সরকার ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা করলেও, এ নিয়ে বিরোধ এবং বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এই দিনটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চিহ্নিত করেছে সরকার। তবে এই সিদ্ধান্তে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এক ফেসবুক পোস্টে এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “৮ আগস্ট ২য় স্বাধীনতা শুরু হয়নি। বরং বিপ্লব বেহাতের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে।” সারজিস আলমের মতে, ৫ আগস্টের ঘটনাবলীই প্রকৃত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ এবং দ্বিতীয় স্বাধীনতার সূচনাকাল।
তিনি আরো বলেন, “৮ আগস্টের মাধ্যমে দ্বিতীয় স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করার পথ তৈরি হয়েছে। ৫ আগস্টের সংগ্রাম এবং অর্জনকে কৃতিত্বহীন করার এই প্রচেষ্টা মেনে নেওয়া যায় না।”
এর আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। তিনি ৫ আগস্টকেই ‘নতুন বাংলাদেশের প্রকৃত সূচনা’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
সরকারের ঘোষণায় ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনের দিনটিকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। একই সঙ্গে আরও দুটি দিবস নির্ধারণ করা হয়েছে:
১. ৫ আগস্ট: ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ (ক শ্রেণিভুক্ত দিবস)।
২. ১৬ জুলাই: ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ (খ শ্রেণিভুক্ত দিবস)।
সরকার জানিয়েছে, ৫ আগস্ট জাতীয় ছুটি থাকবে। অপর দুটি দিবস যথাযথভাবে পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এর তিন দিন পর, ৮ আগস্ট, নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই ঘটনাটি নতুন বাংলাদেশের সূচনার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
অন্যদিকে, ১৬ জুলাই, গণ-আন্দোলনের সময় রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। তাকে স্মরণ করেই ১৬ জুলাইকে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে।
নতুন বাংলাদেশ দিবস ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলগুলোর নেতারা অভিযোগ তুলেছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত ইতিহাসকে কুক্ষিগত করার একটি প্রচেষ্টা। তারা মনে করেন, ৫ আগস্টের গুরুত্ব কমিয়ে ৮ আগস্টকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে এখনও এই সমালোচনার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে তিনটি দিবস যথাযথভাবে পালনে গুরুত্ব দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণার মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সংযোজিত হলেও, এ নিয়ে বিতর্ক নতুন রাজনৈতিক উত্তেজনার সূচনা করেছে। দিনটির ঐতিহাসিক বৈধতা এবং এর গুরুত্ব নিয়ে মতবিরোধ ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।