বাংলা চলচ্চিত্রে রঙিন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন যে তরুণ নায়ক, তাঁর নাম সালমান শাহ। মাত্র কয়েক বছরের অভিনয়জীবন; অথচ প্রভাব এমন যে মৃত্যুর প্রায় তিন দশক পরেও তিনি জনপ্রিয়তার কেন্দ্রবিন্দু।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!সিনেমা হল, টেলিভিশন বা সোশ্যাল মিডিয়া সবখানেই তিনি এখনো আলোচনার শীর্ষে।
নায়ক হওয়ার গল্প: বদলে দেন বাংলা সিনেমার ধারা
১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পর্দায় আসেন সালমান শাহ। তার আগে বাংলা সিনেমায় নায়কদের ধ্যান-ধারণা ছিল ভিন্ন; কিন্তু তিনি এনেছিলেন আধুনিক পোশাক, স্টাইলিশ হেয়ারকাট, স্বাভাবিক সংলাপ বলার ধরণ যা তরুণদের কাছে দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা পায়।
এই চলচ্চিত্রের পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “বাংলা চলচ্চিত্রে নতুন নায়ক মানে কেমন হতে পারে সালমান সেটা দেখিয়ে দিয়েছিল।”
কেন এত দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন?
- অভিনয়ে কৃত্রিমতা ছিল না; চরিত্র অনুযায়ী আবেগ প্রকাশ তাঁর স্বাভাবিক প্রতিভা।
- রোমান্টিক, পারিবারিক বা আবেগঘন যেকোনো চরিত্রে দর্শক সহজেই সংযোগ খুঁজে পেত।
- তাঁর বিভিন্ন পোশাক, সানগ্লাস, চুলের ধরন ৯০-এর দশকের তরুণদের ফ্যাশনের অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।
- সহশিল্পীরা বলতেন, তিনি ছিলেন শুটিং সেটের প্রাণবন্ত মানুষ; অহংকার ছিল না।
পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান পরে স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন, “আমি সিনেমা নির্মাণ করেছি, কিন্তু সালমান সেই সিনেমাকে দর্শকের হৃদয়ে স্থান করে দিয়েছে।”
হঠাৎ মৃত্যু, রহস্য ঘেরা বিদায়
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, ঢাকার ইস্কাটনের বাসায় রহস্যজনকভাবে মারা যান সালমান শাহ। মাত্র ২৫ বছর বয়সে।
প্রথমদিকে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে ঘোষণা করা হলেও তার পরিবার ও ভক্তরা বরাবরই অভিযোগ করে আসছেন এটি পরিকল্পিত হত্যা।
মামলা ঘুরে পৌঁছায় সিআইডি, পরে পিবিআই’র কাছে। তদন্ত সংস্থাগুলো আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত দিলেও মানুষের মনে সন্দেহ ও প্রশ্ন আজও রয়ে গেছে।
মৃত্যুর পরও কেন জনপ্রিয়তা কমেনি?
অসমাপ্ত স্বপ্নের নায়ক ক্যারিয়ারের শীর্ষে থাকা অবস্থায় বিদায় নেওয়ায় মানুষ ভাবতে শিখেছে আরো কত কিছু দিতে পারতেন তিনি।
নস্টালজিয়ায় বেঁচে থাকা স্মৃতি ৯০-এর দশকের প্রেম, গান ও আবেগের প্রতীক তিনি।
মৃত্যুর রহস্য সত্য উদ্ঘাটিত না হওয়ায় মানুষ এখনো তাঁকে নিয়ে আলোচনা থামায়নি।
পরিচালকদের শ্রদ্ধা সোহানুর রহমান সোহানসহ অনেক নির্মাতা মনে করতেন বাংলা চলচ্চিত্র সবচেয়ে বড় সম্পদ হারিয়েছে।
নতুন প্রজন্মের ভালোবাসা ইউটিউব, ফেসবুক, টিকটকের মাধ্যমে তাঁর গান, সংলাপ ও দৃশ্য নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে।
সালমান শাহ দেখিয়েছেন, একজন নায়ক শুধু চেহারার জোরে জনপ্রিয় হয় না; বরং অভিনয়, বাস্তবতা ও মানুষের আবেগ বোঝার ক্ষমতাই তাকে সত্যিকার সুপারস্টার বানায়।
তাঁর পর আসা অনেক নায়ক তাঁকে অনুসরণ করেছেন, কিন্তু দর্শক এখনো বলেন “সালমানের মতো কেউ আর হলো না।”
সালমান শাহ শুধু অভিনেতা নন তিনি ছিলেন একটি সময়ের আশা, স্বপ্ন ও প্রেমের প্রতিচ্ছবি। তাঁর মৃত্যু বন্ধ করেছে জীবন, কিন্তু থামাতে পারেনি ভালোবাসা। পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান যেভাবে বলেছিলেন, “বাংলা সিনেমার ইতিহাস লিখতে গেলে সালমান শাহকে বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
দৈনিক টার্গেট 
























