ইসলামী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম। এই মাসকে ইসলামে ‘আল্লাহর মাস’ বলা হয়, যার রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা। মহররমের ১০ তারিখ আশুরা একটি পবিত্র দিন, যা ইতিহাস, আত্মত্যাগ, কৃতজ্ঞতা ও রোজার ফজিলতে পরিপূর্ণ।
এই দিনটি মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, বিশেষ করে রোজা পালনের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার সুযোগ হিসেবে বিবেচিত।
আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন,
“আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজা অতীত এক বছরের গুনাহ মাফের কারণ হবে।”
– (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৬২)
এই হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, আশুরার রোজা এমন একটি ইবাদত, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দার এক বছর আগের ছোটখাটো গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। তবে এই ক্ষমা শুধু রোজা রাখলেই মিলবে না। এর সঙ্গে দরকার তওবা, আন্তরিকতা, খাঁটি নিয়ত এবং গুনাহ থেকে ফিরে আসার দৃঢ় সংকল্প।
আশুরা শুধু রোজার ফজিলতের জন্য বিখ্যাত নয়, বরং ইসলামের ইতিহাসে এই দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। হাদিস অনুযায়ী, আশুরার দিন ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনীকে আল্লাহ পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করেন। এই দিন হজরত মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে মুক্তি দেওয়া হয়। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হজরত মুসা (আ.) এই দিনে রোজা রেখেছিলেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করে আসেন, তখন দেখতে পান ইহুদিরাও এই দিনে রোজা পালন করে। তখন তিনি বলেন,
“আমরা মুসার (আ.) চেয়ে বেশি হকদার এই রোজা পালনে।”
– (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০০৪)
এরপর তিনি নিজেও রোজা পালন করেন এবং মুসলমানদের তা পালনের নির্দেশ দেন। তিনি আরও বলেন, শুধু ১০ মহররম রোজা না রেখে, ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ মহররম রোজা রাখা উত্তম যাতে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অনুকরণে মিল না ঘটে।
বর্তমান সময়ের মুসলিম সমাজ নানা গুনাহ, অবহেলা ও আত্মিক দূরত্বে ভুগছে। আশুরার রোজা সেই গুনাহ থেকে মুক্তির একটি মহাসুযোগ। শুধু রোজা রাখাই যথেষ্ট নয়, বরং এ দিনে নামাজে যত্নবান হওয়া, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া-ইস্তেগফার ও সদকার মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহর পথে ফিরিয়ে নেওয়াই প্রকৃত আত্মশুদ্ধি।
এই দিনটি স্মরণ করিয়ে দেয় ত্যাগ ও ধৈর্যের শিক্ষা। হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) আশুরার দিন কারবালার প্রান্তরে যে আত্মত্যাগ করেছিলেন, সেটিও মুসলিমদের জন্য চিরকালীন প্রেরণা।
আশুরার রোজা হলো ক্ষমা পাওয়ার এক বিরল সুযোগ। এটি শুধু অতীত গুনাহ মাফের দিন নয়, বরং নিজের ভুলগুলো সংশোধনের এবং সঠিক পথে ফিরে আসার আহ্বান। তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত, এই ফজিলতপূর্ণ দিনে রোজা রেখে, অতীত গুনাহের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাওয়া এবং আগামীর পথকে আলোকিত করার দৃঢ় সংকল্প নেওয়া।