বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল শনিবার রাতে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
রাত ৮টায় শুরু হওয়া বৈঠক শেষে সরকারের মুখপাত্র আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেন।
বৈঠকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে চলমান বিচার এবং সামগ্রিক রাজনৈতিক অস্থিরতা পর্যালোচনা করা হয়। এরপরই সরকার এই ‘সাময়িক নিষেধাজ্ঞা’র সিদ্ধান্ত নেয়।
সরকারি ব্যাখ্যা
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, “জাতীয় নিরাপত্তা, আইনের শাসন ও বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার স্বার্থে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও নির্বাচনী কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।”
আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া
দলটির পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ। একটি দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে সরকার যে ফ্যাসিবাদী মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে, তা জাতি মনে রাখবে।”
রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা
নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ কর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। ঢাকা, গাজীপুর, বরিশাল ও রাজশাহীতে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং রাজধানীতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা মোতায়েন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও পর্যবেক্ষণ
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে বলে জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি দেশের ইতিহাসে এক ‘টার্নিং পয়েন্ট’। অনেকে এটিকে ২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত সরকারের সময়ের সঙ্গে তুলনা করছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন, এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রাজনীতিকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে।