একজন ব্রিটিশ নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্রে অভিযুক্ত করা হয়েছে অভিযোগ অনুযায়ী তিনি চীনের কাছে “সংবেদনশীল মার্কিন সামরিক প্রযুক্তি” পাচারের চেষ্টা করেছিলেন। এই প্রযুক্তির মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান প্রতিরক্ষা রাডার এবং ড্রোনের মতো উপাদান রয়েছে।
৬৩ বছর বয়সী জন মিলার এবং ৪৩ বছর বয়সী চীনা নাগরিক কুই গুয়াংহাই-এর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তঃরাজ্য পর্যায়ে নজরদারি চালানো এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনসহ চক্রান্ত ও চোরাচালানের অভিযোগ আনা হয়েছে। এফবিআই তাদের খুঁজছে।
জন মিলার, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা, এবং কুই দুজনেই সার্বিয়াতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। বর্তমানে তারা সেখানেই আছেন এবং তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যার্পণ করা হতে পারে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে, গ্রেপ্তারের পর থেকে তারা একজন ব্রিটিশ নাগরিককে কনসুলার সহায়তা দিচ্ছে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
আদালতের নথিপত্র থেকে জানা গেছে, দুই ব্যক্তি এমন একটি যন্ত্র রপ্তানির উপায় নিয়ে আলোচনা করেছিলেন যা এনক্রিপশন (গোপন বার্তা পাঠানো) ও ডিক্রিপশনের (বার্তার পাঠোদ্ধার) কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। তারা ওই যন্ত্রের জন্য ১০,০০০ ডলার (প্রায় ৭,৪৩০ পাউন্ড) আগাম অর্থও প্রদান করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মি. মিলার ও মি. কুই-এর বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত একজন চীনা সরকারের বিরোধী বিক্ষোভকারীর ওপর হয়রানি চালানোর চেষ্টা করেছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে ঐ ব্যক্তির গাড়িতে গোপনে ট্র্যাকিং ডিভাইস বসানো এবং গাড়ির টায়ার কেটে দেওয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের উপ অ্যাটর্নি জেনারেল টড ব্লাঞ্চ এ ঘটনাকে “যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি এক স্পষ্ট আঘাত” হিসেবে আখ্যা দেন।
তিনি আরো বলেন, “এই বিচার বিভাগ মার্কিন মাটিতে বিদেশি দমননীতি সহ্য করবে না, এবং শত্রু রাষ্ট্রগুলোকে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশ বা অপব্যবহার করতে দেবে না।”
যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে মি. মিলারকে অস্ত্র রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আইনের লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড এবং চোরাচালানের জন্য ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
আদালতের দলিলে বলা হয়েছে, দুই ব্যক্তি মার্কিন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম-যেমন ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান প্রতিরক্ষা রাডার, ড্রোন এবং ক্রিপ্টোগ্রাফিক যন্ত্র-অবৈধভাবে চীনে রপ্তানির পরিকল্পনা করেছিলেন।
মি. কুই ও মি. মিলার, “ইনডিভিজুয়াল ৫” ও “ইনডিভিজুয়াল ৬” নামের দুই ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করেন কীভাবে এই এনক্রিপশন যন্ত্রটি চীনে পাঠানো যায়।
এই প্রযুক্তি চোরাচালানে তারা যেসব উপায় নিয়ে আলোচনা করেন, তার মধ্যে ছিল ছোট ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, একটি ব্লেন্ডার এবং মোটর স্টার্টার ব্যবহার।
আরো বলা হয়েছে, এই দুই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা আরও দুই ব্যক্তিকে (যাদের দলিলে “ইনডিভিজুয়াল ১” ও “ইনডিভিজুয়াল ২” বলা হয়েছে) একটি ষড়যন্ত্রে যুক্ত করেছিলেন, যার লক্ষ্য ছিল চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ২০২৩ সালের নভেম্বরে লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনে অংশগ্রহণের বিরোধিতা করা এক বিক্ষোভকারীকে বাধা দেওয়া।
কিন্তু মিলার ও কুই জানতেন না, এই দুই ব্যক্তি আসলে এফবিআইয়ের নির্দেশে কাজ করছিলেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার কেন্দ্রীয় জেলার ইউএস অ্যাটর্নি বিল এসেইলি বলেন, “অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, চীনা বিদেশি এজেন্টরা একজন মার্কিন নাগরিককে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিলেন, কারণ তিনি চীনা সরকার ও তাদের প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করেছিলেন।”
“আমার অফিস মার্কিন মাটিতে বিদেশি নাগরিকদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে সব আইনগত উপায় ব্যবহার করবে।”
একই ধরনের আরেকটি পরিকল্পনা ২০২৫ সালের বসন্তে সামনে আসে। তখন ওই ভুক্তভোগী ঘোষণা দেন, তিনি প্রেসিডেন্ট শি ও তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে তৈরি দুটি নতুন ভাস্কর্য প্রকাশ করবেন।
এই ঘোষণার পর মি. কুই ও মি. মিলার আরও দুই ব্যক্তিকে (ইনডিভিজুয়াল ৩ ও ৪ নামে চিহ্নিত) ৩৬,০০০ ডলার (প্রায় ২৬,৭৪৫ পাউন্ড) প্রদান করেন, যেন তারা ভুক্তভোগীকে এই শিল্পকর্ম অনলাইনে প্রকাশ করা থেকে বিরত রাখেন।
কিন্তু, আদালতের দলিলে বলা হয়েছে, এই দুই ব্যক্তিও এফবিআইয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং তাদের নির্দেশেই কাজ করছিলেন।
বর্তমানে কুই ও মিলার সার্বিয়ায় অবস্থান করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সার্বিয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের প্রত্যার্পণ (প্রত্যর্পণ) নিয়ে সমন্বয় করছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার কেন্দ্রীয় জেলার ইউএস অ্যাটর্নি অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “একটি অভিযোগপত্র কেবল একটি অভিযোগ; যতক্ষণ না আদালতে অপরাধ প্রমাণিত হচ্ছে, অভিযুক্তদের নির্দোষ বলে ধরে নেওয়া হয়।”