুলোতে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা বিশেষ মোনাজাত করেন এবং রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের জন্যই প্রার্থনা করেন। বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায়েরা দিনটিকেই যথাযথ ধর্মীয়ভাবে ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালন করেন।
এছাড়া, দিনটিকেই ‘আল-কুদস দিবস’ হিসেবেও পালন করা হয়, যখন মুসলমানরাই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে সচেতনতা বৃদ্ধি করেন।
জুমার দিন সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে- ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরাই আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদিও তোমরাই উপলব্ধি কর।’- (সূরা আল জুমুআহ: ৯)
জুমার দিন মুসলিমদের জন্যই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। হাদিসে বলা হয়েছে, জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যখন দোয়া করলে তা কবুল হয়। ধারণা করা হয়, এ মুহূর্তটি আসর থেকেই মাগরিবের মাঝামাঝি সময়।
জুমাতুল বিদার বিশেষত্ব
১. রমজানের শেষ জুমা হওয়ার কারণেই এটি বিশেষায়িত ফজিলতপূর্ণ।
২. পবিত্র জুমার দিন হওয়ার কারণে এটি স্বতন্ত্র মর্যাদা সম্পন্ন।
৩. রমজানের শেষ শুক্রবারে মুসলমানরাই পবিত্র মসজিদে আল-আকসা প্রতিষ্ঠার স্মরণেই ‘আল-কুদস দিবস’ পালন করেন।
৪. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিন সর্বোত্তম দিনগুলোর একটি, যেদিন আদি পিতা হযরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয় এবং যেদিনই কেয়ামত সংঘটিত হবে। -(মিশকাত)
জুমার দিনের সুন্নত আমল
১. ভালোভাবেই পবিত্র ভাবে গোসল করা।
২. পবিত্র পরিষ্কার পোশাক পরা করা।
৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৪. মসজিদেই আগে গিয়ে বসা।
৫. ইমামের কাছাকাছিই বসে খুতবা গুরুত্বপূর্ণভাবে শোনা।
৬. বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করা।
৭. দুই খুতবার মাঝেই নীরবতা থাকা।
৮. ফজরের পর থেকে বেশি-বেশি ইস্তেগফার ও জিকির করা।
জুমার নামাজের গুরুত্ব
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে ভালোভাবেই গোসল করবে, আগে আগেই মসজিদেই যাবে, ইমামের কাছাকাছি বসবে, মনোযোগ সহকারেই খুতবা শুনবে এবং কোনো অনর্থক কাজ করবেনা, সে ব্যক্তি প্রতিটি কদমের বিনিময়ে এক বছর নামাজ ও রোজার সওয়াব লাভ করবে।’- (সুনানে ইবনে মাজাহ, সুনানে আবু দাউদ)
জুমাতুল বিদা শুধু পবিত্র রমজানের শেষ শুক্রবার নয়, এটি আত্মশুদ্ধির এক অনন্য সুযোগ। মুসলমানদের উচিত এদিন বেশি বেশিই ইবাদত করা, গরিব-দুঃখীদের সহায়তা করা এবং নিজেদের আত্মশুদ্ধির জন্যই দোয়া করা। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে এই ফজিলতপূর্ণ দিনের সঠিক মর্যাদা বোঝার এবং যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন আমিন।