স্বাদ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের বাজারে আমের বর্তমান পরিস্থিতি

বাজারে আমের মৌসুমী ধুম

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশ: ১২:৩০:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
  • ৬৬ বার পঠিত হয়েছে

বাংলাদেশের বাজারে আমের মৌসুম চলছে পুরোদমেই। এ বছর চাষের অনুকূল আবহাওয়ায় উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে কিছুই সমস্যাও দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলের আম চাষিরা যেমন লাভের প্রত্যাশায় আশাবাদী, তেমনিভাবে মূল্যস্ফীতি, মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব এবং পরিবহন সমস্যায় ভুগছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, এবং দিনাজপুরে আম চাষিরা জানাচ্ছেন, চলতি মৌসুমে আমের গুণগত মান ভালো হয়েছে। তবে চাষের খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমছে। সার, কীটনাশক এবং শ্রমের খরচ বৃদ্ধি এ বছর চাষিদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

রাজশাহীর চাষি আব্দুর রহিম বলেন, এ বছর আমের ফলনশীল ভালো হয়েছে, কিন্তু পরিবহনের খরচ ও পাইকারি দামে মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি লাভ করছে। চাষিদের সঠিক মূল্য দিতে হবে।

ঢাকার কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, এবং মিরপুরের পাইকারি বাজারে আমের সরবরাহ প্রচুর। তবে দাম স্থিতিশীল রাখতে প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন।

হিমসাগর: ১০০-১৫০ টাকা প্রতি কেজি, ল্যাংড়া: ৮০-১২০ টাকা প্রতি কেজি, ফজলি ও আম্রপালি: ৮০-১০০ টাকা প্রতি কেজি।

তবে নিম্নমানের আমের দাম তুলনামূলক কম, যা নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য স্বস্তিদায়ক।

মূল্যস্ফীতির কারণে আমের মতো মৌসুমি ফলের চাহিদা কিছুটা কম। মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত ক্রেতারা সাশ্রয়ী মূল্যের অপেক্ষায় থাকছেন।

ঢাকার একজন ক্রেতা রোকেয়া বেগম জানান, আম কিনতে গেলে দাম শুনে কিছুটা হতাশ লাগে। দাম কম হলে আরো বেশি কেনা যেত।

বাংলাদেশের আমের আন্তর্জাতিক বাজারেও খুবই সুনাম রয়েছে। গত বছর ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আম রপ্তানি হয়েছিল। এ বছরও রপ্তানি চলছে, তবে গুণগত মান এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের ঘাটতির কারণে আরও সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও রপ্তানির পরিমাণ সীমিত।

২০২৫ সালের মধ্যে আম রপ্তানির পরিমাণ দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর জন্য আধুনিক প্যাকেজিং এবং প্রক্রিয়াজাত প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

পরিবহন চ্যালেঞ্জ

দূরবর্তী অঞ্চলের চাষিদের জন্য পরিবহন খরচ একটি বড় বাধা। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা না থাকলে আম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য: পাইকারি বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে চাষিরা সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না।

প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সংরক্ষণ ঘাটতি: আম সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত হিমাগারের অভাব রয়েছে। এতে মৌসুম শেষে আমের ঘাটতি তৈরি হয়।

উন্নয়নের জন্য প্রস্তাব

সরকারি সহযোগিতা: সরকারি সহযোগিতায় সরাসরি বিক্রয় কেন্দ্র এবং আম মেলার সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম: আম বিক্রির জন্য ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার চাষিদের জন্য সহজ বিকল্প হতে পারে।

রপ্তানি উন্নয়ন: রপ্তানি বাড়ানোর জন্য মান নিয়ন্ত্রণ, আধুনিক প্রক্রিয়াজাতকরণ, এবং আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য প্যাকেজিং সিস্টেম উন্নত করতে হবে।

বাংলাদেশের আম শিল্প চাষিদের আয়ের অন্যতম উৎস। চাষ থেকে বাজারজাতকরণ এবং রপ্তানি পর্যন্ত সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে এই শিল্প আরো লাভজনক হতে পারে।

আম শুধু দেশের মানুষের প্রিয় ফল নয়, এটি আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগও করে দিতে পারে।

স্বাদ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের বাজারে আমের বর্তমান পরিস্থিতি

বাজারে আমের মৌসুমী ধুম

প্রকাশ: ১২:৩০:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের বাজারে আমের মৌসুম চলছে পুরোদমেই। এ বছর চাষের অনুকূল আবহাওয়ায় উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে কিছুই সমস্যাও দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলের আম চাষিরা যেমন লাভের প্রত্যাশায় আশাবাদী, তেমনিভাবে মূল্যস্ফীতি, মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব এবং পরিবহন সমস্যায় ভুগছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, এবং দিনাজপুরে আম চাষিরা জানাচ্ছেন, চলতি মৌসুমে আমের গুণগত মান ভালো হয়েছে। তবে চাষের খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমছে। সার, কীটনাশক এবং শ্রমের খরচ বৃদ্ধি এ বছর চাষিদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

রাজশাহীর চাষি আব্দুর রহিম বলেন, এ বছর আমের ফলনশীল ভালো হয়েছে, কিন্তু পরিবহনের খরচ ও পাইকারি দামে মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি লাভ করছে। চাষিদের সঠিক মূল্য দিতে হবে।

ঢাকার কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, এবং মিরপুরের পাইকারি বাজারে আমের সরবরাহ প্রচুর। তবে দাম স্থিতিশীল রাখতে প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন।

হিমসাগর: ১০০-১৫০ টাকা প্রতি কেজি, ল্যাংড়া: ৮০-১২০ টাকা প্রতি কেজি, ফজলি ও আম্রপালি: ৮০-১০০ টাকা প্রতি কেজি।

তবে নিম্নমানের আমের দাম তুলনামূলক কম, যা নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য স্বস্তিদায়ক।

মূল্যস্ফীতির কারণে আমের মতো মৌসুমি ফলের চাহিদা কিছুটা কম। মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত ক্রেতারা সাশ্রয়ী মূল্যের অপেক্ষায় থাকছেন।

ঢাকার একজন ক্রেতা রোকেয়া বেগম জানান, আম কিনতে গেলে দাম শুনে কিছুটা হতাশ লাগে। দাম কম হলে আরো বেশি কেনা যেত।

বাংলাদেশের আমের আন্তর্জাতিক বাজারেও খুবই সুনাম রয়েছে। গত বছর ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আম রপ্তানি হয়েছিল। এ বছরও রপ্তানি চলছে, তবে গুণগত মান এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের ঘাটতির কারণে আরও সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও রপ্তানির পরিমাণ সীমিত।

২০২৫ সালের মধ্যে আম রপ্তানির পরিমাণ দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর জন্য আধুনিক প্যাকেজিং এবং প্রক্রিয়াজাত প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

পরিবহন চ্যালেঞ্জ

দূরবর্তী অঞ্চলের চাষিদের জন্য পরিবহন খরচ একটি বড় বাধা। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা না থাকলে আম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য: পাইকারি বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে চাষিরা সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না।

প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সংরক্ষণ ঘাটতি: আম সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত হিমাগারের অভাব রয়েছে। এতে মৌসুম শেষে আমের ঘাটতি তৈরি হয়।

উন্নয়নের জন্য প্রস্তাব

সরকারি সহযোগিতা: সরকারি সহযোগিতায় সরাসরি বিক্রয় কেন্দ্র এবং আম মেলার সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম: আম বিক্রির জন্য ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার চাষিদের জন্য সহজ বিকল্প হতে পারে।

রপ্তানি উন্নয়ন: রপ্তানি বাড়ানোর জন্য মান নিয়ন্ত্রণ, আধুনিক প্রক্রিয়াজাতকরণ, এবং আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য প্যাকেজিং সিস্টেম উন্নত করতে হবে।

বাংলাদেশের আম শিল্প চাষিদের আয়ের অন্যতম উৎস। চাষ থেকে বাজারজাতকরণ এবং রপ্তানি পর্যন্ত সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে এই শিল্প আরো লাভজনক হতে পারে।

আম শুধু দেশের মানুষের প্রিয় ফল নয়, এটি আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগও করে দিতে পারে।