নিপীড়নের বিরুদ্ধে একা লড়াইয়ে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন নীলা ইস্রাফিল, ন্যায়বিচারের আশায় হার মানেননি

আমি থামিনি, থামব না নীলা ইস্রাফিল

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশ: ০১:৪০:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
  • ৯২ বার পঠিত হয়েছে

নীলা ইস্রাফিল

রাজনৈতিক সংগঠন এনসিপি-তে (নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম) সক্রিয় থাকা নীলা ইস্রাফিল নিজের বিরুদ্ধে চলমান আলোচনা ও বিতর্কের প্রেক্ষিতে একটি বিস্তারিত চূড়ান্ত বিবৃতি দিয়েছেন।

এই বিবৃতিতে তিনি তুলে ধরেছেন, কীভাবে ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক নিপীড়ন এবং রাজনৈতিক নিঃসঙ্গতার মধ্যেও তিনি একের পর এক অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন এবং লড়াই করে যাচ্ছেন।

বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে নীতির লড়াইয়ে

নীলা বলেন, তিনি এমন এক শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন যেখানে লেক্সাসে চড়তেন, ২৬ জন কাজের লোক ছিল, বিলাসবহুল জীবনের কোনো অভাব ছিল না। কিন্তু যখন ক্ষমতাধর ব্যক্তি প্রয়াত উপদেষ্টা হাসান আরিফের কাছ থেকে ‘খারাপ প্রস্তাব’ পান, তখন সেই প্রস্তাব নৈতিক কারণে প্রত্যাখ্যান করে তিনি সমাজ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ান।

নীলা ইস্রাফিল

“আমি জানতাম, এত সম্মানিত, সুদর্শন ও ক্ষমতাধর একজন মানুষকে চ্যালেঞ্জ করলে সমাজ আমাকে ছুঁড়ে ফেলবে। তবুও প্রতিবাদ করেছি,” – বলেন তিনি।

এই প্রতিবাদের ফলস্বরূপ, তার নামে একের পর এক ১৯টি মামলা দায়ের করা হয়। কেউ তার হয়ে আদালতে দাঁড়াননি। তার গর্ভবতী অবস্থায় কারাবাস, সন্তানের কারাগারে জন্ম, এবং বিচার বিভাগের নিস্ক্রিয়তার অভিজ্ঞতা উঠে আসে বিবৃতিতে।

তুষারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও এনসিপিতে অবস্থান

নীতির প্রশ্নে আপসহীন এই নারী রাজনীতিক জানান, গণ-অভ্যুত্থানের সময় থেকে তিনি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম এনসিপির নেতা তুষারের সঙ্গে পরিচিত হন। এনসিপির জন্মের আগেই তাদের মধ্যে সাংগঠনিক আলোচনা হতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তুষারের আচরণ পাল্টে যায়।

“সে আমার ঠোঁট, কণ্ঠস্বর, ছবি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করতে শুরু করে। আমি বারবার তাকে বলেছি, আমাদের সম্পর্ক যেন ফর্মাল থাকে। কিন্তু সে থামেনি।”

নীলা বলেন, রমজানে একদিন তুষার তাকে এমন আপত্তিকর কথা বলেন, যা সহ্য করতে না পেরে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিলেন। তখন তুষার জানায়, ডিবি পুলিশের সঙ্গে তার কথা হয়েছে এবং নীলার সম্পর্কে তারা জানতে চেয়েছে।

এই বিবেচনায়, নিরাপত্তা হুমকির সম্ভাবনা ভেবে নীলা একটি ফোনালাপ রেকর্ড করেন, যার একটি অংশ পরবর্তীতে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

নীলা বলেন, “আমি সেই অডিও কয়েকজন মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিককে শেয়ার করি, প্রয়োজনে প্রকাশের অনুমতি দিয়েছিলাম।”

দলীয় গোপনীয়তা রক্ষার চেষ্টা ও পরে অবহেলা

নীলা অভিযোগ করেন, তিনি বিষয়টি শুরুতে গোপনীয়ভাবে এনসিপির দায়িত্বশীলদের জানানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার এই গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়নি। বরং তুষার সাংগঠনিক প্রভাব খাটিয়ে তাকে বিভিন্ন ইউনিট থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।

“সে বলে, ‘নীলার কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে’। আমাকে দলের বিভিন্ন সেল থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করে,” – বলেন তিনি।

অডিও ভাইরালের পর মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় একপাক্ষিক ট্রায়াল। তিনি জানান, তার নারী সহকর্মীরাও পাশে দাঁড়ায়নি।

“আমার অপরাধ, আমি পাশ্চাত্য পোশাক পরি, ‘তুমি’ করে কথা বলি, সহজভাবে মিশি। তাই আমাকে ভিকটিম নয়, অপরাধী বানিয়ে তোলা হয়।”

এনসিপিকে ভালোবাসা ও ভবিষ্যতের বার্তা

নীলা স্পষ্ট করে বলেন, “আমি এনসিপিকে ভালোবাসি। এই পার্টিতে যারা কাজ করে, তারা সত্যিই দেশকে ভালোবাসে। আমি চাই, এই দলে নারীরা যেন নিরাপদে থাকতে পারে।”

তিনি দাবি করেন, তিনি তুষারকে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাননি। বরং চান, সে শুদ্ধ হোক। এমনকী, দ্বিতীয় ভিডিও প্রকাশ করার বিষয়ে আত্মসমালোচনার সুরেও কথা বলেন।

“হয়তো ভুল করেছি, হয়তো করিনি। কিন্তু আমার কোনো গিল্টি ফিলিং নেই।”

এক সাহসী নারীর লড়াই

নিজের জীবনের সংগ্রাম সম্পর্কে তিনি বলেন,

“আমি জ্বলন্ত আগুনের ওপর দিয়ে হাঁটে আসা একজন নারী। কারাগারে সন্তান জন্ম, বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে একক লড়াই – সবই করেছি। আমার মতো সবাই নীলা ইস্রাফিল নয়।”

চূড়ান্তভাবে তিনি বলেন, “এই বিষয়ে এটাই আমার ফাইনাল বক্তব্য। আমি আর কোনো কথা বলব না। তদন্ত কমিটিকে যা বলার বলব। আমি এই ঘটনাকে পেছনে রেখে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।”

নিপীড়নের বিরুদ্ধে একা লড়াইয়ে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন নীলা ইস্রাফিল, ন্যায়বিচারের আশায় হার মানেননি

আমি থামিনি, থামব না নীলা ইস্রাফিল

প্রকাশ: ০১:৪০:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

রাজনৈতিক সংগঠন এনসিপি-তে (নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম) সক্রিয় থাকা নীলা ইস্রাফিল নিজের বিরুদ্ধে চলমান আলোচনা ও বিতর্কের প্রেক্ষিতে একটি বিস্তারিত চূড়ান্ত বিবৃতি দিয়েছেন।

এই বিবৃতিতে তিনি তুলে ধরেছেন, কীভাবে ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক নিপীড়ন এবং রাজনৈতিক নিঃসঙ্গতার মধ্যেও তিনি একের পর এক অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন এবং লড়াই করে যাচ্ছেন।

বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে নীতির লড়াইয়ে

নীলা বলেন, তিনি এমন এক শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন যেখানে লেক্সাসে চড়তেন, ২৬ জন কাজের লোক ছিল, বিলাসবহুল জীবনের কোনো অভাব ছিল না। কিন্তু যখন ক্ষমতাধর ব্যক্তি প্রয়াত উপদেষ্টা হাসান আরিফের কাছ থেকে ‘খারাপ প্রস্তাব’ পান, তখন সেই প্রস্তাব নৈতিক কারণে প্রত্যাখ্যান করে তিনি সমাজ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ান।

নীলা ইস্রাফিল

“আমি জানতাম, এত সম্মানিত, সুদর্শন ও ক্ষমতাধর একজন মানুষকে চ্যালেঞ্জ করলে সমাজ আমাকে ছুঁড়ে ফেলবে। তবুও প্রতিবাদ করেছি,” – বলেন তিনি।

এই প্রতিবাদের ফলস্বরূপ, তার নামে একের পর এক ১৯টি মামলা দায়ের করা হয়। কেউ তার হয়ে আদালতে দাঁড়াননি। তার গর্ভবতী অবস্থায় কারাবাস, সন্তানের কারাগারে জন্ম, এবং বিচার বিভাগের নিস্ক্রিয়তার অভিজ্ঞতা উঠে আসে বিবৃতিতে।

তুষারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও এনসিপিতে অবস্থান

নীতির প্রশ্নে আপসহীন এই নারী রাজনীতিক জানান, গণ-অভ্যুত্থানের সময় থেকে তিনি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম এনসিপির নেতা তুষারের সঙ্গে পরিচিত হন। এনসিপির জন্মের আগেই তাদের মধ্যে সাংগঠনিক আলোচনা হতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তুষারের আচরণ পাল্টে যায়।

“সে আমার ঠোঁট, কণ্ঠস্বর, ছবি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করতে শুরু করে। আমি বারবার তাকে বলেছি, আমাদের সম্পর্ক যেন ফর্মাল থাকে। কিন্তু সে থামেনি।”

নীলা বলেন, রমজানে একদিন তুষার তাকে এমন আপত্তিকর কথা বলেন, যা সহ্য করতে না পেরে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিলেন। তখন তুষার জানায়, ডিবি পুলিশের সঙ্গে তার কথা হয়েছে এবং নীলার সম্পর্কে তারা জানতে চেয়েছে।

এই বিবেচনায়, নিরাপত্তা হুমকির সম্ভাবনা ভেবে নীলা একটি ফোনালাপ রেকর্ড করেন, যার একটি অংশ পরবর্তীতে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

নীলা বলেন, “আমি সেই অডিও কয়েকজন মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিককে শেয়ার করি, প্রয়োজনে প্রকাশের অনুমতি দিয়েছিলাম।”

দলীয় গোপনীয়তা রক্ষার চেষ্টা ও পরে অবহেলা

নীলা অভিযোগ করেন, তিনি বিষয়টি শুরুতে গোপনীয়ভাবে এনসিপির দায়িত্বশীলদের জানানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার এই গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়নি। বরং তুষার সাংগঠনিক প্রভাব খাটিয়ে তাকে বিভিন্ন ইউনিট থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।

“সে বলে, ‘নীলার কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে’। আমাকে দলের বিভিন্ন সেল থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করে,” – বলেন তিনি।

অডিও ভাইরালের পর মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় একপাক্ষিক ট্রায়াল। তিনি জানান, তার নারী সহকর্মীরাও পাশে দাঁড়ায়নি।

“আমার অপরাধ, আমি পাশ্চাত্য পোশাক পরি, ‘তুমি’ করে কথা বলি, সহজভাবে মিশি। তাই আমাকে ভিকটিম নয়, অপরাধী বানিয়ে তোলা হয়।”

এনসিপিকে ভালোবাসা ও ভবিষ্যতের বার্তা

নীলা স্পষ্ট করে বলেন, “আমি এনসিপিকে ভালোবাসি। এই পার্টিতে যারা কাজ করে, তারা সত্যিই দেশকে ভালোবাসে। আমি চাই, এই দলে নারীরা যেন নিরাপদে থাকতে পারে।”

তিনি দাবি করেন, তিনি তুষারকে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাননি। বরং চান, সে শুদ্ধ হোক। এমনকী, দ্বিতীয় ভিডিও প্রকাশ করার বিষয়ে আত্মসমালোচনার সুরেও কথা বলেন।

“হয়তো ভুল করেছি, হয়তো করিনি। কিন্তু আমার কোনো গিল্টি ফিলিং নেই।”

এক সাহসী নারীর লড়াই

নিজের জীবনের সংগ্রাম সম্পর্কে তিনি বলেন,

“আমি জ্বলন্ত আগুনের ওপর দিয়ে হাঁটে আসা একজন নারী। কারাগারে সন্তান জন্ম, বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে একক লড়াই – সবই করেছি। আমার মতো সবাই নীলা ইস্রাফিল নয়।”

চূড়ান্তভাবে তিনি বলেন, “এই বিষয়ে এটাই আমার ফাইনাল বক্তব্য। আমি আর কোনো কথা বলব না। তদন্ত কমিটিকে যা বলার বলব। আমি এই ঘটনাকে পেছনে রেখে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।”