Site icon দৈনিক টার্গেট

প্রভাবশালীদের দখলদারিত্ব: পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের জিয়াউল

জিয়াউল ভূইয়া (জীবন)

জিয়াউল ভূইয়া (জীবন), নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার সাহাপুর এলাকায় নিজ পৈত্রিক ভূমিতে বসবাস ও দোকান নির্মাণের চেষ্টা করছিলেন।

কিন্তু তারই আত্মীয় জসিম উদ্দিন (দুলাল) ও সহযোগীরা গুন্ডাবাহিনী সহযোগে সশস্ত্র হামলা চালায়। বাড়ি ও দোকান ভাংচুর করে ৬ লক্ষ টাকা নগদ ও ৪ ভরি স্বর্ণ জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

জিয়াউল ও তার স্ত্রীকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়; জিয়াউলের ১ মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয় ।

নির্মাণাধীন দোকানে ১০ লক্ষ টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ব্যবসা বন্ধ রয়েছে।

ওয়ারিশ সনদ, জমির পর্চা, নামজারি দলিলসহ সকল আইনি দলিল থাকা সত্ত্বেও দখল বানচাল করা হচ্ছে।

আইনি পদ্ধতিতে বাধা

জিয়াউল বারবার থানা ও স্থানীয় প্রশাসনের শরণাপন্ন হলেও কার্যকর বিচার পাননি:

ফৌজদারি মামলা: (ফৌজদারি কার্যবিধি ধারা ১৪৪/১৪৫) দায়েরের জন্য ২ মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, কিন্তু হুমকির কারণে তা সম্ভব হয়নি ।

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন: ১৮৭৭-এর ধারা ৮ ও ৯ অনুযায়ী দখল উদ্ধারের মামলা করা গেলেও **৬ মাসের সময়সীমা পার হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে ।

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ আইন: ২০২১-এ জবরদখলের শাস্তি ১–৩ বছরের কারাদণ্ড ও ১–৩ লক্ষ টাকা জরিমানা উল্লেখ থাকলেও প্রয়োগ হয়নি ।

জিয়াউল ভূইয়া বলেন, ওয়ারিশ সনদ থাকার পরও আমি পৈত্রিক ভিটে মাটিতে প্রবেশ করতে পারছি না। প্রভাবশালীরা আমার রক্ত-ঘামে কেনা স্বর্ণ লুটেছে, আমার স্ত্রীকে পিটিয়েছে  আইন কি শুধু কাগজেই থাকবে?। আমার পরিবার আজ রাস্তায় বসবাস করছে। মহোদয়ের কাছে আবেদন, এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরেজমিনে তদন্ত করে দখলদারদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনি ব্যবস্থা নিন।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা

ইউপি চেয়ারম্যানের বক্তব্য, “লিখিত অভিযোগ পেলে সালিশের উদ্যোগ নেওয়া হবে”।

থানার ওসি মফিজ উদ্দিন জানিয়েছেন, “আদালতের নির্দেশ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু পুলিশের ভূমিকা সীমিত; জমি বিরোধে তাদের সরাসরি হস্তক্ষেপের এখতিয়ার নেই।

তদন্তে প্রাপ্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য

জিয়াউলের সরবরাহকৃত দলিল পরীক্ষা করে দেখা গেছে:

১. ওয়ারিশ সনদে ১২ জন ওয়ারিশের নাম উল্লেখ রয়েছে; প্রত্যেকে নিজ অংশ পেলেও জিয়াউলকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

২. জমির খতিয়ান (বোয়ালিয়া মৌজা ১২১ নং জেএল) অনুযায়ী ৪ একর ৮৬ শতক জমির বৈধ মালিক তিনি ।

৩. চিকিৎসা সার্টিফিকেট (ঢাকা মেডিক্যাল) প্রমাণ করে হামলায় তার মাথা, বাহু ও পিঠে গুরুতর আঘাত রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

ড. নাসরিন সুলতানা, ভূমি আইন বিশ্লেষক: “দলিল থাকলেই দখল নিশ্চিত হয় না। ফৌজদারি আদালতে ২ মাসের মধ্যে ধারা ১৪৫-এ মামলা করে জরুরি দখল ফেরত পাওয়া সম্ভব। কিন্তু ভুক্তভোগীরা আইনি জটিলতা ও প্রভাবশালীদের ভয়ে মামলা করতে পারেন না।”

অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম: “থানায় জিডি করে সঙ্গে সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে যেতে হবে। সময় পার হলে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারায় দেওয়ানি মামলা করুন এতে মালিকানা প্রমাণ লাগে না, শুধু দখলচ্যুতির প্রমাণই যথেষ্ট।”

সামাজিক প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে ৬০% মামলা ভূমি বিরোধ সংক্রান্ত; নারায়ণগঞ্জে প্রভাবশালীদের দখলদারিত্ব একটি কাঠামোগত সমস্যা:

১. ১৪.৫ লাখ ভূমি মামলা বিচারাধীন।

২. দরিদ্র মালিকরা প্রায়শই ঘুষের বোঝা ও মামলার দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে লড়াই ছেড়ে দেন।

৩. জোর যার জমি তার – এই সংস্কৃতির বিরুদ্ধে গ্রাম আদালত ও এডিআর (বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) কার্যকর করতে হবে।

Exit mobile version