গভীর রাতে ঢাকায় অবতরণ, স্বাস্থ্যজনিত দুর্বলতা ও রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই প্রত্যাবর্তন

লুঙ্গি পরে দেশে ফিরলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশ: ১০:০৩:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ জুন ২০২৫
  • ৫১ বার পঠিত হয়েছে

রবিবার (৮ জুন) দিবাগত রাত দেড়টায় থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইট টিজি-৩৩৯-এ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ঢাকায় ফিরেছেন।

বিমানবন্দরে হুইলচেয়ারে নামার সময় তিনি পরেছিলেন সাদা শার্ট ও লুঙ্গি- যা তার শারীরিক দুর্বলতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। তার সঙ্গে ছিলেন ছেলে রিয়াদ আহমেদ তুষার ও শ্যালক ডা. আ ন ম নৌশাদ খান।

হুইলচেয়ারে বসা অবস্থায়, লুঙ্গি পরিহিত হামিদকে ফ্লাইট থেকে নামানো হয়। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এসএম রাগীব সামাদ নিশ্চিত করেন, হামিদ কোনো প্রটোকল ছাড়াই সাধারণ যাত্রীর মতো ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেছেন ।

রাত ১:২৫-এ ফ্লাইট অবতরণের পর ১:৪৫-এ ইমিগ্রেশন কাউন্টারে যান তিনি। রাত পৌনে তিনটার দিকে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।

হামিদের ডান ফুসফুসে ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে সন্দেহজনক স্পট পাওয়া গেছে। তার ছেলে রিয়াদ আহমেদ ফেসবুতে উল্লেখ করেন, ৮২ বছর বয়সী হামিদের ওজন মাত্র ৫৪ কেজি। তিনি দুই মিনিট দাঁড়াতে বা দুই ঘণ্টা বসে থাকতে অক্ষম।

গত ৮ মে রাত তিনটায় তিনি থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইট টিজি-৩৪০-এ ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। সেখানে মাসব্যাপী চিকিৎসার পর ফিরেছেন।

গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলায় আসামি করা হয় হামিদকে। একই মামলায় অভিযুক্ত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও ওবায়দুল কাদের।

হত্যা মামলার আসামি হয়েও বিদেশ যাওয়ায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে এই ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়।

তার দেশত্যাগের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার ১০ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে।

৮ মে মধ্যরাতে হামিদ লুঙ্গি, গেঞ্জি ও মাস্ক পরে ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছান। গোপনীয়তার সঙ্গে তাকে ইমিগ্রেশনে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তিনি কূটনৈতিক লাল পাসপোর্ট ব্যবহার করেন।

বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, তাকে ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে সরাসরি গেট-৩৩-এ নিয়ে যাওয়া হয় এবং বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা স্কিপিং এড়ানো হয়-এ সুবিধা শুধু রাষ্ট্রপ্রধান ও বর্তমান রাষ্ট্রপতির জন্য সংরক্ষিত।

হামিদের প্রত্যাবর্তন একটি রাজনৈতিক অধ্যায়ের সমাপ্তি নয়, বরং নতুন প্রশ্নের সূচনা করেছে:

১. মামলার গতি: হত্যা মামলায় তার ভূমিকা ও আইনি প্রক্রিয়া কী হবে?

২. স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা: সরকার কি তার চিকিৎসায় বিশেষ সুবিধা দেবে?

৩. রাজনৈতিক প্রভাব: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে এই ফেরত আসার প্রভাব কী?

বিশ্লেষকদের মতে- “হামিদের লুঙ্গি-পরিহিত দুর্বল চিত্র শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি রাজনৈতিক সংকটেরও প্রতীক-যেখানে প্রোটোকল, আইন ও মানবিকতার দ্বন্দ্ব স্পষ্ট”

দেশত্যাগের ঘটনায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়-

১.কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরীকে প্রত্যাহার।

২. ইমিগ্রেশন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহসিনা আরিফ ও দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত।

শারীরিক ভঙ্গুরতা আর রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে আবদুল হামিদের ফিরে আসা বাংলাদেশের রাজনীতির এক জটিল অধ্যায়ের প্রতিচ্ছবি। তার লুঙ্গি-শার্ট এখন শুধু ব্যক্তিগত অসুস্থতারই নয়, একটি ব্যবস্থার দ্বন্দ্বেরও সাক্ষী।

জনপ্রিয় টার্গেট

একদিনে রেকর্ড ২৪৯ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি, আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বাড়ছে

গভীর রাতে ঢাকায় অবতরণ, স্বাস্থ্যজনিত দুর্বলতা ও রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই প্রত্যাবর্তন

লুঙ্গি পরে দেশে ফিরলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

প্রকাশ: ১০:০৩:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ জুন ২০২৫

রবিবার (৮ জুন) দিবাগত রাত দেড়টায় থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইট টিজি-৩৩৯-এ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ঢাকায় ফিরেছেন।

বিমানবন্দরে হুইলচেয়ারে নামার সময় তিনি পরেছিলেন সাদা শার্ট ও লুঙ্গি- যা তার শারীরিক দুর্বলতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। তার সঙ্গে ছিলেন ছেলে রিয়াদ আহমেদ তুষার ও শ্যালক ডা. আ ন ম নৌশাদ খান।

হুইলচেয়ারে বসা অবস্থায়, লুঙ্গি পরিহিত হামিদকে ফ্লাইট থেকে নামানো হয়। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এসএম রাগীব সামাদ নিশ্চিত করেন, হামিদ কোনো প্রটোকল ছাড়াই সাধারণ যাত্রীর মতো ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেছেন ।

রাত ১:২৫-এ ফ্লাইট অবতরণের পর ১:৪৫-এ ইমিগ্রেশন কাউন্টারে যান তিনি। রাত পৌনে তিনটার দিকে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।

হামিদের ডান ফুসফুসে ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে সন্দেহজনক স্পট পাওয়া গেছে। তার ছেলে রিয়াদ আহমেদ ফেসবুতে উল্লেখ করেন, ৮২ বছর বয়সী হামিদের ওজন মাত্র ৫৪ কেজি। তিনি দুই মিনিট দাঁড়াতে বা দুই ঘণ্টা বসে থাকতে অক্ষম।

গত ৮ মে রাত তিনটায় তিনি থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইট টিজি-৩৪০-এ ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। সেখানে মাসব্যাপী চিকিৎসার পর ফিরেছেন।

গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলায় আসামি করা হয় হামিদকে। একই মামলায় অভিযুক্ত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও ওবায়দুল কাদের।

হত্যা মামলার আসামি হয়েও বিদেশ যাওয়ায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে এই ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়।

তার দেশত্যাগের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার ১০ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে।

৮ মে মধ্যরাতে হামিদ লুঙ্গি, গেঞ্জি ও মাস্ক পরে ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছান। গোপনীয়তার সঙ্গে তাকে ইমিগ্রেশনে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তিনি কূটনৈতিক লাল পাসপোর্ট ব্যবহার করেন।

বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, তাকে ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে সরাসরি গেট-৩৩-এ নিয়ে যাওয়া হয় এবং বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা স্কিপিং এড়ানো হয়-এ সুবিধা শুধু রাষ্ট্রপ্রধান ও বর্তমান রাষ্ট্রপতির জন্য সংরক্ষিত।

হামিদের প্রত্যাবর্তন একটি রাজনৈতিক অধ্যায়ের সমাপ্তি নয়, বরং নতুন প্রশ্নের সূচনা করেছে:

১. মামলার গতি: হত্যা মামলায় তার ভূমিকা ও আইনি প্রক্রিয়া কী হবে?

২. স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা: সরকার কি তার চিকিৎসায় বিশেষ সুবিধা দেবে?

৩. রাজনৈতিক প্রভাব: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে এই ফেরত আসার প্রভাব কী?

বিশ্লেষকদের মতে- “হামিদের লুঙ্গি-পরিহিত দুর্বল চিত্র শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি রাজনৈতিক সংকটেরও প্রতীক-যেখানে প্রোটোকল, আইন ও মানবিকতার দ্বন্দ্ব স্পষ্ট”

দেশত্যাগের ঘটনায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়-

১.কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরীকে প্রত্যাহার।

২. ইমিগ্রেশন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহসিনা আরিফ ও দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত।

শারীরিক ভঙ্গুরতা আর রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে আবদুল হামিদের ফিরে আসা বাংলাদেশের রাজনীতির এক জটিল অধ্যায়ের প্রতিচ্ছবি। তার লুঙ্গি-শার্ট এখন শুধু ব্যক্তিগত অসুস্থতারই নয়, একটি ব্যবস্থার দ্বন্দ্বেরও সাক্ষী।