বেনাপোল কাস্টমসে দ্বিতীয় দিনের মতো ‘কলমবিরতি’, স্থবিরতা আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশ: ০২:০৭:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
  • ৮৩ বার পঠিত হয়েছে

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোঃ আবদুর রহমান খান-এর অপসারণ এবং জারিকৃত সকল “প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক বদলি আদেশ” বাতিলের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ‘কলমবিরতি’ চলছে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই কর্মবিরতি পালন করেন কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে শুল্কায়ন কার্যক্রম। তবে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি এবং আন্তর্জাতিক যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।

দাবি আদায়ের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে সারাদেশব্যাপী এই আন্দোলন চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, ‘এটি একটি যৌক্তিক আন্দোলন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে আমরা অংশ নিচ্ছি।’

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের একটি সূত্র জানিয়েছে, কলমবিরতির সময় কাস্টমস হাউজে আমদানি-রপ্তানির কোনো শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়নি। অনলাইন সার্ভারও বন্ধ রাখা হয় এ সময়। ফলে নতুন কোনো ‘বিল অব এন্ট্রি’ দাখিল কিংবা আইজিএম ইস্যু করা যায়নি। তবে পূর্বে ইস্যুকৃত আইজিএমভিত্তিক পণ্য খালাসের প্রক্রিয়া দুপুরের পর পুনরায় শুরু হয়। ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা।

বন্দর ব্যবহারকারী মতিয়ার রহমান বলেন, “কলমবিরতির কারণে পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়। দুপুরে কর্মকর্তারা স্বাক্ষর দিলেও ব্যাংক বিকেল ৪টার পর টাকা নেয় না, ফলে পুরো কার্যক্রম আটকে যায়। এতে ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে।”

তবে কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, দুপুর ২টার পর থেকে অফিসিয়ালি সকল নথিপত্রে স্বাক্ষর দেওয়া হচ্ছে। কোনো কাগজপত্র ঝুলে থাকছে না। তাদের ভাষায়, “আমরা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছি। না করলে দলছুট হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।”

কেন্দ্রিয় দাবিসমূহ

২২ জুন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়

এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ

২৩ জুনের মধ্যে প্রতিহিংসামূলক বদলি আদেশ বাতিল

ভবিষ্যতে এ ধরণের কোনো বদলি না করা

রাজস্ব অধ্যাদেশ সংস্কার কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা

প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তিদের সেই কমিটি থেকে বাদ দেওয়া

পরিষদ জানিয়েছে, এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হলে ২৮ জুন থেকে কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে ‘লাগাতার শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু হবে।

পরবর্তী কর্মসূচি

২৫ ও ২৬ জুন: দুপুর ১২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কলম বিরতি, অবস্থান কর্মসূচি

২৭ জুন: শেষ সময়সীমা দাবি মানার জন্য

২৮ জুন থেকে: লাগাতার পূর্ণ শাটডাউন ঘোষণা

গত মে মাসে এনবিআরকে দুইটি পৃথক বিভাগে ভাগ করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নতুন অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এরপর থেকেই এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দাবিতে আন্দোলনে নামেন। সরকার আলোচনার আশ্বাস দিলেও এনবিআর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা।

সারসংক্ষেপে, বেনাপোল কাস্টমস হাউজে চলমান কলম বিরতি কেবল কর্মচারীদের কর্মসূচিই নয়, বরং তা একটি বৃহত্তর প্রশাসনিক সংস্কারের দাবির বহিঃপ্রকাশ। পরবর্তী কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়িত হলে বন্দর ও জাতীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাব আরও গভীর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বেনাপোল কাস্টমসে দ্বিতীয় দিনের মতো ‘কলমবিরতি’, স্থবিরতা আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে

প্রকাশ: ০২:০৭:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোঃ আবদুর রহমান খান-এর অপসারণ এবং জারিকৃত সকল “প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক বদলি আদেশ” বাতিলের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ‘কলমবিরতি’ চলছে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই কর্মবিরতি পালন করেন কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে শুল্কায়ন কার্যক্রম। তবে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি এবং আন্তর্জাতিক যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।

দাবি আদায়ের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে সারাদেশব্যাপী এই আন্দোলন চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, ‘এটি একটি যৌক্তিক আন্দোলন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে আমরা অংশ নিচ্ছি।’

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের একটি সূত্র জানিয়েছে, কলমবিরতির সময় কাস্টমস হাউজে আমদানি-রপ্তানির কোনো শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়নি। অনলাইন সার্ভারও বন্ধ রাখা হয় এ সময়। ফলে নতুন কোনো ‘বিল অব এন্ট্রি’ দাখিল কিংবা আইজিএম ইস্যু করা যায়নি। তবে পূর্বে ইস্যুকৃত আইজিএমভিত্তিক পণ্য খালাসের প্রক্রিয়া দুপুরের পর পুনরায় শুরু হয়। ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা।

বন্দর ব্যবহারকারী মতিয়ার রহমান বলেন, “কলমবিরতির কারণে পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়। দুপুরে কর্মকর্তারা স্বাক্ষর দিলেও ব্যাংক বিকেল ৪টার পর টাকা নেয় না, ফলে পুরো কার্যক্রম আটকে যায়। এতে ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে।”

তবে কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, দুপুর ২টার পর থেকে অফিসিয়ালি সকল নথিপত্রে স্বাক্ষর দেওয়া হচ্ছে। কোনো কাগজপত্র ঝুলে থাকছে না। তাদের ভাষায়, “আমরা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছি। না করলে দলছুট হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।”

কেন্দ্রিয় দাবিসমূহ

২২ জুন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়

এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ

২৩ জুনের মধ্যে প্রতিহিংসামূলক বদলি আদেশ বাতিল

ভবিষ্যতে এ ধরণের কোনো বদলি না করা

রাজস্ব অধ্যাদেশ সংস্কার কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা

প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তিদের সেই কমিটি থেকে বাদ দেওয়া

পরিষদ জানিয়েছে, এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হলে ২৮ জুন থেকে কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে ‘লাগাতার শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু হবে।

পরবর্তী কর্মসূচি

২৫ ও ২৬ জুন: দুপুর ১২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কলম বিরতি, অবস্থান কর্মসূচি

২৭ জুন: শেষ সময়সীমা দাবি মানার জন্য

২৮ জুন থেকে: লাগাতার পূর্ণ শাটডাউন ঘোষণা

গত মে মাসে এনবিআরকে দুইটি পৃথক বিভাগে ভাগ করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নতুন অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এরপর থেকেই এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দাবিতে আন্দোলনে নামেন। সরকার আলোচনার আশ্বাস দিলেও এনবিআর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা।

সারসংক্ষেপে, বেনাপোল কাস্টমস হাউজে চলমান কলম বিরতি কেবল কর্মচারীদের কর্মসূচিই নয়, বরং তা একটি বৃহত্তর প্রশাসনিক সংস্কারের দাবির বহিঃপ্রকাশ। পরবর্তী কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়িত হলে বন্দর ও জাতীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাব আরও গভীর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।