শোকস্তব্ধ পরিবারে শনিবার ভোরের বিদায়, সৌদিপ্রবাসী ভাইদের শেষ দেখা হলো না 

গভীর শোকে নলতার কাশিমপুরঃ আরিজুল সরদারের স্ত্রী হাসিনা পারভিন রুনার অকাল প্রয়াণ

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশ: ০৩:২৫:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
  • ২১৩ বার পঠিত হয়েছে

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নলতা ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামের বাসিন্দা আরিজুল ইসলাম সরদারের স্ত্রী হাসিনা পারভিন রুনা (৪৮) না ফেরার দেশে চলে গেছেন। 

শনিবার ২৯ জুন ভোর ৬টায় ননদ আনোয়ারা বেগমের হাতে হাত রেখেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার অকাল প্রয়াণে সরদার পরিবার এবং এলাকাবাসীর মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগে ভূগছিলেন তিনি। সামান্য তরল খাবার খেয়েই কোনো রকমে জীবন ধারণ করছিলেন । দীর্ঘদিন বিভিন্ন রোগে ভোগার পর মৃত্যুকালে হাসিনা পারভিন রুনার স্বামী (আরিজুল সরদার), পুত্র (সবুজ), পুত্রবধূ, কন্যা (সাথি), জামাই (শিমুল), নাতি (আয়ান), দুই ভাই (টুকু ও মনি), দেবর (জাহাঙ্গীর), ছয় ননদ এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে মুহামান নিরাবতা।

ভোর ৫টায় স্বাভাবিকভাবে কথা বললেও মাত্র এক ঘণ্টা পর হঠাৎ স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। রুনার ননদ আনোয়ারা বেগম বর্ণনা করেন, “ভোর ৬টায় তিনি হঠাৎ আমার হাতটি ধরলেন। কিছুক্ষণ পর দেখি তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। চিৎকার দিয়ে সবাইকে ডাকতে ছুটে গেলাম, কিন্তু ফিরে আসার আগেই তিনি চলে গেলেন”। পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে তিনি শুধু তরল খাবার গ্রহণ করে জীবনধারণ করছিলেন।

রুনার স্বামী আরিজুল ইসলাম সরদার অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ভোর ৫টার সময়ও সে আমার সাথে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলেছে। এভাবে আমার আগে চলে যাবে, তা আমি কখনও কল্পনাও করিনি।” এত অল্প বয়সে তিনি সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যাবেন, তা কেউ ভাবেনি। এক মুহূর্তেঐ চোখের সামনেই সব শেষ হয়ে গেল”

তার দুই ভাই জীবিকার তাগিদে বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন। বোনকে শেষ বিদায় জানাতে না পারার আক্ষেপ তাদের কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়ছিল।

তার ভাই টুকু বলেন, আমি প্রতিনিয়ত আমার একমাত্র বোনের সাথে কথা বলতাম এবং খোঁজখবর নিতাম। রুনা আমাদের আদরের বড় বোন ছিল। শেষ বিদায়ের সময় তার পাশে থাকতে পারলাম না। ওপারে ভালো থাকিস বোন। শেষ বিদায়ে পাশে থাকতে না পারার যন্ত্রণা সারাজীবন কাঁদাবে।

নতুন পুত্রবধূ শোকে আচ্ছন্ন। নাতি আয়ান এখনও বুঝতে পারছে না কেন নানি তাঁকে ছেড়ে গেলেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রুনা দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও লিভারজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। গত একবছর ধরে তিনি শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েন, যার কারণে কঠিন খাবার খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, “চিকিৎসকের পরামর্শে তরল খাবারেই ভরসা রাখতে হচ্ছিল তাঁকে”। গ্রামবাসীরা জানান, রুনা ছিলেন অত্যন্ত মিশুক ও সহৃদয় ব্যক্তিত্ব।

হাসিনা পারভিন রুনার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে শনিবার দুপুর জুম্মাবাদ আরিজুল ইসলাম সরদারের পুরাতন বাড়িতে। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। সৌদি থেকে ভাইদের পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায় ভিডিও কলে অংশ নেন তারা।

মায়ের মৃত্যুতে ছেলে সবুজ কান্না জড়িত ভাঙ্গা কন্ঠে বিলাপ করছে- মাগো, তুমি ছাড়া আমি যে অসহায়, তোমার কথা মনে পড়লে বুকের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে। তুমি সবসময় আমার শক্তি ছিলে, পথপ্রদর্শক ছিলে। আজ তুমি নেই, কে আমাকে আগলে রাখবে? আমি যে বড় একা হয়ে গেছি। তোমাকে খুব খুব ভালোবাসি মা।” হে আল্লাহ আমার মাকে জান্নাতের উচ্চ স্থান দান কর।

একমাত্র কন্যা সাথি মাকে হারিয়ে কান্না থামাতে পারছে না জীবন থেকে হারিয়ে গেছে মা- ও মা, তুমি কোথায় গেলে? আমাকে একা ফেলে! আর তো কেউ নেই আমার, তুমিই তো ছিলে আমার সব। ” আমি কী নিয়ে বাঁচব মা? তুমি ছাড়া আমার পৃথিবী যে অন্ধকার। ও মা, একবার ফিরে তাকাও, তোমার মেয়ের দিকে তাকাও। আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না -এভাবে বারবার বিলাপ করছে এবং মূর্ছা যাচ্ছে।

গ্রামবাসী নারিরা তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন- “রুনা ছিলেন আমাদের সমাজমাতা। তাঁর রান্নাঘর ছিল গরিব অসহায়ের অস্থায়ী পাঠশালা”।

মসজিদের ইমাম বলেন, “মৃত্যু আল্লাহর হুকুম, কিন্তু এত অকালপ্রয়াণ মনকে কাঁদায়। আমরা তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি”।

স্থানীয় গ্রামবাসী, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সমাজসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে সরদার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে। দৈনিক টার্গেট পরিবারের পক্ষ থেকে রুনার আত্মার শান্তি ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানানো হয়েছে।

শোকস্তব্ধ পরিবারে শনিবার ভোরের বিদায়, সৌদিপ্রবাসী ভাইদের শেষ দেখা হলো না 

গভীর শোকে নলতার কাশিমপুরঃ আরিজুল সরদারের স্ত্রী হাসিনা পারভিন রুনার অকাল প্রয়াণ

প্রকাশ: ০৩:২৫:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নলতা ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামের বাসিন্দা আরিজুল ইসলাম সরদারের স্ত্রী হাসিনা পারভিন রুনা (৪৮) না ফেরার দেশে চলে গেছেন। 

শনিবার ২৯ জুন ভোর ৬টায় ননদ আনোয়ারা বেগমের হাতে হাত রেখেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার অকাল প্রয়াণে সরদার পরিবার এবং এলাকাবাসীর মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগে ভূগছিলেন তিনি। সামান্য তরল খাবার খেয়েই কোনো রকমে জীবন ধারণ করছিলেন । দীর্ঘদিন বিভিন্ন রোগে ভোগার পর মৃত্যুকালে হাসিনা পারভিন রুনার স্বামী (আরিজুল সরদার), পুত্র (সবুজ), পুত্রবধূ, কন্যা (সাথি), জামাই (শিমুল), নাতি (আয়ান), দুই ভাই (টুকু ও মনি), দেবর (জাহাঙ্গীর), ছয় ননদ এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে মুহামান নিরাবতা।

ভোর ৫টায় স্বাভাবিকভাবে কথা বললেও মাত্র এক ঘণ্টা পর হঠাৎ স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। রুনার ননদ আনোয়ারা বেগম বর্ণনা করেন, “ভোর ৬টায় তিনি হঠাৎ আমার হাতটি ধরলেন। কিছুক্ষণ পর দেখি তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। চিৎকার দিয়ে সবাইকে ডাকতে ছুটে গেলাম, কিন্তু ফিরে আসার আগেই তিনি চলে গেলেন”। পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে তিনি শুধু তরল খাবার গ্রহণ করে জীবনধারণ করছিলেন।

রুনার স্বামী আরিজুল ইসলাম সরদার অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ভোর ৫টার সময়ও সে আমার সাথে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলেছে। এভাবে আমার আগে চলে যাবে, তা আমি কখনও কল্পনাও করিনি।” এত অল্প বয়সে তিনি সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যাবেন, তা কেউ ভাবেনি। এক মুহূর্তেঐ চোখের সামনেই সব শেষ হয়ে গেল”

তার দুই ভাই জীবিকার তাগিদে বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন। বোনকে শেষ বিদায় জানাতে না পারার আক্ষেপ তাদের কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়ছিল।

তার ভাই টুকু বলেন, আমি প্রতিনিয়ত আমার একমাত্র বোনের সাথে কথা বলতাম এবং খোঁজখবর নিতাম। রুনা আমাদের আদরের বড় বোন ছিল। শেষ বিদায়ের সময় তার পাশে থাকতে পারলাম না। ওপারে ভালো থাকিস বোন। শেষ বিদায়ে পাশে থাকতে না পারার যন্ত্রণা সারাজীবন কাঁদাবে।

নতুন পুত্রবধূ শোকে আচ্ছন্ন। নাতি আয়ান এখনও বুঝতে পারছে না কেন নানি তাঁকে ছেড়ে গেলেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রুনা দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও লিভারজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। গত একবছর ধরে তিনি শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েন, যার কারণে কঠিন খাবার খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, “চিকিৎসকের পরামর্শে তরল খাবারেই ভরসা রাখতে হচ্ছিল তাঁকে”। গ্রামবাসীরা জানান, রুনা ছিলেন অত্যন্ত মিশুক ও সহৃদয় ব্যক্তিত্ব।

হাসিনা পারভিন রুনার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে শনিবার দুপুর জুম্মাবাদ আরিজুল ইসলাম সরদারের পুরাতন বাড়িতে। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। সৌদি থেকে ভাইদের পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায় ভিডিও কলে অংশ নেন তারা।

মায়ের মৃত্যুতে ছেলে সবুজ কান্না জড়িত ভাঙ্গা কন্ঠে বিলাপ করছে- মাগো, তুমি ছাড়া আমি যে অসহায়, তোমার কথা মনে পড়লে বুকের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে। তুমি সবসময় আমার শক্তি ছিলে, পথপ্রদর্শক ছিলে। আজ তুমি নেই, কে আমাকে আগলে রাখবে? আমি যে বড় একা হয়ে গেছি। তোমাকে খুব খুব ভালোবাসি মা।” হে আল্লাহ আমার মাকে জান্নাতের উচ্চ স্থান দান কর।

একমাত্র কন্যা সাথি মাকে হারিয়ে কান্না থামাতে পারছে না জীবন থেকে হারিয়ে গেছে মা- ও মা, তুমি কোথায় গেলে? আমাকে একা ফেলে! আর তো কেউ নেই আমার, তুমিই তো ছিলে আমার সব। ” আমি কী নিয়ে বাঁচব মা? তুমি ছাড়া আমার পৃথিবী যে অন্ধকার। ও মা, একবার ফিরে তাকাও, তোমার মেয়ের দিকে তাকাও। আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না -এভাবে বারবার বিলাপ করছে এবং মূর্ছা যাচ্ছে।

গ্রামবাসী নারিরা তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন- “রুনা ছিলেন আমাদের সমাজমাতা। তাঁর রান্নাঘর ছিল গরিব অসহায়ের অস্থায়ী পাঠশালা”।

মসজিদের ইমাম বলেন, “মৃত্যু আল্লাহর হুকুম, কিন্তু এত অকালপ্রয়াণ মনকে কাঁদায়। আমরা তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি”।

স্থানীয় গ্রামবাসী, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সমাজসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে সরদার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে। দৈনিক টার্গেট পরিবারের পক্ষ থেকে রুনার আত্মার শান্তি ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানানো হয়েছে।