বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের ইতিহাসে এক অপ্রত্যাশিত চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। সাবেক জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক জাহানারা আলম সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন যে তিনি দলের অভিজ্ঞতার সময় যৌন হেনস্থা ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যা পুরো নারী ক্রিকেট সম্প্রদায়কে চিন্তিত করেছে।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!জাহানারা আলমের দাবি, ২০২১ সাল থেকে জাতীয় দলের বিভিন্ন ক্যাম্প এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার প্রস্তুতির সময় কিছু দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও নির্বাচক‑ম্যানেজাররা তার প্রতি অনৈতিক আচরণ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, অনুর্ধ্ব‑প্রস্তাব, অপ্রয়োজনীয় শারীরিক সংস্পর্শ এবং অশ্লীল মন্তব্যের সম্মুখীন হয়েছেন। বিশেষ করে ২০২২ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ প্রস্তুতির সময়ে এমন ঘটনা ঘটেছে।
তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, “আমি শুধু খেলোয়াড় হিসেবেই নয়, একজন নারী হিসেবে নিরাপদ পরিবেশের অধিকার চাই। আমি বারবার বিষয়টি কর্মকর্তাদের জানালেও কোন স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”
বিসিবির পদক্ষেপ
ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কমিটি আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কমিটি সুনির্দিষ্টভাবে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করবে এবং অভিযোগের সত্যতা যাচাই করবে। বোর্ড জানিয়েছে, তদন্ত শেষে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে ভবিষ্যতে নারী ক্রিকেটের পরিবেশকে নিরাপদ ও পেশাদারভাবে পরিচালনা করা সহজ হবে।
খেলোয়াড় ও সমর্থক সমাজের প্রতিক্রিয়া
ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনসহ অন্যান্য ক্রীড়াসংস্থা জাহানারার পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা বলেছে, “খেলোয়াড়দের নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। এই অভিযোগকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না।”
নারী খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা, পেশাগত মর্যাদা এবং দলের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টি দেশের সকল ক্রীড়াপ্রেমীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিষয়টির গুরুত্ব
জাহানারা আলমের অভিযোগ কেবল একজন খেলোয়াড়ের নয়; এটি পুরো নারী ক্রিকেটের নৈতিক ও পেশাগত পরিবেশের প্রশ্ন তুলেছে। ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে, খেলোয়াড়দের মানসিক নিরাপত্তা, দলীয় সংস্কৃতি ও প্রশাসনিক দায়িত্ব যথাযথভাবে রক্ষার জন্য নতুন নীতি প্রণয়ন জরুরি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও দাবি
নিরপেক্ষ তদন্ত: তদন্ত কমিটি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করবে এবং কোনও বোর্ড কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রভাবিত করতে পারবে না।
গোপনীয়তা ও সুরক্ষা: অভিযোগকারী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে যাতে কেউ ভয়ভীতি বা চাপের মুখোমুখি না হয়।
প্রকাশ্য প্রতিবেদন: তদন্ত শেষে সংক্ষেপে হলেও প্রতিবেদন সাধারণ জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা উচিত।
নীতিগত সংস্কার: ভবিষ্যতে হেনস্থা বা অনৈতিক আচরণ রোধে আচরণবিধি ও হেল্পলাইন তৈরি করতে হবে।
পুনর্বাসন: ভুক্তভোগী খেলোয়াড়ের মানসিক সহায়তা ও ক্যারিয়ার পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
জাহানারার বক্তব্য
জাহানারা আলম জানিয়েছেন, “আমি চাই যেন আমার মতো অন্যান্য নারী খেলোয়াড় নিরাপদে খেলতে পারে। আমাদের যৌনহেনস্থা মুক্ত, স্বচ্ছ ও পেশাদার পরিবেশ প্রয়োজন।”
এই ঘটনা বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে। বোর্ডের দ্রুত, স্বচ্ছ ও কার্যকর পদক্ষেপ এখন প্রত্যাশিত।
দৈনিক টার্গেট 






















