শাল-গজারি ঘেরা বনের ভেতর বিলাসবহুল ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা। পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীরের দাপটে সরকারি বন ধ্বংস করে গড়ে তোলা হয়েছে পাঁচতারকা মানের এই রিসোর্ট। অবসরে যাওয়ার পর সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক এই ক্ষমতাধর পুলিশ মহাপরিদর্শক ও তার পরিবারের সদস্যদের আদালত সম্পদ জব্দের আদেশ দিলে সামনে আসতে থাকে একের পর এক তার অপকর্ম।
অভিযোগ উঠেছে, গাজীপুরের বারুইপাড়া মৌজার নলজানি এলাকায় কৌশল করে বনের ভেতরে প্রথমে ব্যক্তিমালিকানা কিছু জমি ক্রয় করেন। পরবর্তীতে বেনজীর আহমেদের অদৃশ্য ক্ষমতায় আশপাশের ৬ একর ৭০ শতাংশ বনের জায়গা দখল করে ‘ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’। একইসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের জিম্মি করে দখল করে নেন প্রায় ৩ একর কৃষি জমি। জনশ্রুতি রয়েছে বিলাসবহুল রিসোর্টটির দখল বাণিজ্যে মাথা হিসেবে থেকেই ২৫ শতাংশ শেয়ার পেয়েছিলেন বেনজীর আহমেদ।
ভুক্তভোগী শফিউল্লাহ বলেন, রিসোর্টের মূল ফটকের সামনে বানানো পাহাড় ও ভেতরের জমি তাদের ছিল। মূল্য পরিশোধ না করেই জমিটি দখল করে নেয়া হয়েছে। সেসময় আশপাশে পুলিশি জিম্মি দশায় তারা কথাও বলতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, বেনজীর আহমেদের সাহসেই রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ এসব করেছে।
শফিউল্লাহর মতো স্থানীয় আরও বেশ কয়েকজন দাবি করেছেন তার জমি দখল করে রেখেছে রিসোর্টটি। শুধু দখল বাণিজ্য নয় ডিমার্গেসন, প্রশাসনের অনুমোদন কিংবা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই কী গহিন বনে গড়ে উঠল এমন রিসোর্ট। আবার স্থানীয় প্রশাসন থাকার পরেও কীভাবে দখল হয়ে গেলো বন সম্পদ কিংবা কৃষিজমি- তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা।
এতদিনেও দখলদারদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিতে পারেনি কেউ-নাকি দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন সবাই?- এর উত্তর জানতে প্রথমেই ভাওয়াল রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ে সময় সংবাদ। ভাওয়াল রিসোর্ট নিয়ে কথা বলতে যেন অদৃশ্য এক ভয়ের ছায়া ভাওয়াল রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুদ রানার মুখে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ নিয়ে কথা বলতে অপারগ হলেও কৌশলে জানালেন, উচ্ছেদের পরিকল্পনা করেই বদলি হয়েছিলো ঊর্ধ্বতন তার দুই কর্মকর্তা।
এদিকে অনেকের অভিযোগ, দখলদারদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে দিনের পর দিন নীরব থেকেছে এখানকার স্থানীয় বন বিভাগের কর্তারা। তবে দুদক ও আদালতের তৎপরতায় যেন নড়েচড়ে বসতে চাইছে জেলা প্রশাসন।
অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দ্রুতই বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারে নিজেদের শক্ত অবস্থানের কথা জানিয়েছেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আদালতে এতদিন স্টে অর্ডার থাকায় কিছু করা যায়নি। এখন আদালত রায় দিয়েছেন, যেকোনো সময় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সরকারি জমি উদ্ধার করা হবে।
পারটেক্স গ্রুপের প্রয়াত ব্যবসায়ী এম এ হাশেমের ছেলে শওকত আলী রাসেলের উদ্যোগে ১৯ একর জায়গা নিয়ে ভাওয়াল রিসোর্ট স্পার যাত্রা শুরু। পরবর্তীতে ক্ষমতাধর বেনজীর আহমেদের দাপটে বাড়তে থাকে জমির পরিমাণ।
এদিকে, অবৈধ দখলের অভিযোগ এনে গাজীপুরের ভাওয়াল রিসোর্টের মালিক শওকত রাসেলসহ চারজনের বিরুদ্ধে রোববার আদালতে মামলা ঠুকে দিয়েছেন ভুক্তভোগী এক মুক্তিযোদ্ধা।