দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছে জাতীয় জোট ও গণঅধিকার পার্টি (পিআরপি)। তারা বলেছেন, এই চুক্তিকে কেন্দ্র করে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা পাহাড়ে গেরিলা সংগঠন গড়ে তুলেছে, যারা নিয়মিতভাবে প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপর হামলা চালাচ্ছে।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!দেশের সীমান্তে ভারতের বিএসএফ ও সমুদ্রসীমায় আরাকান আর্মির আগ্রাসী কার্যক্রমও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ হুমকি বলে মন্তব্য করেছেন জোট নেতারা।
জাতীয় জোটের আয়োজনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ দাবি জানানো হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পার্টি (পিআরপি) ও জাতীয় জোটের চেয়ারম্যান সরদার মোঃ আবদুস সাত্তার। সভাপতিত্ব করেন তিনি নিজেই। সভায় জাতীয় জোটের কো-চেয়ারম্যান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সরদার মোঃ আবদুস সাত্তার তাঁর বক্তব্যে বলেন, “১৯৮৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি আজ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চুক্তিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে কিছু বিদেশি শক্তি এবং দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীরা পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি করছে। তারা পাহাড়কে স্বাধীন রাষ্ট্র কিংবা ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা ধর্ম, বর্ণ ও দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা রক্ষার স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে চাই। এই চুক্তি বাতিল করে সেখানে সেনা ক্যাম্প ও সেনা সদস্য বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি। শুধু জাতীয় জোট নয়, আমাদের সঙ্গে আছে ১৮ কোটি দেশপ্রেমিক বাঙালি। সরকারকে আমরা আশ্বস্ত করছি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনে আমরা যে কোনো সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।”
জাতীয় জোটের নেতৃবৃন্দ আরও অভিযোগ করেন, পার্বত্য এলাকায় গড়ে ওঠা ছোট ছোট সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো প্রায়ই প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা চালাচ্ছে। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে কিছু বিদেশি মহল, যারা বাংলাদেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে নষ্ট করতে চায়। বক্তারা বলেন, “যে চুক্তি দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিবর্তে রক্তপাত বাড়ায়, সে চুক্তি আর টিকিয়ে রাখা যায় না।”
সভায় বক্তারা সীমান্তে ভারতের বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা, সীমান্ত লঙ্ঘন ও সীমানা ঠেলে ঢুকে পড়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, “বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা করে বিএসএফ বারবার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। সরকার কেবল পতাকা বৈঠক করে দায়সারা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বলিষ্ঠ অবস্থান নিতে হবে।”
নেতারা আরো অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় ভারতের জেলেরা এবং নৌসেনারা অবৈধভাবে প্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যায়, কখনো জেলেদের অপহরণও করে। একইভাবে আরাকান আর্মি বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে জেলেদের ধরে নিয়ে যায়। তারা বলেন, “আমাদের সমুদ্র ও সীমান্তে বিদেশি আগ্রাসন কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।”
গণঅধিকার পার্টি ও জাতীয় জোটের নেতারা বলেন, “আমরা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে প্রমাণ করেছি-বাঙালি জাতি কখনো মাথা নত করে না। সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সরকার যে কোনো পদক্ষেপ নিক, আমরা সেই সিদ্ধান্তের পাশে থাকব। দেশের এক ইঞ্চি মাটিও আমরা ছাড় দেব না।”
সভায় জাতীয় জোটের কো-চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আকাশ, চেয়ারম্যান বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি ও জাতীয় জোটের মহাসচিব; মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মোঃ মোস্তফা কামাল বাদল, চেয়ারম্যান বাংলাদেশ পিপলস পার্টি ও সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান; এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
সবশেষে সরদার মোঃ আবদুস সাত্তার বলেন, “আজ আমরা সরকারকে অনুরোধ করছি-দেশের নিরাপত্তা ও জনগণের শান্তির স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাতিল করুন, পাহাড়ে সেনা মোতায়েন বাড়ান, এবং দেশের সীমান্ত সুরক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিন। জাতীয় জোটের ২১টি রাজনৈতিক দল নয়, পুরো জাতি সরকারের পাশে আছে। আমরা প্রস্তুত-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ব।”
সভা শেষে জাতীয় জোটের নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান- দেশের অখণ্ডতা ও স্বাধীনতা রক্ষার স্বার্থে টেকসই ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিন। তারা বলেন, “বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব কোনো ব্যক্তি, দল বা অঞ্চলের নয়- এটি আমাদের অস্তিত্বের প্রতীক। তাই এই মাতৃভূমিকে রক্ষা করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।