জাতির পথিকৃৎ অর্থনীতিবিদের জীবনে অভিষেকের এক নতুন অধ্যায়

শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিন আজ

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশ: ০৯:১৩:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
  • ৯১ বার পঠিত হয়েছে

মুহাম্মদ ইউনূস

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিন আজ।

১৯৪০ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে এক বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মদিন উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।

ড. মুহাম্মদ উনূসের পিতা দুলা মিঞা সওদাগর ছিলেন একজন জহুরি এবং মাতা সুফিয়া খাতুন ছিলেন গৃহিণী। তার নয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। মুহাম্মদ ইউনূস প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন গ্রামের মহাজন ফকিরের স্কুলে। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৫৪ সালে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ৩৯,০০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৬তম স্থান অধিকার করেন।

ছাত্রজীবনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বয়েজ স্কাউটসের সদস্য হিসেবে ১৫ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেন। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে রচিত হয় তার বই বালক পরিব্রাজকের দিনলিপি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক (১৯৬০) ও স্নাতকোত্তর (১৯৬১) শেষ করে ১৯৬৫ সালে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭১ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে একটি নাগরিক কমিটি তৈরি করেন। বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টারের পরিচালনায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ন্যাশভিল থেকে প্রকাশিত তাহার বাংলাদেশ নিউজলেটার পশ্চিমা বিশ্বে বাংলাদেশের সংগ্রামের বার্তা দেয়।

১৯৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জীবনবোধ বদলে দেয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থাকাকালীন জোবরা গ্রামে গবেষণা করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাত্র ২৭ টাকা ঋণের অভাবে ৪২ জন কারুশিল্পী মহাজনদের শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। এই ঘটনা তাকে গভীরভাবে ক্ষতবিক্ষত করে।

১৯৭৬ সালে তিনি জামিনদার হয়ে জনতা ব্যাংকের তখনকার শাখা ব্যবস্থাপককে রাজি করান গরিবদের মাঝে ঋণ দেওয়ার জন্য। তার বলিষ্ঠ ঘোষণা ছিল -ব্যাংকের টাকার জামিনদার হব আমি। ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে জেলও খাটতে রাজি আছি। এতে গরিব অসহায়দের প্রতি তার গভীর মমত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যায়।

এই পরীক্ষামূলক প্রকল্পই ১৯৮৩ সালে ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ -এ রূপ নেয়। বর্তমানে ব্যাংকটি ৫.৩ মিলিয়ন ঋণগ্রহীতার মধ্যে ৫.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ বিতরণ করেছেন । এর স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল।

“দারিদ্র্য দূরীকরণে ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান”-এর জন্য তিনি ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার (২০০৬) লাভ করেন। প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম (২০০৯) ও কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল (২০১০) অর্জনকারী বিশ্বের সাত ব্যক্তির মধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননার একজন। এছাড়াও রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার (১৯৮৪), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮৭), বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার (১৯৯৪) সহ বিশ্বের মোট ১১২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কারে পুরস্কৃত হন।

ক্ষুদ্রঋণের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সামাজিক ব্যবসা ধারণার প্রবর্তন করেন, যেখানে মুনাফা ভিত্তিক নয়, সমাজের সমস্যা সমাধানই মুখ্য উদ্দেশ্য। রংপুরে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ও গ্রামীণ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প এই মডেলের সফল প্রয়োগের জ্বলন্ত উদাহরণ। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

জন্মদিনের শুভেচ্ছাঃ জাতির কণ্ঠে অনুরণন

জন্মদিন উপলক্ষে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদকে দৈনিক টার্গেট এর পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন, আরও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। তার জন্মদিন বাংলাদেশের গর্বের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের স্মারক। যে ইতিহাস গঠিত হয়েছে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে এক অসম যুদ্ধের অবিচল সংগ্রামের মধ্য দিয়ে।

আমি ব্যর্থতাকে চূড়ান্ত মনে করিনা। ব্যর্থতার পরে আবার নতুন শক্তিতে অগ্রসর হতে হবে। ইচ্ছাশক্তি দিয়ে জয় করতে হবে ব্যর্থতাকে -ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

জাতির পথিকৃৎ অর্থনীতিবিদের জীবনে অভিষেকের এক নতুন অধ্যায়

শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিন আজ

প্রকাশ: ০৯:১৩:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিন আজ।

১৯৪০ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে এক বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মদিন উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।

ড. মুহাম্মদ উনূসের পিতা দুলা মিঞা সওদাগর ছিলেন একজন জহুরি এবং মাতা সুফিয়া খাতুন ছিলেন গৃহিণী। তার নয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। মুহাম্মদ ইউনূস প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন গ্রামের মহাজন ফকিরের স্কুলে। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৫৪ সালে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ৩৯,০০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৬তম স্থান অধিকার করেন।

ছাত্রজীবনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বয়েজ স্কাউটসের সদস্য হিসেবে ১৫ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেন। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে রচিত হয় তার বই বালক পরিব্রাজকের দিনলিপি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক (১৯৬০) ও স্নাতকোত্তর (১৯৬১) শেষ করে ১৯৬৫ সালে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭১ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে একটি নাগরিক কমিটি তৈরি করেন। বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টারের পরিচালনায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ন্যাশভিল থেকে প্রকাশিত তাহার বাংলাদেশ নিউজলেটার পশ্চিমা বিশ্বে বাংলাদেশের সংগ্রামের বার্তা দেয়।

১৯৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জীবনবোধ বদলে দেয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থাকাকালীন জোবরা গ্রামে গবেষণা করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাত্র ২৭ টাকা ঋণের অভাবে ৪২ জন কারুশিল্পী মহাজনদের শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। এই ঘটনা তাকে গভীরভাবে ক্ষতবিক্ষত করে।

১৯৭৬ সালে তিনি জামিনদার হয়ে জনতা ব্যাংকের তখনকার শাখা ব্যবস্থাপককে রাজি করান গরিবদের মাঝে ঋণ দেওয়ার জন্য। তার বলিষ্ঠ ঘোষণা ছিল -ব্যাংকের টাকার জামিনদার হব আমি। ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে জেলও খাটতে রাজি আছি। এতে গরিব অসহায়দের প্রতি তার গভীর মমত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যায়।

এই পরীক্ষামূলক প্রকল্পই ১৯৮৩ সালে ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ -এ রূপ নেয়। বর্তমানে ব্যাংকটি ৫.৩ মিলিয়ন ঋণগ্রহীতার মধ্যে ৫.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ বিতরণ করেছেন । এর স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল।

“দারিদ্র্য দূরীকরণে ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান”-এর জন্য তিনি ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার (২০০৬) লাভ করেন। প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম (২০০৯) ও কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল (২০১০) অর্জনকারী বিশ্বের সাত ব্যক্তির মধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননার একজন। এছাড়াও রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার (১৯৮৪), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮৭), বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার (১৯৯৪) সহ বিশ্বের মোট ১১২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কারে পুরস্কৃত হন।

ক্ষুদ্রঋণের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সামাজিক ব্যবসা ধারণার প্রবর্তন করেন, যেখানে মুনাফা ভিত্তিক নয়, সমাজের সমস্যা সমাধানই মুখ্য উদ্দেশ্য। রংপুরে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ও গ্রামীণ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প এই মডেলের সফল প্রয়োগের জ্বলন্ত উদাহরণ। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

জন্মদিনের শুভেচ্ছাঃ জাতির কণ্ঠে অনুরণন

জন্মদিন উপলক্ষে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদকে দৈনিক টার্গেট এর পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন, আরও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। তার জন্মদিন বাংলাদেশের গর্বের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের স্মারক। যে ইতিহাস গঠিত হয়েছে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে এক অসম যুদ্ধের অবিচল সংগ্রামের মধ্য দিয়ে।

আমি ব্যর্থতাকে চূড়ান্ত মনে করিনা। ব্যর্থতার পরে আবার নতুন শক্তিতে অগ্রসর হতে হবে। ইচ্ছাশক্তি দিয়ে জয় করতে হবে ব্যর্থতাকে -ড. মুহাম্মদ ইউনূস।