আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগে দলীয়করণ, ঘুষ ও প্রভাবের বিরুদ্ধে তদন্ত এখনও আলোর মুখ দেখেনি

মেধা নয়, টাকায় চাকরি আনিসুলের ‘নিয়োগ বাণিজ্য’

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশ: ১২:০০:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
  • ৭৭ বার পঠিত হয়েছে

আনিসুল হক

গত দেড়যুগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিচার বিভাগের নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণে ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। বিশেষ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের সময়কালে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণে আসে দলীয়করণ ও ঘুষ বাণিজ্যের করাল গ্রাসে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য ও নথিপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, এ সময়ের মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি রাজনৈতিক পরিচয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী অধস্তন আদালত এবং নিবন্ধন অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন জায়গায় ক্ষমতার অপব্যবহারে সক্রিয় ছিলেন।

দলীয় নিয়োগে নিয়ন্ত্রিত আদালত প্রশাসন

জানা গেছে, দলীয় পরিচয় এবং আঞ্চলিক কোটা ব্যবহার করে শত শত কর্মচারীকে নিচের আদালতে ও নিবন্ধন অধিদপ্তরে নিয়োগ দেওয়া হয়, যাদের অনেকেই আজও গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত। এদের অনেকেই ছাত্রলীগ বা যুবলীগের কর্মী কিংবা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠজন।

উদাহরণস্বরূপ, গাজীপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির শাহ মোঃ মামুন ২০১২ সালে সরাসরি প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের সুপারিশে নিয়োগ পান। ভোলার বাসিন্দা হয়েও নিজেকে ঢাকার বাসিন্দা দেখিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে পদে আসীন হন। পরে ফ্ল্যাট ও বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বদলি হলেও কিছুদিন পরই আবার গাজীপুরে ফিরে আসেন।

সিরাজগঞ্জ-ভোলা-খুলনাজুড়ে বিতর্কিত নিয়োগ

ভোলা, সিরাজগঞ্জ ও খুলনা জেলায় নজিরবিহীনভাবে দলীয় সুপারিশে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ২০২১ সালে ভোলা জেলা জজ আদালতে সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের হলেও আজও সেসব মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। একইভাবে খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আনিসুল হকের এলাকার ২২ জন কর্মচারী একদিনেই নিয়োগ পান। সিরাজগঞ্জেও দেখা যায় আইনমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ সুপারিশে ৩৪ জন কর্মচারী নিয়োগ পেয়েছেন।

দুর্নীতি, সম্পদ, ও রাজনৈতিক প্রভাব

নিম্ন আদালতে কর্মরত এসব লোকজনের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, বিচারপ্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সিলেট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে কর্মরত স্টাফরা বিচারিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

দুদক ও সুপ্রিম কোর্টের নীরবতা

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন, “সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ এসেছে। কর্মচারী নিয়োগে জনপ্রতি ১০-১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।” তবুও এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান তদন্ত বা বিচারিক পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

দ্রুত তদন্ত ও শুদ্ধি অভিযানের দাবি

জুলাই বিপ্লবের পর নয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও এ নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা রক্ষায় দ্রুত একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিশন গঠন করা জরুরি।

আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগে দলীয়করণ, ঘুষ ও প্রভাবের বিরুদ্ধে তদন্ত এখনও আলোর মুখ দেখেনি

মেধা নয়, টাকায় চাকরি আনিসুলের ‘নিয়োগ বাণিজ্য’

প্রকাশ: ১২:০০:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

গত দেড়যুগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিচার বিভাগের নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণে ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। বিশেষ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের সময়কালে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণে আসে দলীয়করণ ও ঘুষ বাণিজ্যের করাল গ্রাসে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য ও নথিপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, এ সময়ের মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি রাজনৈতিক পরিচয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী অধস্তন আদালত এবং নিবন্ধন অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন জায়গায় ক্ষমতার অপব্যবহারে সক্রিয় ছিলেন।

দলীয় নিয়োগে নিয়ন্ত্রিত আদালত প্রশাসন

জানা গেছে, দলীয় পরিচয় এবং আঞ্চলিক কোটা ব্যবহার করে শত শত কর্মচারীকে নিচের আদালতে ও নিবন্ধন অধিদপ্তরে নিয়োগ দেওয়া হয়, যাদের অনেকেই আজও গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত। এদের অনেকেই ছাত্রলীগ বা যুবলীগের কর্মী কিংবা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠজন।

উদাহরণস্বরূপ, গাজীপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির শাহ মোঃ মামুন ২০১২ সালে সরাসরি প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের সুপারিশে নিয়োগ পান। ভোলার বাসিন্দা হয়েও নিজেকে ঢাকার বাসিন্দা দেখিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে পদে আসীন হন। পরে ফ্ল্যাট ও বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বদলি হলেও কিছুদিন পরই আবার গাজীপুরে ফিরে আসেন।

সিরাজগঞ্জ-ভোলা-খুলনাজুড়ে বিতর্কিত নিয়োগ

ভোলা, সিরাজগঞ্জ ও খুলনা জেলায় নজিরবিহীনভাবে দলীয় সুপারিশে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ২০২১ সালে ভোলা জেলা জজ আদালতে সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের হলেও আজও সেসব মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। একইভাবে খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আনিসুল হকের এলাকার ২২ জন কর্মচারী একদিনেই নিয়োগ পান। সিরাজগঞ্জেও দেখা যায় আইনমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ সুপারিশে ৩৪ জন কর্মচারী নিয়োগ পেয়েছেন।

দুর্নীতি, সম্পদ, ও রাজনৈতিক প্রভাব

নিম্ন আদালতে কর্মরত এসব লোকজনের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, বিচারপ্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সিলেট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে কর্মরত স্টাফরা বিচারিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

দুদক ও সুপ্রিম কোর্টের নীরবতা

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন, “সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ এসেছে। কর্মচারী নিয়োগে জনপ্রতি ১০-১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।” তবুও এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান তদন্ত বা বিচারিক পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

দ্রুত তদন্ত ও শুদ্ধি অভিযানের দাবি

জুলাই বিপ্লবের পর নয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও এ নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা রক্ষায় দ্রুত একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিশন গঠন করা জরুরি।