দারিদ্র্য, সচেতনতার অভাব ও প্রশাসনের দুর্বলতায় চিংড়ি রেণু শিকারে জড়িয়ে পড়ছে নারী-শিশুসহ শত শত মানুষ

বাঁশখালী উপকূলে অবৈধ চিংড়ি রেণু আহরণে বিপর্যস্ত মৎস্যসম্পদ

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশ: ০৪:১১:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫
  • ৪৯ বার পঠিত হয়েছে

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া, খুদুকখালী, বড়ঘোনা, গন্ডামারা, বাহারছড়া, খানখানাবাদ ও পুকুরিয়া উপকূলজুড়ে চলছে অবাধ চিংড়ি রেণু আহরণ ও পাচার কার্যক্রম।

আইনগতভাবে রেণু পোনা আহরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ হলেও, প্রশাসনের নজরদারির অভাব এবং আর্থিক লাভের আশায় বহু নিম্নআয়ের মানুষ এখন এই অবৈধ কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতিদিন এসব এলাকায় কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে চিংড়ি রেণু নিয়ে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মুনাফার আশায় মশারি জালের মতো নিষিদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ করে স্থানীয় দরিদ্র মানুষদের দিয়ে পোনা আহরণ করাচ্ছেন। এতে শুধু চিংড়ি নয়, ধরা পড়ছে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির মাছের পোনাও, যা সামগ্রিক মৎস্যসম্পদের জন্য মারাত্মক হুমকি।

বিশেষ করে স্বামী পরিত্যক্ত, বিধবা নারী ও স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশুরাও চিংড়ি রেণু আহরণের কাজে যুক্ত হচ্ছে। প্রতিদিন একজন সংগ্রাহক ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করায় অনেকেই এই পেশার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

স্থানীয়দের মতে, বাঁশখালীতে দুটি প্রজাতির চিংড়ি পোনা পাওয়া যায় লবণাক্ত পানিতে বাগদা ও মিষ্টি পানিতে গলদা। ছনুয়া, সরল, গন্ডামারা, বাহারছড়া ও খানখানাবাদ এলাকায় বাগদা চিংড়ির রেণু পাওয়া যায়। অন্যদিকে, পুকুরিয়া ও সাধনপুরের শঙ্খ নদীতে পাওয়া যায় গলদা চিংড়ির রেণু।

গন্ডামারা এলাকার এক ব্যবসায়ী রুহুল কাদের বলেন, “আমরা স্থানীয়দের কাছ থেকে রেণু কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করি। এতে গরিব মানুষের রোজগারের সুযোগ হচ্ছে।”

অন্য ব্যবসায়ী ফজলুল কাদের বলেন, “বাঁশখালীতে কোনো হ্যাচারি না থাকায় সংগৃহীত অধিকাংশ রেণু পরিবহনের আগেই মারা যায়।”

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তৌসিব উদ্দিন বলেন, “চিংড়ি পোনা সংগ্রহ আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে যাতে মাছের অন্যান্য পোনা ধ্বংস না হয়, সেজন্য আমরা স্থানীয়দের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। সেইসঙ্গে সংগৃহীত রেণুর ন্যায্যমূল্য ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

এদিকে, পরিবেশবাদীরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এই অবৈধ চিংড়ি রেণু আহরণ দেশের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও মাছের প্রজনন ব্যবস্থাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ না নিলে এর প্রভাব পড়বে সমগ্র মৎস্য খাতে।

নিষ্ক্রিয় প্রশাসন ও দারিদ্র্যের সুযোগে গড়ে উঠা এই অবৈধ চক্র এখনই নিয়ন্ত্রণে না আনলে ভবিষ্যতে এর খেসারত দিতে হতে পারে গোটা উপকূলীয় অঞ্চলে।

দারিদ্র্য, সচেতনতার অভাব ও প্রশাসনের দুর্বলতায় চিংড়ি রেণু শিকারে জড়িয়ে পড়ছে নারী-শিশুসহ শত শত মানুষ

বাঁশখালী উপকূলে অবৈধ চিংড়ি রেণু আহরণে বিপর্যস্ত মৎস্যসম্পদ

প্রকাশ: ০৪:১১:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া, খুদুকখালী, বড়ঘোনা, গন্ডামারা, বাহারছড়া, খানখানাবাদ ও পুকুরিয়া উপকূলজুড়ে চলছে অবাধ চিংড়ি রেণু আহরণ ও পাচার কার্যক্রম।

আইনগতভাবে রেণু পোনা আহরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ হলেও, প্রশাসনের নজরদারির অভাব এবং আর্থিক লাভের আশায় বহু নিম্নআয়ের মানুষ এখন এই অবৈধ কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতিদিন এসব এলাকায় কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে চিংড়ি রেণু নিয়ে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মুনাফার আশায় মশারি জালের মতো নিষিদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ করে স্থানীয় দরিদ্র মানুষদের দিয়ে পোনা আহরণ করাচ্ছেন। এতে শুধু চিংড়ি নয়, ধরা পড়ছে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির মাছের পোনাও, যা সামগ্রিক মৎস্যসম্পদের জন্য মারাত্মক হুমকি।

বিশেষ করে স্বামী পরিত্যক্ত, বিধবা নারী ও স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশুরাও চিংড়ি রেণু আহরণের কাজে যুক্ত হচ্ছে। প্রতিদিন একজন সংগ্রাহক ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করায় অনেকেই এই পেশার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

স্থানীয়দের মতে, বাঁশখালীতে দুটি প্রজাতির চিংড়ি পোনা পাওয়া যায় লবণাক্ত পানিতে বাগদা ও মিষ্টি পানিতে গলদা। ছনুয়া, সরল, গন্ডামারা, বাহারছড়া ও খানখানাবাদ এলাকায় বাগদা চিংড়ির রেণু পাওয়া যায়। অন্যদিকে, পুকুরিয়া ও সাধনপুরের শঙ্খ নদীতে পাওয়া যায় গলদা চিংড়ির রেণু।

গন্ডামারা এলাকার এক ব্যবসায়ী রুহুল কাদের বলেন, “আমরা স্থানীয়দের কাছ থেকে রেণু কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করি। এতে গরিব মানুষের রোজগারের সুযোগ হচ্ছে।”

অন্য ব্যবসায়ী ফজলুল কাদের বলেন, “বাঁশখালীতে কোনো হ্যাচারি না থাকায় সংগৃহীত অধিকাংশ রেণু পরিবহনের আগেই মারা যায়।”

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তৌসিব উদ্দিন বলেন, “চিংড়ি পোনা সংগ্রহ আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে যাতে মাছের অন্যান্য পোনা ধ্বংস না হয়, সেজন্য আমরা স্থানীয়দের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। সেইসঙ্গে সংগৃহীত রেণুর ন্যায্যমূল্য ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

এদিকে, পরিবেশবাদীরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এই অবৈধ চিংড়ি রেণু আহরণ দেশের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও মাছের প্রজনন ব্যবস্থাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ না নিলে এর প্রভাব পড়বে সমগ্র মৎস্য খাতে।

নিষ্ক্রিয় প্রশাসন ও দারিদ্র্যের সুযোগে গড়ে উঠা এই অবৈধ চক্র এখনই নিয়ন্ত্রণে না আনলে ভবিষ্যতে এর খেসারত দিতে হতে পারে গোটা উপকূলীয় অঞ্চলে।