রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দীর্ঘদিনের পদোন্নতি বৈষম্য, নীতিমালা সংকট এবং প্রশাসনিক জটিলতার বিরুদ্ধে আজ সকাল থেকে রাজধানীর শাপলা চত্বরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ‘রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক পদোন্নতি বৈষম্য নিরসন ঐক্য পরিষদ’-এর উদ্যোগে আয়োজিত এই মানববন্ধনে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী-এই চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, বহু বছর ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে নিয়মিত পদোন্নতির কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ায় হাজারো কর্মকর্তা ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সুপারনিউমেরারী পদ সৃষ্টির মাধ্যমে পদোন্নতির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে, যা মাঠপর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দিয়েছে। এ পরিস্থিতি ব্যাংকিং খাতে দক্ষতা, কর্মদক্ষতা ও পেশাগত মনোবলকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে।
জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তারা মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতির ন্যায্য সমাধানের আহ্বান জানান। বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। দেশের উন্নয়ন, বাণিজ্য প্রসার এবং সরকারি অভ্যন্তরীণ লেনদেনের বড় অংশই এসব ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। অথচ এখানে কর্মরত কর্মকর্তারা বছরের পর বছর পদোন্নতির অপেক্ষায় থাকলেও কার্যকর নীতিমালা ও সিদ্ধান্তের অভাবে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
মানববন্ধনে আয়োজকরা পাঁচটি প্রধান দাবি তুলে ধরেন
১. রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শূন্যপদ ও নতুন অর্গানোগ্রামে সৃষ্ট পদগুলোতে পূর্বের সুপারনিউমেরারী পদসমূহ আত্মীকরণ করা যাবে না।
২. ২০০৭ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের জন্য ভূতাপেক্ষ বা ন্যূনতম একটি পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে।
৩. বাংলাদেশ ব্যাংকের ন্যায় স্বচ্ছ, ন্যায়সঙ্গত ও আধুনিক পদোন্নতি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৪. রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে জানুয়ারি ২০২৪ থেকে কার্যকরভাবে নিয়মিত পদোন্নতি চালু করতে হবে এবং পদোন্নতি বন্ধ থাকার সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে।
৫. অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অযাচিত ও আইন বহির্ভূত হস্তক্ষেপ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং এ সংক্রান্ত অযাচিত নির্দেশনামূলক স্মারক ও চিঠিসমূহ বাতিল করতে হবে।
আয়োজকরা বলেন, পদোন্নতি প্রক্রিয়া স্বচ্ছ না হওয়া এবং নিয়মিত না থাকায় ব্যাংকিং খাতে দক্ষতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। এতে শুধু কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ খাত হওয়ায় ব্যাংকগুলোর উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য কর্মকর্তাদের ন্যায্য প্রাপ্য নিশ্চিত করা জরুরি।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও জানান, তাদের বৈধ দাবিগুলো দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত হচ্ছে। যেসব কর্মকর্তা পেশাগতভাবে নিয়মিত উন্নতির আশায় বহু বছর ধরে নিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধের সাথে কাজ করে চলেছেন, তাদের প্রতি এই বৈষম্য অনৈতিক ও অযৌক্তিক।
শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ঘিরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থায় থাকলেও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। আয়োজকরা জানান, তাদের দাবি পূরণ না হলে ভবিষ্যতে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, ন্যায়সংগততা এবং যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন হলেই এ সংকট নিরসন সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আশা করছেন, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেবে।
দৈনিক টার্গেট 












