আজকাল মাস্ক আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে, তাই না? করোনার ধাক্কা হয়তো অনেকটাই কেটে গেছে, কিন্তু মাস্কের কদর এক চুলও কমেনি। কেন জানেন? কারণ এটা শুধু একটা কাপড়ের টুকরো নয়, এটা আমাদের আর আমাদের প্রিয়জনদের সুরক্ষার একটা ঢাল।
চলুন, একটু সহজ করে বুঝি, কেন এই মাস্ক পরাটা এতো জরুরি।
১. রোগের জীবাণু ছড়ানো থামায়
যখন আমরা হাঁচি বা কাশি দেই, তখন ছোট ছোট অদৃশ্য কণা বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এই কণাগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে ভাইরাস আর ব্যাকটেরিয়া। মাস্ক পরলে এই কণাগুলো বাইরে ছড়াতে পারে না। ভাবুন তো, আপনার মাস্কটা একটা অদৃশ্য দেয়ালের মতো কাজ করছে, যা জীবাণুদের আপনার থেকে অন্য কারো কাছে যেতে দিচ্ছে না। ফ্লু, সর্দি-কাশি বা আরো অনেক শ্বাস-প্রশ্বাসের রোগ থেকে বাঁচতে এটা দারুণ কাজের। এমনকি, অনেক সময় আমরা অসুস্থ হলেও বুঝি না, তখনো মাস্ক পরে থাকলে অন্যদের বাঁচিয়ে দিচ্ছি!
২. নোংরা বাতাস থেকে বাঁচায়
শহরে তো আজকাল দমবন্ধ করা বাতাস! ধুলা, ধোঁয়া, গাড়ির কালো বিষ – এসব আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে ফুসফুসে ঢুকে যায়। এর ফলে হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিসের মতো অনেক অসুখ হতে পারে। মাস্কের মতো ভালো মাস্কগুলো এই ক্ষতিকর কণাগুলোকে আটকে দেয়, যেন বিশুদ্ধ বাতাসটাই আপনার ভেতরে যায়। অনেকটা যেন একটা অদৃশ্য ফিল্টার, যা আপনাকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাচ্ছে।
৩. অ্যালার্জির জ্বালা কমায়
যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তারা বোঝেন এই যন্ত্রণাটা। পরাগ, ধুলো, বা পশুপাখির লোম – এসব বাতাসে ঘুরতে থাকে আর অ্যালার্জির উপসর্গ শুরু করে দেয়। মাস্ক পরলে এই অ্যালার্জির কারণগুলো আপনার নাক-মুখে ঢুকতে পারে না, ফলে হাঁচি, কাশি বা চোখ চুলকানোর মতো সমস্যাগুলো কমে যায়।
৪. হাত থেকে মুখে জীবাণু আসা আটকায়
আমরা না জেনেই বারবার হাত দিয়ে মুখ স্পর্শ করি। ধরুন, কোনো নোংরা জায়গায় হাত দিলেন আর তারপর সেই হাতেই নাক বা মুখে ছুঁয়ে দিলেন – ব্যস, জীবাণু ঢুকে গেল! মাস্ক পরলে এই অভ্যাসটা কমে যায়, কারণ আপনার মুখ এমনিতেই ঢাকা থাকে। এটা একটা ছোট্ট বিষয় মনে হলেও এর গুরুত্ব অনেক।
৫. এটা আপনার দায়িত্ব!
মাস্ক পরাটা শুধু আপনার নিজের জন্য নয়, এটা সমাজের প্রতি আপনার একটা দায়িত্বও বটে। যখন আপনি ভিড়ের মধ্যে মাস্ক পরেন, তখন আপনি শুধু নিজেকে সুরক্ষিত রাখছেন না, আপনি আপনার পাশের মানুষটাকেও সুরক্ষিত রাখছেন। বিশেষ করে যারা একটু দুর্বল, যেমন বয়স্ক মানুষ বা ছোট বাচ্চারা, তাদের জন্য আপনার এই ছোট্ট চেষ্টাটা অনেক বড় কিছু।
কোন মাস্ক কখন পরবেন?
সার্জিক্যাল মাস্ক: সাধারণ ব্যবহারের জন্য ভালো। এটা হাঁচি-কাশি থেকে জীবাণু ছড়ানো আটকায়।
কাপড়ের মাস্ক: দু-তিন পরতের কাপড়ের মাস্ক প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য দারুণ। এগুলো ধুয়ে বারবার ব্যবহার করা যায়।
রেসপিরেটর: যদি আপনি হাসপাতালে যান বা খুব নোংরা পরিবেশে কাজ করেন, তাহলে এই মাস্কটা সবচেয়ে ভালো সুরক্ষা দেয়।
মাস্ক পরার সঠিক উপায়
মাস্ক পরার আগে আর পরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। মাস্কটা এমনভাবে পরুন যেন আপনার নাক আর মুখ পুরো ঢাকা থাকে। আর মাস্ক আর মুখের মাঝে যেন কোনো ফাঁকা জায়গা না থাকে। ভেজা বা নোংরা মাস্ক ব্যবহার করবেন না। একবার ব্যবহার করা মাস্ক ফেলে দিন, আর কাপড়ের মাস্ক নিয়মিত ধুয়ে পরিষ্কার করুন।
দেখুন, মাস্ক পরাটা হয়তো একটু অস্বস্তিকর হতে পারে, কিন্তু এর উপকারিতা অনেক বেশি। তাই আসুন, নিজেদের আর আমাদের চারপাশের সবার সুরক্ষার জন্য মাস্ক পরাটা অভ্যাস করে ফেলি। কী বলেন?