কুরবানির মাংস বিক্রি ও কেনা জায়েজ কিনা?

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশ: ০৬:১৫:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জুন ২০২৫
  • ৮১ বার পঠিত হয়েছে

ঈদুল আযহার অন্যতম মূল অনুষঙ্গ হলো কুরবানি। সামর্থ্যবান মুসলমানরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কুরবানি করেন এবং সেই পশুর মাংস আত্মীয়স্বজন, দরিদ্র-গরীব ও প্রতিবেশীদের মাঝে বণ্টন করে থাকেন।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে একটি বিষয় নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়েছেন কুরবানির মাংস বিক্রি করা জায়েজ (ইসলামসম্মত) কিনা?

ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে কুরবানির পশুর মাংস বিক্রি করার বিষয়ে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কুরবানি করল, সে যেন তার কুরবানির মাংস, চামড়া বা কোনো অংশ বিক্রি না করে।” (সহীহ মুসলিম)

কুরবানি একটি ইবাদত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তা সম্পাদন করা হয়। এ ইবাদতের মাংস দান, আত্মীয়স্বজন ও গরিবদের মাঝে বিতরণ করা হয়। তবে এই মাংস বিক্রি করা যেমন হারাম, তেমনি তা কেনাও হারাম। কারণ, হারাম জিনিস ক্রয়-বিক্রয় উভয়ই নিষিদ্ধ।

নবী করিম (সা.) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি কুরবানি করল, সে যেন কুরবানির কোনো কিছু বিক্রি না করে।” – (সহীহ মুসলিম)

কেন কেনা যাবে না?

১. ইবাদতের উপকরণ বানিজ্যিক পণ্যে পরিণত হয়: কুরবানির মাংস বিক্রির মাধ্যমে এর ইবাদতমূলক গুরুত্ব ক্ষুণ্ণ হয়।

২. নিয়ম ভঙ্গ হয়: শরীয়তের বিধান অনুযায়ী কুরবানির কোনো অংশ (মাংস, চামড়া, হাড়) বিক্রয়যোগ্য নয়।

৩. সন্দেহপূর্ণ উৎস: কেউ কুরবানির নামে জবাই করে তা বিক্রি করছে কি না, তা নিশ্চিত করা কঠিন। তাই কুরবানির সময় এ ধরনের মাংস কেনা থেকে বিরত থাকা উত্তম।

শরিয়তের নির্দেশনা

ইসলামী চিন্তাবিদ ও ফিকহবিদরা একমত যে, কুরবানির পশুর কোনো অংশ হোক তা মাংস, চামড়া, হাড় বা চর্বি—বিক্রি করা জায়েজ নয়। বরং এগুলো দান, আত্মীয়দের মধ্যে বিতরণ অথবা নিজে খাওয়ার জন্য সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এমনকি কুরবানির চামড়ার টাকা দিয়ে মসজিদে দান করাও উত্তম, তবে সেটিও বিক্রয়ের মাধ্যমে নয় বরং উৎসর্গ করাটাই উত্তম পথ।

তবে কী করা যাবে?

কুরবানির মাংস আত্মীয়, প্রতিবেশী, দরিদ্রদের মধ্যে দান করা যাবে।

কেউ যদি আপনাকে কুরবানির মাংস হাদিয়া বা উপহার হিসেবে দেয়, তবে তা গ্রহণ করা এবং খাওয়া বৈধ।

কিন্তু বাজার থেকে কুরবানির মাংস কেনা বা বিক্রি করা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

আলেমদের মতামত

বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলেমগণ বলেন, কুরবানির মাংস বিক্রি করা সরাসরি ইসলামী শরিয়তের লঙ্ঘন। মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন, খতিব, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, বলেন, “কুরবানি একটি ইবাদত। এর মধ্যে বানিজ্যিক উদ্দেশ্য থাকা ঠিক নয়। কুরবানির মাংস বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা ইসলামিক বিধান পরিপন্থী।”

সমকালীন বাস্তবতা

অনেক সময় দেখা যায়, কিছু অসাধু ব্যক্তি কুরবানির পশুর মাংস সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে দেন। কেউ কেউ আবার মাংস সংরক্ষণের কথা বলে তা বিক্রি করেন পরে। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এটি স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ এবং এমন কাজ ইবাদতের গুরুত্ব ও পবিত্রতাকে ক্ষুণ্ন করে।

আইন ও প্রশাসনিক নির্দেশনা

বাংলাদেশের কিছু এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনও এ বিষয়ে সতর্ক থাকে। ঈদের পর বাজারে হঠাৎ কমদামে মাংস বিক্রি হলে প্রশাসন তাৎক্ষণিক তদন্ত করে দেখে তা কুরবানির মাংস কিনা। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকেও এ বিষয়ে গণসচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা হয়ে থাকে।

কুরবানির উদ্দেশ্য হচ্ছে ত্যাগ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এই ইবাদতের মধ্যে কোনো বানিজ্য বা অর্থনৈতিক লাভের চিন্তা ইসলাম গ্রহণ করেনি। তাই মুসলিম সমাজের উচিত এই বিষয়ে সচেতন থাকা, এবং কুরবানির পশুর মাংসসহ কোনো অংশই বিক্রি না করা।

সতর্কবার্তা

কোনো অসাধু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কুরবানির মাংস বিক্রি করলে তাদের ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ কে অবহিত করার অনুরোধ রইল।

জনপ্রিয় টার্গেট

একদিনে রেকর্ড ২৪৯ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি, আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বাড়ছে

কুরবানির মাংস বিক্রি ও কেনা জায়েজ কিনা?

প্রকাশ: ০৬:১৫:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জুন ২০২৫

ঈদুল আযহার অন্যতম মূল অনুষঙ্গ হলো কুরবানি। সামর্থ্যবান মুসলমানরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কুরবানি করেন এবং সেই পশুর মাংস আত্মীয়স্বজন, দরিদ্র-গরীব ও প্রতিবেশীদের মাঝে বণ্টন করে থাকেন।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে একটি বিষয় নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়েছেন কুরবানির মাংস বিক্রি করা জায়েজ (ইসলামসম্মত) কিনা?

ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে কুরবানির পশুর মাংস বিক্রি করার বিষয়ে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কুরবানি করল, সে যেন তার কুরবানির মাংস, চামড়া বা কোনো অংশ বিক্রি না করে।” (সহীহ মুসলিম)

কুরবানি একটি ইবাদত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তা সম্পাদন করা হয়। এ ইবাদতের মাংস দান, আত্মীয়স্বজন ও গরিবদের মাঝে বিতরণ করা হয়। তবে এই মাংস বিক্রি করা যেমন হারাম, তেমনি তা কেনাও হারাম। কারণ, হারাম জিনিস ক্রয়-বিক্রয় উভয়ই নিষিদ্ধ।

নবী করিম (সা.) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি কুরবানি করল, সে যেন কুরবানির কোনো কিছু বিক্রি না করে।” – (সহীহ মুসলিম)

কেন কেনা যাবে না?

১. ইবাদতের উপকরণ বানিজ্যিক পণ্যে পরিণত হয়: কুরবানির মাংস বিক্রির মাধ্যমে এর ইবাদতমূলক গুরুত্ব ক্ষুণ্ণ হয়।

২. নিয়ম ভঙ্গ হয়: শরীয়তের বিধান অনুযায়ী কুরবানির কোনো অংশ (মাংস, চামড়া, হাড়) বিক্রয়যোগ্য নয়।

৩. সন্দেহপূর্ণ উৎস: কেউ কুরবানির নামে জবাই করে তা বিক্রি করছে কি না, তা নিশ্চিত করা কঠিন। তাই কুরবানির সময় এ ধরনের মাংস কেনা থেকে বিরত থাকা উত্তম।

শরিয়তের নির্দেশনা

ইসলামী চিন্তাবিদ ও ফিকহবিদরা একমত যে, কুরবানির পশুর কোনো অংশ হোক তা মাংস, চামড়া, হাড় বা চর্বি—বিক্রি করা জায়েজ নয়। বরং এগুলো দান, আত্মীয়দের মধ্যে বিতরণ অথবা নিজে খাওয়ার জন্য সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এমনকি কুরবানির চামড়ার টাকা দিয়ে মসজিদে দান করাও উত্তম, তবে সেটিও বিক্রয়ের মাধ্যমে নয় বরং উৎসর্গ করাটাই উত্তম পথ।

তবে কী করা যাবে?

কুরবানির মাংস আত্মীয়, প্রতিবেশী, দরিদ্রদের মধ্যে দান করা যাবে।

কেউ যদি আপনাকে কুরবানির মাংস হাদিয়া বা উপহার হিসেবে দেয়, তবে তা গ্রহণ করা এবং খাওয়া বৈধ।

কিন্তু বাজার থেকে কুরবানির মাংস কেনা বা বিক্রি করা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

আলেমদের মতামত

বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলেমগণ বলেন, কুরবানির মাংস বিক্রি করা সরাসরি ইসলামী শরিয়তের লঙ্ঘন। মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন, খতিব, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, বলেন, “কুরবানি একটি ইবাদত। এর মধ্যে বানিজ্যিক উদ্দেশ্য থাকা ঠিক নয়। কুরবানির মাংস বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা ইসলামিক বিধান পরিপন্থী।”

সমকালীন বাস্তবতা

অনেক সময় দেখা যায়, কিছু অসাধু ব্যক্তি কুরবানির পশুর মাংস সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে দেন। কেউ কেউ আবার মাংস সংরক্ষণের কথা বলে তা বিক্রি করেন পরে। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এটি স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ এবং এমন কাজ ইবাদতের গুরুত্ব ও পবিত্রতাকে ক্ষুণ্ন করে।

আইন ও প্রশাসনিক নির্দেশনা

বাংলাদেশের কিছু এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনও এ বিষয়ে সতর্ক থাকে। ঈদের পর বাজারে হঠাৎ কমদামে মাংস বিক্রি হলে প্রশাসন তাৎক্ষণিক তদন্ত করে দেখে তা কুরবানির মাংস কিনা। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকেও এ বিষয়ে গণসচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা হয়ে থাকে।

কুরবানির উদ্দেশ্য হচ্ছে ত্যাগ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এই ইবাদতের মধ্যে কোনো বানিজ্য বা অর্থনৈতিক লাভের চিন্তা ইসলাম গ্রহণ করেনি। তাই মুসলিম সমাজের উচিত এই বিষয়ে সচেতন থাকা, এবং কুরবানির পশুর মাংসসহ কোনো অংশই বিক্রি না করা।

সতর্কবার্তা

কোনো অসাধু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কুরবানির মাংস বিক্রি করলে তাদের ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ কে অবহিত করার অনুরোধ রইল।