সারা দেশে টানা ভারী বর্ষণ: স্বস্তি ও শঙ্কা পাশাপাশি

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশ: ১০:২০:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
  • ৫৯ বার পঠিত হয়েছে

বেশ কয়েক দিনের তীব্র তাপপ্রবাহের পর স্বস্তি নিয়ে এসেছে বৃষ্টি। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারা দেশেই ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হচ্ছে, যা ২৪ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

তবে এই বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভূমিধস ও জলাবদ্ধতার শঙ্কাও। পাশাপাশি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কোথাও কোথাও বন্যার আশঙ্কাও রয়েছে।

সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে টানা বর্ষণ

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকায় মৌসুমি বায়ু সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে আটটি বিভাগেই মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হচ্ছে।

আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা জানান, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারে ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে।

বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও জনদুর্ভোগ

গতকাল সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে-১১৮ মিলিমিটার। রাজধানী ঢাকায় রেকর্ড হয়েছে ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। রাজধানীর মিরপুর, পল্লবী, উত্তরা, পুরান ঢাকা, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অফিসফেরত কর্মজীবী মানুষ দুর্ভোগে পড়ে যানজটের কারণে।

সমুদ্রবন্দর ও নদীবন্দরগুলোতে সতর্কতা

উত্তর বঙ্গোপসাগরে বজ্রমেঘ ও বায়ুচাপের তারতম্যের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

যশোর, খুলনা, কক্সবাজারসহ ১০টি অঞ্চলের নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এসব এলাকায় ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

বন্যার পূর্বাভাস: নদ-নদীর পানি বাড়ছে

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বর্তমানে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চট্টগ্রামের মুহুরী, হালদা, গোমতী নদীগুলোর পানি আগামী ৭২ ঘণ্টায় সতর্কসীমা ছুঁতে পারে।

সিলেটের সারি-গোয়াইন, সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও নেত্রকোনার সোমেশ্বরী নদীর পানিও বাড়ছে এবং সতর্কসীমায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

সুরমা-কুশিয়ারা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদীগুলোর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।

রিমঝিম বৃষ্টিবলয়ের প্রভাব: দেশে দ্বিতীয় মৌসুমি প্রবাহ

বেসরকারি আবহাওয়া গবেষণা সংস্থা বিডব্লিউওটি জানিয়েছে, ‘রিমঝিম’ নামে একটি মৌসুমি বৃষ্টিবলয় বর্তমানে সারা দেশে সক্রিয় রয়েছে। এটি ১৬ জুন উপকূলীয় এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে এবং ২৮ জুন নাগাদ দেশ ছাড়তে পারে।

চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি থাকবে। রংপুর, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ বিভাগেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। খুলনা ও রাজশাহীতে তুলনামূলক কম প্রভাব পড়লেও বৃষ্টি হবে।

এই বৃষ্টিবলয়ের প্রভাবে দেশের শতভাগ এলাকায় কমবেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিচু এলাকায় বন্যা এবং উপকূলীয় অঞ্চলে দমকা হাওয়ার পাশাপাশি বজ্রপাতের আশঙ্কাও রয়েছে।

পরামর্শ ও সতর্কতা

আবহাওয়াবিদরা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

পাহাড়ি এলাকায় অবস্থানকারীদের সতর্ক থাকার এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা ও যানজট মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

এই মুহূর্তে দেশের আবহাওয়া একটি বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বৃষ্টি, অন্যদিকে তৈরি হয়েছে নতুন বিপদের আশঙ্কা। তাই আবহাওয়ার হালনাগাদ তথ্যের দিকে নজর রাখা ও যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া এখন সময়ের দাবি।

সারা দেশে টানা ভারী বর্ষণ: স্বস্তি ও শঙ্কা পাশাপাশি

প্রকাশ: ১০:২০:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

বেশ কয়েক দিনের তীব্র তাপপ্রবাহের পর স্বস্তি নিয়ে এসেছে বৃষ্টি। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারা দেশেই ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হচ্ছে, যা ২৪ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

তবে এই বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভূমিধস ও জলাবদ্ধতার শঙ্কাও। পাশাপাশি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কোথাও কোথাও বন্যার আশঙ্কাও রয়েছে।

সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে টানা বর্ষণ

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকায় মৌসুমি বায়ু সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে আটটি বিভাগেই মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হচ্ছে।

আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা জানান, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারে ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে।

বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও জনদুর্ভোগ

গতকাল সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে-১১৮ মিলিমিটার। রাজধানী ঢাকায় রেকর্ড হয়েছে ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। রাজধানীর মিরপুর, পল্লবী, উত্তরা, পুরান ঢাকা, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অফিসফেরত কর্মজীবী মানুষ দুর্ভোগে পড়ে যানজটের কারণে।

সমুদ্রবন্দর ও নদীবন্দরগুলোতে সতর্কতা

উত্তর বঙ্গোপসাগরে বজ্রমেঘ ও বায়ুচাপের তারতম্যের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

যশোর, খুলনা, কক্সবাজারসহ ১০টি অঞ্চলের নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এসব এলাকায় ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

বন্যার পূর্বাভাস: নদ-নদীর পানি বাড়ছে

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বর্তমানে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চট্টগ্রামের মুহুরী, হালদা, গোমতী নদীগুলোর পানি আগামী ৭২ ঘণ্টায় সতর্কসীমা ছুঁতে পারে।

সিলেটের সারি-গোয়াইন, সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও নেত্রকোনার সোমেশ্বরী নদীর পানিও বাড়ছে এবং সতর্কসীমায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

সুরমা-কুশিয়ারা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদীগুলোর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।

রিমঝিম বৃষ্টিবলয়ের প্রভাব: দেশে দ্বিতীয় মৌসুমি প্রবাহ

বেসরকারি আবহাওয়া গবেষণা সংস্থা বিডব্লিউওটি জানিয়েছে, ‘রিমঝিম’ নামে একটি মৌসুমি বৃষ্টিবলয় বর্তমানে সারা দেশে সক্রিয় রয়েছে। এটি ১৬ জুন উপকূলীয় এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে এবং ২৮ জুন নাগাদ দেশ ছাড়তে পারে।

চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি থাকবে। রংপুর, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ বিভাগেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। খুলনা ও রাজশাহীতে তুলনামূলক কম প্রভাব পড়লেও বৃষ্টি হবে।

এই বৃষ্টিবলয়ের প্রভাবে দেশের শতভাগ এলাকায় কমবেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিচু এলাকায় বন্যা এবং উপকূলীয় অঞ্চলে দমকা হাওয়ার পাশাপাশি বজ্রপাতের আশঙ্কাও রয়েছে।

পরামর্শ ও সতর্কতা

আবহাওয়াবিদরা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

পাহাড়ি এলাকায় অবস্থানকারীদের সতর্ক থাকার এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা ও যানজট মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

এই মুহূর্তে দেশের আবহাওয়া একটি বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বৃষ্টি, অন্যদিকে তৈরি হয়েছে নতুন বিপদের আশঙ্কা। তাই আবহাওয়ার হালনাগাদ তথ্যের দিকে নজর রাখা ও যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া এখন সময়ের দাবি।