দেশের আকাশে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ১৪৪৭ হিজরি সনের মহররম মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আজ শুক্রবার (২৭ জুন) থেকে পবিত্র মহররম মাসের আনুষ্ঠানিক গণনা শুরু হলো। এই পবিত্র মাস ইসলামিক বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং এটি মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
মহররম মাস ইসলামিক বর্ষপঞ্জির চারটি সম্মানিত মাসের (আশহুরে হুরুম) মধ্যে অন্যতম। এই মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এ মাসের বিশেষ মর্যাদা ও গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে।
মুসলিম বিশ্বে মহররম মাসের ১০ তারিখটি ‘আশুরা’ নামে পরিচিত। এটি মুসলিম ঐতিহ্যে একাধিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। হযরত নূহ (আ.) এর নৌকা ভূমিতে স্থির হওয়া, হযরত মুসা (আ.) এর নেতৃত্বে বনি ইসরাইলের মুক্তি এবং কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা – সবই আশুরার দিনে সংঘটিত বলে বিশ্বাস করা হয়।
মহররম মাসে বিশেষভাবে নফল রোজা রাখার গুরুত্ব ইসলামী হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “রমজানের পর সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ রোজা হলো মহররম মাসের রোজা।” আশুরার দিন রোজা রাখা সওয়াবের কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহররম মাসের শুরু থেকেই বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। বিশেষত শিয়া সম্প্রদায় এই মাসে কারবালার শহীদদের স্মরণে বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করে। আশুরার দিনে ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিল বের হয়।
এ বছর মহররম মাসের শুরু জুম্মার দিনে হওয়ায় দিনটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য দ্বিগুণ পুণ্যের বার্তা বয়ে এনেছে। শুক্রবার মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য সাপ্তাহিক জুম্মার নামাজ এবং বিশেষ দোয়ার দিন হিসেবে বিবেচিত। ফলে আজকের দিনটি মুসলমানদের কাছে আধ্যাত্মিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, দেশের আকাশে মহররম মাসের চাঁদ দেখা গেছে। কমিটি জানায়, দেশের কোথাও থেকে চাঁদ দেখা না গেলে শুক্রবার সন্ধ্যায় মহররম মাস শুরু হতো। তবে এবার চাঁদ দেখা যাওয়ায় মহররম মাসের গণনা একদিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে।
আগামী ১০ মহররম অর্থাৎ ৬ জুলাই (শনিবার) পবিত্র আশুরা পালিত হবে। দিনটি সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষিত এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও তাজিয়া মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
মহররম মাস মুসলিম জাতির জন্য শিক্ষা, সংযম এবং ত্যাগের বার্তা বহন করে। এই মাসে আমরা যদি ঐতিহাসিক শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের জীবনকে আলোকিত করার চেষ্টা করি, তাহলে তা আমাদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।