সমবায় নয়, আত্মনির্ভরতার একটি চলমান বিপ্লব—একইসাথে মালিক, ক্রেতা ও সমাজগঠক ৩০০ পরিবার

“জনতার ঐক্য”: ৩০০ পরিবারের অভিনব সমবায় উদ্যোগ

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশ: ১০:০২:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
  • ১১৮ বার পঠিত হয়েছে

ঢাকার মেরাজনগরে গঠিত হতে যাচ্ছে ব্যতিক্রমধর্মী এক সমবায় সংগঠন, যার নাম “জনতার ঐক্য”। স্থানীয় উদ্যোক্তা, কৃষক, পেশাজীবী ও গৃহিণীদের সম্মিলিত চেষ্টায় ৩০০ পরিবারের অংশগ্রহণে গঠিত এই সংগঠন শুরুতে ঢাকায় চালু করতে যাচ্ছে ৫০০ বর্গফুটের একটি গ্রোসারি দোকান।

প্রাথমিক মূলধন হিসেবে সংগৃহীত হবে ৩১.৩ লাখ টাকা, যা ৩১৩টি শেয়ারের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হবে প্রতি পরিবারকে একটি করে শেয়ারের মালিকানা দিয়ে। শেয়ারমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০,০০০ টাকা, যা এককালীন কিংবা কিস্তিতে প্রদান করা যাচ্ছে।

মালিক, ক্রেতা, অংশীদার সব একসাথে

সংগঠনের মূলমন্ত্রই বলে দেয় এটির দৃষ্টিভঙ্গি: আমার দোকান আমি ক্রেতা, লাভ নিবে যথা তথা”। অর্থাৎ, সদস্যরা এখানে একইসাথে মালিক, ক্রেতা এবং লভ্যাংশভোগী।

গঠন কাঠামো: স্বচ্ছতা ও অংশীদারিত্ব নেতৃত্ব: ৭-১০ সদস্যের নির্বাহী কমিটি (ইসি) দায়িত্বে থাকবে, যারা একজন বেতনভুক্ত ম্যানেজার নিয়োগ করবেন।

সিদ্ধান্ত গ্রহণ: নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সদস্যদের ভোট এবং দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত (ইসি) পরিচালিত করবে।

অর্থ ব্যবস্থাপনা: সব লেনদেন হবে ডিজিটালি ও ব্যাংকের মাধ্যমে। বার্ষিক নিরপেক্ষ অডিট বাধ্যতামূলক।

লাভ বণ্টন নীতি

১. ৮৫%: সদস্যদের মাঝে মূলধনের অনুপাতে।

২. ১০%: আপদকালীন রিজার্ভ ফান্ড।

৩. ৫%: সমাজকল্যাণ খাতে, যেমন দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও চিকিৎসা সহায়তা (সদস্যদের সম্মতিতে)।

উদাহরণস্বরূপ, যদি মাসিক লাভ হয় ৫ লাখ টাকা, তবে তার মধ্যে ৪.২৫ লাখ টাকা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বণ্টন হবে।

সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা

১. বাজারমূল্যের চেয়ে ১০–১৫% কমে পণ্য ক্রয়ের সুযোগ

২. বার্ষিক লভ্যাংশ

৩. সাধারণ সভায় ভোটাধিকার (১ সদস্য = ১ ভোট)

সদস্যদের দায়িত্ব ও শৃঙ্খলা

১. প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫,০০০ টাকার কেনাকাটা করতে হবে সংগঠনের দোকান থেকে

২. সময়মতো মূলধন প্রদান

৩. নীতিমালা মেনে চলা বাধ্যতামূলক

জিরো টলারেন্স নীতি অনুসারে দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো, অনুমতি ছাড়া সদস্যপদ প্রত্যাহার ইত্যাদি হলে সদস্যপদ বাতিল করা হবে।

পদত্যাগ ও নিষেধাজ্ঞা

সদস্যপদ ত্যাগের ক্ষেত্রে শেয়ারের বাজারমূল্য ফেরত দেওয়া হবে (এককালীন/কিস্তিতে), তবে পুনরায় সদস্যপদ গ্রহণের সুযোগ থাকবে না।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

১. ২০২৬ সালের মধ্যে অনলাইন হোম ডেলিভারি সেবা চালু

২. ঢাকায় বিভিন্ন শাখা সম্প্রসারণ

৩. স্থানীয় কৃষিপণ্য সরাসরি সংগ্রহ ও বিক্রয়

৪. রিয়েল এস্টেট প্রকল্প: সদস্যদের জন্য জমি/ফ্ল্যাট

৫. কমমূল্যে স্বাস্থ্যসেবা: ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও বিলুপ্তি নীতিমালা

১. ক্ষতির ক্ষেত্রে নির্বাহী কমিটির ৫% লভ্যাংশ স্থগিত থাকবে।

২. সংগঠন বিলুপ্তির ক্ষেত্রে সকল সদস্যের সম্মতি, সম্পদ বিক্রয় ও শেয়ার অনুপাতে অর্থ বণ্টনের মাধ্যমে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের কথায়:

“এটি শুধু দোকান নয়, আত্মনির্ভরশীলতার হাতিয়ার।”

অর্থনৈতিক দিক: স্থানীয় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি ও নগদ লেনদেন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।

সামাজিক দিক: ৩০০ পরিবারের মধ্যে পারস্পরিক সহায়তার সম্পর্ক গড়ে উঠবে, সমাজকল্যাণ তহবিলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।

চুক্তির কঠোর শর্তাবলি অনুযায়ী, সংগঠনের নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন আনতে হলে ১০০% সদস্যের লিখিত সম্মতি প্রয়োজন।

সংগঠনটি ইতিমধ্যে স্থানীয়, বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে একটি “সামষ্টিক উদ্যোগ” হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মডেল ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সমবায় আন্দোলনের জন্য একটি রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

সমবায় নয়, আত্মনির্ভরতার একটি চলমান বিপ্লব—একইসাথে মালিক, ক্রেতা ও সমাজগঠক ৩০০ পরিবার

“জনতার ঐক্য”: ৩০০ পরিবারের অভিনব সমবায় উদ্যোগ

প্রকাশ: ১০:০২:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

ঢাকার মেরাজনগরে গঠিত হতে যাচ্ছে ব্যতিক্রমধর্মী এক সমবায় সংগঠন, যার নাম “জনতার ঐক্য”। স্থানীয় উদ্যোক্তা, কৃষক, পেশাজীবী ও গৃহিণীদের সম্মিলিত চেষ্টায় ৩০০ পরিবারের অংশগ্রহণে গঠিত এই সংগঠন শুরুতে ঢাকায় চালু করতে যাচ্ছে ৫০০ বর্গফুটের একটি গ্রোসারি দোকান।

প্রাথমিক মূলধন হিসেবে সংগৃহীত হবে ৩১.৩ লাখ টাকা, যা ৩১৩টি শেয়ারের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হবে প্রতি পরিবারকে একটি করে শেয়ারের মালিকানা দিয়ে। শেয়ারমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০,০০০ টাকা, যা এককালীন কিংবা কিস্তিতে প্রদান করা যাচ্ছে।

মালিক, ক্রেতা, অংশীদার সব একসাথে

সংগঠনের মূলমন্ত্রই বলে দেয় এটির দৃষ্টিভঙ্গি: আমার দোকান আমি ক্রেতা, লাভ নিবে যথা তথা”। অর্থাৎ, সদস্যরা এখানে একইসাথে মালিক, ক্রেতা এবং লভ্যাংশভোগী।

গঠন কাঠামো: স্বচ্ছতা ও অংশীদারিত্ব নেতৃত্ব: ৭-১০ সদস্যের নির্বাহী কমিটি (ইসি) দায়িত্বে থাকবে, যারা একজন বেতনভুক্ত ম্যানেজার নিয়োগ করবেন।

সিদ্ধান্ত গ্রহণ: নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সদস্যদের ভোট এবং দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত (ইসি) পরিচালিত করবে।

অর্থ ব্যবস্থাপনা: সব লেনদেন হবে ডিজিটালি ও ব্যাংকের মাধ্যমে। বার্ষিক নিরপেক্ষ অডিট বাধ্যতামূলক।

লাভ বণ্টন নীতি

১. ৮৫%: সদস্যদের মাঝে মূলধনের অনুপাতে।

২. ১০%: আপদকালীন রিজার্ভ ফান্ড।

৩. ৫%: সমাজকল্যাণ খাতে, যেমন দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও চিকিৎসা সহায়তা (সদস্যদের সম্মতিতে)।

উদাহরণস্বরূপ, যদি মাসিক লাভ হয় ৫ লাখ টাকা, তবে তার মধ্যে ৪.২৫ লাখ টাকা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বণ্টন হবে।

সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা

১. বাজারমূল্যের চেয়ে ১০–১৫% কমে পণ্য ক্রয়ের সুযোগ

২. বার্ষিক লভ্যাংশ

৩. সাধারণ সভায় ভোটাধিকার (১ সদস্য = ১ ভোট)

সদস্যদের দায়িত্ব ও শৃঙ্খলা

১. প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫,০০০ টাকার কেনাকাটা করতে হবে সংগঠনের দোকান থেকে

২. সময়মতো মূলধন প্রদান

৩. নীতিমালা মেনে চলা বাধ্যতামূলক

জিরো টলারেন্স নীতি অনুসারে দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো, অনুমতি ছাড়া সদস্যপদ প্রত্যাহার ইত্যাদি হলে সদস্যপদ বাতিল করা হবে।

পদত্যাগ ও নিষেধাজ্ঞা

সদস্যপদ ত্যাগের ক্ষেত্রে শেয়ারের বাজারমূল্য ফেরত দেওয়া হবে (এককালীন/কিস্তিতে), তবে পুনরায় সদস্যপদ গ্রহণের সুযোগ থাকবে না।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

১. ২০২৬ সালের মধ্যে অনলাইন হোম ডেলিভারি সেবা চালু

২. ঢাকায় বিভিন্ন শাখা সম্প্রসারণ

৩. স্থানীয় কৃষিপণ্য সরাসরি সংগ্রহ ও বিক্রয়

৪. রিয়েল এস্টেট প্রকল্প: সদস্যদের জন্য জমি/ফ্ল্যাট

৫. কমমূল্যে স্বাস্থ্যসেবা: ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও বিলুপ্তি নীতিমালা

১. ক্ষতির ক্ষেত্রে নির্বাহী কমিটির ৫% লভ্যাংশ স্থগিত থাকবে।

২. সংগঠন বিলুপ্তির ক্ষেত্রে সকল সদস্যের সম্মতি, সম্পদ বিক্রয় ও শেয়ার অনুপাতে অর্থ বণ্টনের মাধ্যমে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের কথায়:

“এটি শুধু দোকান নয়, আত্মনির্ভরশীলতার হাতিয়ার।”

অর্থনৈতিক দিক: স্থানীয় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি ও নগদ লেনদেন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।

সামাজিক দিক: ৩০০ পরিবারের মধ্যে পারস্পরিক সহায়তার সম্পর্ক গড়ে উঠবে, সমাজকল্যাণ তহবিলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।

চুক্তির কঠোর শর্তাবলি অনুযায়ী, সংগঠনের নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন আনতে হলে ১০০% সদস্যের লিখিত সম্মতি প্রয়োজন।

সংগঠনটি ইতিমধ্যে স্থানীয়, বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে একটি “সামষ্টিক উদ্যোগ” হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মডেল ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সমবায় আন্দোলনের জন্য একটি রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।