যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১০৫ মন্ত্রী-এমপি কারাগারে, পলাতক অনেকে বিদেশে

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশ: ১০:১২:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫
  • ১১৫ বার পঠিত হয়েছে

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে এক নজিরবিহীন রাজনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১১২ জন সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি), মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১০৫ জন এখন কারাগারে, আর ৭ জন জামিনে মুক্ত রয়েছেন।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন ২৮ জন সাবেক মন্ত্রী, ১০ জন প্রতিমন্ত্রী, ৩ জন উপমন্ত্রী, ৩ জন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং ডেপুটি স্পিকার ও চিফ হুইপসহ বহু ক্ষমতাধর সাবেক সংসদ সদস্য। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকায় রয়েছে হত্যা, গুম, দুর্নীতি, মানবতাবিরোধী অপরাধ, অর্থপাচারসহ নানা অপরাধ। অধিকাংশের বিরুদ্ধেই রয়েছে একাধিক মামলা; কারও কারও নামে অর্ধশতাধিক মামলাও রয়েছে।

আওয়ামী লীগের শেষ তিন মেয়াদের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক-এর বিরুদ্ধে ৫৫টিরও বেশি মামলা রয়েছে এবং তাঁকে ৫১ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও তাঁর বিরুদ্ধে বিচার চলছে।

সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, বিমানমন্ত্রী ফারুক খান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক সহ একাধিক আলোচিত মন্ত্রী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

বিদেশে পলাতক ৬৩ জন, শেখ হাসিনাও ভারতেই অবস্থান করছেন।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রায় ৬৩ জন সাবেক এমপি ও মন্ত্রী বর্তমানে বিদেশে পলাতক। কেউ ভারতে, কেউ যুক্তরাজ্য বা মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেও ভারতে অবস্থান করছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দারা। তাঁর বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে হত্যার নির্দেশনা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। তাঁকে ২৪ জুনের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বলা হয়েছে।

১০ মে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এবং এর সকল সহযোগী সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১২ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপনটি জারি হয়।

পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম জানিয়েছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। দেশে যারা আত্মগোপনে রয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বের করতে ব্যাপক অভিযান চলছে।

আদালত এ পর্যন্ত ৭ জন সাবেক এমপি ও মন্ত্রীকে জামিন দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, এম এ মান্নান, সাবের হোসেন চৌধুরী, রেজাউল করিম হীরা, নায়েব আলী জোয়ারদার, তাহজীব আলম সিদ্দিক এবং মেজর (অব.) সালাহউদ্দিন মিয়াজী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, “আইনের শাসন নিশ্চিত করতে পলাতকদের দেশে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা অপরিহার্য।

দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের পতনের পর এই ব্যাপক ধরপাকড় ও বিচারিক কার্যক্রম দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন মোড় সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে কতটা সহায়ক হবে, তা নির্ভর করছে আইনি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, দ্রুততা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর।

যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১০৫ মন্ত্রী-এমপি কারাগারে, পলাতক অনেকে বিদেশে

প্রকাশ: ১০:১২:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে এক নজিরবিহীন রাজনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১১২ জন সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি), মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১০৫ জন এখন কারাগারে, আর ৭ জন জামিনে মুক্ত রয়েছেন।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন ২৮ জন সাবেক মন্ত্রী, ১০ জন প্রতিমন্ত্রী, ৩ জন উপমন্ত্রী, ৩ জন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং ডেপুটি স্পিকার ও চিফ হুইপসহ বহু ক্ষমতাধর সাবেক সংসদ সদস্য। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকায় রয়েছে হত্যা, গুম, দুর্নীতি, মানবতাবিরোধী অপরাধ, অর্থপাচারসহ নানা অপরাধ। অধিকাংশের বিরুদ্ধেই রয়েছে একাধিক মামলা; কারও কারও নামে অর্ধশতাধিক মামলাও রয়েছে।

আওয়ামী লীগের শেষ তিন মেয়াদের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক-এর বিরুদ্ধে ৫৫টিরও বেশি মামলা রয়েছে এবং তাঁকে ৫১ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও তাঁর বিরুদ্ধে বিচার চলছে।

সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, বিমানমন্ত্রী ফারুক খান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক সহ একাধিক আলোচিত মন্ত্রী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

বিদেশে পলাতক ৬৩ জন, শেখ হাসিনাও ভারতেই অবস্থান করছেন।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রায় ৬৩ জন সাবেক এমপি ও মন্ত্রী বর্তমানে বিদেশে পলাতক। কেউ ভারতে, কেউ যুক্তরাজ্য বা মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেও ভারতে অবস্থান করছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দারা। তাঁর বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে হত্যার নির্দেশনা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। তাঁকে ২৪ জুনের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বলা হয়েছে।

১০ মে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এবং এর সকল সহযোগী সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১২ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপনটি জারি হয়।

পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম জানিয়েছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। দেশে যারা আত্মগোপনে রয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বের করতে ব্যাপক অভিযান চলছে।

আদালত এ পর্যন্ত ৭ জন সাবেক এমপি ও মন্ত্রীকে জামিন দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, এম এ মান্নান, সাবের হোসেন চৌধুরী, রেজাউল করিম হীরা, নায়েব আলী জোয়ারদার, তাহজীব আলম সিদ্দিক এবং মেজর (অব.) সালাহউদ্দিন মিয়াজী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, “আইনের শাসন নিশ্চিত করতে পলাতকদের দেশে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা অপরিহার্য।

দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের পতনের পর এই ব্যাপক ধরপাকড় ও বিচারিক কার্যক্রম দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন মোড় সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে কতটা সহায়ক হবে, তা নির্ভর করছে আইনি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, দ্রুততা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর।