হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররম। এ মাসের দশম দিনকে বলা হয় আশুরা, যা ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ দিন। এই দিনে রোজা রাখা সুন্নত এবং বহু হাদিসে এর ফজিলত উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে শারীরিক অসুস্থতা, সফর, নারীদের মাসিক বা নাফাস অবস্থাসহ নানাবিধ কারণে অনেকেই আশুরার রোজা রাখতে পারেন না। এ অবস্থায় অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যান রোজা না রাখতে পারলে কী হবে? ইসলাম কি এর কোনো বিকল্প রেখেছে?
রোজা না রাখতে পারলে গুনাহ হয় না
আশুরার রোজা ফরজ নয় বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নফল বা সুন্নত রোজা। সুতরাং কেউ যদি শরিয়তসম্মত কোনো কারণে রোজা রাখতে না পারেন, যেমন অসুস্থতা, ভ্রমণ অথবা নারীদের স্বাভাবিক মাসিক অবস্থায়, তবে তার জন্য কোনো গুনাহ নেই।
হাদিস অনুযায়ী, “যদি কোনো ব্যক্তি কোনো ভালো কাজ করার ইচ্ছা করে কিন্তু করতে না পারে, আল্লাহ তা-ও তার নামে পূর্ণ সওয়াব লিখে দেন।” (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)
রোজার বিকল্প যেসব আমল করা যায়
আশুরার ফজিলত পেতে চাইলে রোজার পাশাপাশি নিচের আমলগুলো করা যেতে পারে, বিশেষ করে যারা রোজা রাখতে অক্ষম:
১. তওবা ও ইস্তিগফার
আশুরা গুনাহ মাফের একটি উত্তম সুযোগ। এই দিনে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চেয়ে বেশি বেশি ইস্তিগফার করা উচিত।
২. কুরআন তিলাওয়াত
এ দিন বেশি করে কুরআন পাঠ করুন। এটি আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম।
৩. নফল নামাজ
বিশেষ করে ‘সালাতুত তাসবীহ’ ও অন্যান্য নফল নামাজ আদায় করলে আশুরার ফজিলত অর্জন করা যায়।
৪. সদকা ও দান
আশুরার দিনে দান-সদকা করলে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। গরিব, এতিম, অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল।
৫. জিকির ও দোয়া
আল্লাহর নাম জিকির করা এবং বেশি করে ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্জালিমিন’ পাঠ করা যায়।
৬. পরিবারের সঙ্গে সদ্ব্যবহার
হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি আশুরার দিনে পরিবারের জন্য খাবার বা প্রয়োজনীয় জিনিসে খরচ করবে, আল্লাহ তার রিজিক বছরজুড়ে বাড়িয়ে দেবেন।
রোজা পরে রাখা যাবে কি
আশুরার রোজা নির্দিষ্ট তারিখে পালনযোগ্য। পরে তা কাযা করা যায় না। তবে রোজার নিয়ত থাকলেও কেউ শরিয়তসম্মত কারণে রাখতে না পারলে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়তের সওয়াব পাওয়ার আশ্বাস রয়েছে। পরবর্তীতে নফল রোজা যেমন সোম ও বৃহস্পতিবার অথবা আয়ামুল বীজ (আরবি ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ) রোজা রাখা যেতে পারে।
আশুরা আমাদের কাছে শুধু রোজার দিন নয়, এটি আত্মশুদ্ধির, তওবার ও নফল আমলের মহাসুযোগ। কেউ যদি এই বিশেষ দিনে রোজা রাখতে না পারেন, তাহলে বিকল্প ইবাদতের মাধ্যমে দিনটিকে অর্থবহ করে তোলা যায়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আশুরার ফজিলত যথাযথভাবে গ্রহণ করার তাওফিক দিন।