আজ পবিত্র ১০ মহররম ১৪৪৭ হিজরি আশুরা। হিজরি সনের প্রথম মাস মহররমের এই দশম দিনটি ইসলামের ইতিহাসে বহুমাত্রিক তাৎপর্য বহন করে। একদিকে নবী ও রাসূলদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া মহান আল্লাহর কুদরতি ঘটনা, অন্যদিকে কারবালার শোকাবহ অধ্যায় সব মিলিয়ে আশুরা একটি ঐতিহাসিক ও ভাবগম্ভীর দিন।
ইসলামি বর্ণনা অনুযায়ী, আশুরা দিনে মহান আল্লাহ তাআলা মানবজাতির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা সংঘটিত করেন। হাদিস, তাফসির ও ইতিহাসবিদদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই দিনটিতে যেসব উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল, তা নিচে তুলে ধরা হলো
হজরত আদম (আ.)
এই দিনে আদম (আ.)-এর তাওবা কবুল করেন আল্লাহ। জান্নাত থেকে পৃথিবীতে আগমন ও পরে তার ক্ষমা প্রার্থনা কবুল হওয়ার মাধ্যমে আশুরা দিনটি তাওবার প্রতীক হয়ে ওঠে।
হজরত নূহ (আ.)
বহু বছর ধরে নৌকায় ভেসে বেড়ানোর পর আশুরার দিনেই হজরত নূহ (আ.)-এর নৌকা জুদি পাহাড়ে অবতরণ করে। এই দিনটি তার জন্য মুক্তির দিন হিসেবে বিবেচিত।
হজরত ইবরাহিম (আ.)
নমরুদের রাজত্বে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর আল্লাহ আশুরার দিনই আগুনকে ‘শীতল ও শান্তি’ বানিয়ে দেন, যার ফলে ইবরাহিম (আ.) অক্ষত থাকেন।
হজরত মুসা (আ.)
আশুরার দিন ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি পান মুসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীরা। লোহিত সাগর (লাল সাগর) আল্লাহর কুদরতে ভাগ হয়ে যায় এবং মুসা (আ.) সঙ্গীদের নিয়ে পাড়ি দেন। ফেরাউন ও তার বাহিনী সাগরে ডুবে মারা যায়।
হজরত ইউনুস (আ.)
এই দিনেই আল্লাহ মাছের পেট থেকে মুক্তি দেন হজরত ইউনুস (আ.)-কে। ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জালেমিন’ দোয়ার বরকতে তিনি পরিত্রাণ লাভ করেন।
হজরত আইউব (আ.)
বহুদিনের কষ্টকর রোগে ভোগার পর এই দিনেই আল্লাহ তাকে আরোগ্য দান করেন।
হজরত ঈসা (আ.)
ইহুদি ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করে ঈসা (আ.)-কে এই দিনেই আল্লাহ আকাশে উঠিয়ে নেন বলে বর্ণনা রয়েছে।
হজরত দাউদ (আ.) ও সুলায়মান (আ.)
এই দিনে হজরত দাউদ (আ.)-এর তাওবা কবুল হয় এবং হজরত সুলায়মান (আ.) বিশাল রাজত্ব ও জ্ঞান লাভ করেন।
৬১ হিজরির ১০ মহররম ইরাকের কারবালা প্রান্তরে ঘটে যায় ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা। ইয়াজিদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় নাতি ইমাম হুসাইন (রা.) এবং তাঁর পরিবার ও অনুসারীরা নির্মমভাবে শহীদ হন। তাঁরা সত্য ও ন্যায়ের পথে জীবন বিলিয়ে দেন, যা আশুরাকে করে তোলে আত্মত্যাগের চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত।
আশুরা আমাদের শিখায় সত্যের পক্ষে অবিচল থাকা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং ধৈর্য ও তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এই দিন শুধুই শোকের নয়, বরং ন্যায়ের পথ অনুসরণের অঙ্গীকারের দিন।