কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে কিছু স্থানীয় যুবক তাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেছে। এ নির্যাতনের ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শনিবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, ১০-১২ জন যুবক ওই নারীকে বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর করছে। ওই নারী বারবার সাহায্য চেয়েও বাঁচতে পারেননি।
ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে। ভুক্তভোগী নারী শুক্রবার মুরাদনগর থানায় অভিযুক্ত ফজর আলীর (৩৮) বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহার অনুযায়ী, অভিযুক্ত ফজর আলী রাতের আঁধারে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। ভুক্তভোগী না খুললে তিনি কৌশলে ঘরে প্রবেশ করে এবং জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করেন। তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন এবং ফজর আলীকে আটক করে মারধর করেন। সেই সময় ঘটনাটি ভিডিও করা হয়।
ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, অভিযুক্ত ফজর আলীর সঙ্গে তাদের পূর্বপরিচিতি ছিল। তিনি প্রায়ই টাকা ধার নেওয়ার সূত্রে তাদের বাড়িতে আসতেন। ভুক্তভোগী নারীর স্বামী প্রবাসে থাকেন এবং তাদের দুটি সন্তান রয়েছে।
মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, “ভুক্তভোগীর মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। অভিযুক্তকে ধরতে পুলিশের দুটি দল অভিযান চালাচ্ছে। আশা করছি, খুব দ্রুত তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।”
তিনি আরো বলেন, “বিবস্ত্র করে নির্যাতনের বিষয়ে আগে কেউ পুলিশকে জানায়নি। ভিডিও ছড়ানো একটি অপরাধ এবং আমরা ভিডিওটি ছড়ানোর উৎস শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।”
স্থানীয়দের একাংশ অভিযুক্ত ফজর আলীকে বিএনপি কর্মী হিসেবে দাবি করলেও বিএনপির নেতারা তা অস্বীকার করেছেন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের কিছু কর্মী দাবি করেছেন, অভিযুক্তের দলীয় সংশ্লিষ্টতা নেই। তার আওয়ামী লীগের মিছিলে অংশগ্রহণের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় জনগণ ধর্ষক এবং নির্যাতনকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
কুমিল্লার মুরাদনগরের এই ঘটনা কেবল ধর্ষণ নয়, বর্বরতার এক চরম উদাহরণ। সমাজে নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যেন দ্রুত নিশ্চিত করা হয়, সে দাবি জানাচ্ছেন সকলেই।