বরিশাল ও নোয়াখালীতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ

সারা দেশে ভারীবর্ষণ, ১১ জেলা বন্যার শঙ্কা

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশ: ১১:৫৩:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
  • ৬৪ বার পঠিত হয়েছে

Photo taken in Chilmari, Bangladesh

গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সারাদিন রাজধানীসহ সারাদেশে মাঝারি থেকে ভারী ও অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে। সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে এবং বেড়েছে নদনদীর পানির উচ্চতা।

রাতে অমাবস্যা ও গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় অন্তত ১৪ জেলার বিভিন্ন স্থানে এক থেকে তিন ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের যে শঙ্কা ছিল স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করায় তা কেটে গেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিভিন্ন নৌরুটে লঞ্চ ও ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কুমিল্লা ও পটুয়াখালীতে এরই মধ্যে বন্যা দেখা দিয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বৃহস্পতিবারের সর্বশেষ সন্ধ্যা ৬টার ৪ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রমরত গভীর নিম্নচাপটি আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করেছে। এটি বর্তমানে সাতক্ষীরা ও তদসংলগ্ন এলাকায় স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি উত্তর কিংবা উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে।

এতে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরসমূহের ওপর দিয়ে দমকা কিংবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ তরিকুল নেওয়াজ কবির বলেন, শুক্রবারও এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে ও সারাদেশে বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া সন্ধ্যার পর থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের চেয়ে ঢাকায় ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা প্রবল।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে নোয়াখালীর মাইজদীতে ১৬৮ মিলিমিটার আর রাজধানীতে বৃষ্টি হয়েছে ৮২ মিলিমিটার।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আজ শুক্রবার পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে – রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা এবং ফেনী।

বিশেষভাবে ফেনীর মুহুরি নদী এবং রংপুর বিভাগের তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। একইভাবে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের নদনদী যেমনÑ সারিগোয়াইন, মনু, জাদুকাটা, খোয়াই এবং সোমেশ্বরী নদীর পানি দ্রুত বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নিঝুমদ্বীপসহ হাতিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

হাতিয়া প্রতিনিধি জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও লঘুচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারে ইতোমধ্যে নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপসহ নিম্নঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে বেড়িবাঁধের বাইরে মানুষের বাড়িঘর ও দোকানপাট। নদী ও সমুদ্রে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বলবৎ থাকায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাময়িকভাবে হাতিয়ার সঙ্গে সব ধরনের নৌ-যাতায়াত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সকাল থেকে নিম্নচাপের প্রভাবে হাতিয়ায় দমকা ও ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। নদী ও সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। দুপুরের জোয়ারে পানির উচ্চতা বেড়ে নলচিরা ঘাট এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে, নিঝুমদ্বীপ, চরঘাসিয়া ও ঢালচরসহ নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

নলচিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, জোয়ারের স্রোতে ও ঢেউয়ের আঘাতে শরিফ টি স্টোর, খালেকের চা দোকানসহ ঘাটের পাঁচ-ছয়টি দোকানঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেলা ১১টার পর আসা জোয়ারে এসব ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘাট এলাকার প্রধান সড়কের ওপর তিন ফুট উচ্চতায় পানি ওঠে। এ ছাড়া অতিরিক্ত জোয়ারে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার শাহেদ উদ্দিন জানান, দ্বীপের ১, ২, ৩ ও ৭, ৮, ৯ ওয়ার্ডসহ অধিকাংশ এলাকা অস্বাভাবিক জোয়ারে তলিয়ে যায়। মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে। অনেকের ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় রান্নাবান্না বন্ধ থাকে। নামার বাজার এলাকার ব্যবসায়ী জামসেদ উদ্দিন বলেন, নামার বাজারসহ আশপাশের সব রিসোর্ট তলিয়ে গেছে।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আমার দেশকে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও নিম্নাঞ্চলে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছেন। এ বিষয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। ত্রাণ পেলেই দুর্গতদের মধ্যে দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হবে।

রাজশাহী অফিস জানায়, টানা বৃষ্টিতে রাজশাহী, চাঁপাইনবাগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ অঞ্চলের বিভিন্ন নিচু বিলের পাকা ধান তলিয়ে গেছে। এতে চোখে-মুখে হতাশার ছাপ চাষিদের। ফসলগুলো জমিতেই পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলেন, একদিকে শ্রমিক সংকট, অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়া। দুইয়ে মিলে যেন গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে ধানসহ বিভিন্ন ফসল। আবার পাকা ধানগুলো কাটতে পারলেও তা মাড়াই করার সুযোগ নেই। কারণ রোদ না থাকায় সেগুলো শুকানো যাচ্ছে না।

কুমিল্লায় বন্যার শঙ্কা

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, আবার বন্যার আশঙ্কা করছেন কুমিল্লার বাসিন্দারা। মাঝারি বৃষ্টিতেই জেলার অধিকাংশ নদী ও খালে অস্বাভাবিক পানিপ্রবাহ দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এ ছাড়া উজানে অতি ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল এবং গত বছরের মতো ভারতের ত্রিপুরায় গোমতী নদীর ডুম্বুর বাঁধ খুলে দিলেই তলিয়ে যেতে পারে কুমিল্লা ও ফেনী বেশ কয়েকটি উপজেলা।

এদিকে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি গত বছরের মতোই নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চল দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, যা সেই সময় ভয়াবহ বন্যা তৈরি করেছিল। তার মতে, ২৮ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকায় টানা বৃষ্টিপাত হতে পারে।

বরিশালে লঞ্চ চলাচল বন্ধ

বরিশাল অফিস জানায়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে বুধবার রাত থেকেই বরিশালে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে । ইতোমধ্যে সাগরের ৩ নম্বর এবং নদীপথে ২ নম্বর নৌ -হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করা হয়েছে। এ কারণে সকাল থেকেই বরিশালের অভ্যন্তরীণ ১৮টি রুটে সব ধরনের নৌযান ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ বন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম রেজা।

এ ছাড়া বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের ছয় নদীর পানি। টানা বর্ষণ ও নদীর পানি বাড়ায় বরিশালের নিম্নাঞ্চলসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলার উপকূলবর্তী নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশালের পানি অনুসন্ধান বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম বলেন, বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর ১২টি পয়েন্টের মধ্যে ছয়টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য নদীগুলোর পানিও বিপৎসীমার কাছাকাছি। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বাকি ছয়টি নদীর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূল উত্তাল হয়ে উঠেছে। জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে তিন-চার ফুট বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলে আঘাত হানছে। সকাল থেকে কক্সবাজার শহরে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মাঝেমধ্যে দমকা হাওয়াও বয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের আশপাশ ও উপকূলীয় এলাকায় দমকা হাওয়ার প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর ও উপকূলীয় এলাকাকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে।

জনপ্রিয় টার্গেট

ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে ইসরাইলের হামলা: ইস্পাহান ও তেহরানে বিস্ফোরণ

বরিশাল ও নোয়াখালীতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ

সারা দেশে ভারীবর্ষণ, ১১ জেলা বন্যার শঙ্কা

প্রকাশ: ১১:৫৩:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সারাদিন রাজধানীসহ সারাদেশে মাঝারি থেকে ভারী ও অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে। সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে এবং বেড়েছে নদনদীর পানির উচ্চতা।

রাতে অমাবস্যা ও গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় অন্তত ১৪ জেলার বিভিন্ন স্থানে এক থেকে তিন ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের যে শঙ্কা ছিল স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করায় তা কেটে গেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিভিন্ন নৌরুটে লঞ্চ ও ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কুমিল্লা ও পটুয়াখালীতে এরই মধ্যে বন্যা দেখা দিয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বৃহস্পতিবারের সর্বশেষ সন্ধ্যা ৬টার ৪ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রমরত গভীর নিম্নচাপটি আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করেছে। এটি বর্তমানে সাতক্ষীরা ও তদসংলগ্ন এলাকায় স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি উত্তর কিংবা উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে।

এতে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরসমূহের ওপর দিয়ে দমকা কিংবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ তরিকুল নেওয়াজ কবির বলেন, শুক্রবারও এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে ও সারাদেশে বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া সন্ধ্যার পর থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের চেয়ে ঢাকায় ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা প্রবল।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে নোয়াখালীর মাইজদীতে ১৬৮ মিলিমিটার আর রাজধানীতে বৃষ্টি হয়েছে ৮২ মিলিমিটার।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আজ শুক্রবার পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে – রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা এবং ফেনী।

বিশেষভাবে ফেনীর মুহুরি নদী এবং রংপুর বিভাগের তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। একইভাবে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের নদনদী যেমনÑ সারিগোয়াইন, মনু, জাদুকাটা, খোয়াই এবং সোমেশ্বরী নদীর পানি দ্রুত বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নিঝুমদ্বীপসহ হাতিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

হাতিয়া প্রতিনিধি জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও লঘুচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারে ইতোমধ্যে নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপসহ নিম্নঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে বেড়িবাঁধের বাইরে মানুষের বাড়িঘর ও দোকানপাট। নদী ও সমুদ্রে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বলবৎ থাকায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাময়িকভাবে হাতিয়ার সঙ্গে সব ধরনের নৌ-যাতায়াত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সকাল থেকে নিম্নচাপের প্রভাবে হাতিয়ায় দমকা ও ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। নদী ও সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। দুপুরের জোয়ারে পানির উচ্চতা বেড়ে নলচিরা ঘাট এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে, নিঝুমদ্বীপ, চরঘাসিয়া ও ঢালচরসহ নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

নলচিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, জোয়ারের স্রোতে ও ঢেউয়ের আঘাতে শরিফ টি স্টোর, খালেকের চা দোকানসহ ঘাটের পাঁচ-ছয়টি দোকানঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেলা ১১টার পর আসা জোয়ারে এসব ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘাট এলাকার প্রধান সড়কের ওপর তিন ফুট উচ্চতায় পানি ওঠে। এ ছাড়া অতিরিক্ত জোয়ারে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার শাহেদ উদ্দিন জানান, দ্বীপের ১, ২, ৩ ও ৭, ৮, ৯ ওয়ার্ডসহ অধিকাংশ এলাকা অস্বাভাবিক জোয়ারে তলিয়ে যায়। মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে। অনেকের ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় রান্নাবান্না বন্ধ থাকে। নামার বাজার এলাকার ব্যবসায়ী জামসেদ উদ্দিন বলেন, নামার বাজারসহ আশপাশের সব রিসোর্ট তলিয়ে গেছে।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আমার দেশকে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও নিম্নাঞ্চলে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছেন। এ বিষয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। ত্রাণ পেলেই দুর্গতদের মধ্যে দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হবে।

রাজশাহী অফিস জানায়, টানা বৃষ্টিতে রাজশাহী, চাঁপাইনবাগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ অঞ্চলের বিভিন্ন নিচু বিলের পাকা ধান তলিয়ে গেছে। এতে চোখে-মুখে হতাশার ছাপ চাষিদের। ফসলগুলো জমিতেই পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলেন, একদিকে শ্রমিক সংকট, অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়া। দুইয়ে মিলে যেন গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে ধানসহ বিভিন্ন ফসল। আবার পাকা ধানগুলো কাটতে পারলেও তা মাড়াই করার সুযোগ নেই। কারণ রোদ না থাকায় সেগুলো শুকানো যাচ্ছে না।

কুমিল্লায় বন্যার শঙ্কা

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, আবার বন্যার আশঙ্কা করছেন কুমিল্লার বাসিন্দারা। মাঝারি বৃষ্টিতেই জেলার অধিকাংশ নদী ও খালে অস্বাভাবিক পানিপ্রবাহ দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এ ছাড়া উজানে অতি ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল এবং গত বছরের মতো ভারতের ত্রিপুরায় গোমতী নদীর ডুম্বুর বাঁধ খুলে দিলেই তলিয়ে যেতে পারে কুমিল্লা ও ফেনী বেশ কয়েকটি উপজেলা।

এদিকে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি গত বছরের মতোই নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চল দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, যা সেই সময় ভয়াবহ বন্যা তৈরি করেছিল। তার মতে, ২৮ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকায় টানা বৃষ্টিপাত হতে পারে।

বরিশালে লঞ্চ চলাচল বন্ধ

বরিশাল অফিস জানায়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে বুধবার রাত থেকেই বরিশালে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে । ইতোমধ্যে সাগরের ৩ নম্বর এবং নদীপথে ২ নম্বর নৌ -হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করা হয়েছে। এ কারণে সকাল থেকেই বরিশালের অভ্যন্তরীণ ১৮টি রুটে সব ধরনের নৌযান ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ বন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম রেজা।

এ ছাড়া বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের ছয় নদীর পানি। টানা বর্ষণ ও নদীর পানি বাড়ায় বরিশালের নিম্নাঞ্চলসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলার উপকূলবর্তী নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশালের পানি অনুসন্ধান বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম বলেন, বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর ১২টি পয়েন্টের মধ্যে ছয়টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য নদীগুলোর পানিও বিপৎসীমার কাছাকাছি। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বাকি ছয়টি নদীর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূল উত্তাল হয়ে উঠেছে। জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে তিন-চার ফুট বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলে আঘাত হানছে। সকাল থেকে কক্সবাজার শহরে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মাঝেমধ্যে দমকা হাওয়াও বয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের আশপাশ ও উপকূলীয় এলাকায় দমকা হাওয়ার প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর ও উপকূলীয় এলাকাকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে।